Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

বহুমাত্রিক সংকটে প্রবাসীরা


করোনা পরিস্থিতির কারণে ছুটিতে আসা দেড় থেকে দুই লাখ বাংলাদেশি একই দুশ্চিন্তায় আছেন৷ কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, আবার কবে তারা কাজে যোগ দিতে পারবেন বা আদৗ পারবেন কী না জানেন না৷

সাত লাখ টাকা খরচ করে বছর তিনেক আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন নরসিংদির যুবক রাসেল মিয়া৷ একই সময়ে টাঙ্গাইলের রাশেদুল হাসান গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে৷ দেশ ভিন্ন হলেও দুজনেই পরিবারের ভাগ্য ফেরানোর আশা করেছিলেন৷ আশার আলোও দেখছিলেন তারা৷ কিন্তু কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে মার্চে দুজনকেই দেশে চলে আসতে হয়৷

এখন তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত৷ কয়েকদিন আগে যখন তাদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, বারাবার বলছিলেন কীভাবে পরিবার নিয়ে সামনের দিনগুলোতে চলবেন সেই দুশ্চিন্তায় আছেন৷

শুধু রাসেল বা রাশেদুল নন, করোনা পরিস্থিতির কারণে ছুটিতে আসা দেড় থেকে দুই লাখ বাংলাদেশিএকই দুশ্চিন্তায় আছেন৷ কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, আবার কবে তারা কাজে যোগ দিতে পারবেন বা আদৗ পারবেন কী না জানেন না৷ নিয়োগকর্তারাও সুষ্পষ্ট করে কিছু বলছেন না৷

টাঙ্গাইলের জাহাঙ্গীর আলমের চিন্তাটা আবার ভিন্ন৷ সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য তিনি দুই লাখ টাকা খরচ করেছেন৷ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাসপোর্ট, ভিসা সব হাতে পান৷ মার্চে তার বিদেশে যাওয়ার কথা৷ কিন্তু করোনার কারণে আটকে গেছে তার ফ্লাইট৷ শুধু জাহাঙ্গীর নয়, অন্তত এক লাখ বাংলাদেশি একই সমস্যায় পড়েছেন৷

দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা যেখানে ফের বিদেশে যাওয়ার চিন্তায় মগ্ন, তখন বিদেশে থাকা প্রায় এক কোটি প্রবাসীবাংলাদেশি আছেন বহুমাত্রিক সংকটে৷ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আরিফ হোসেন যেমনটা বলছিলেন, কাজ নেই৷ কীভাবে নিজের খরচ চালাবেন, কীভাবেই বা পরিবারকেই টাকা পাঠাবেন সেই চিন্তায় আছেন৷ হঠাৎ আসা করোনা ভাইরাস আরিফের মতো কোটি বাংলাদেশি প্রবাসীর জীবনকে অনিশ্চতায় ফেলেছে৷ কারো বেতন নেই, কারো কমেছে৷ কেউ বা কাজ হারাচ্ছেন৷

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০ দেশের একটি৷ বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পযর্ন্ত এক কোটিরও বেশি বাংলদেশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছেন৷ তারা সবমিলিয়ে দুই লাখ ১৭ হাজার মিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন৷ তবে করোনার কারণে পুরো অভিবাসন খাতটা সংকটে পড়েছে৷

প্রবাসী বাংলাদেশিদের ৭৫ শতাংশই আছেন মধ্যপ্রাচ্যে৷ এককভাবে শুধু সৌদি আরবেই আছেন ২০ লাখ বাংলাদেশি৷ আরব আমিরাতে আছেন অন্তত ১৫ লাখ৷ এছাড়া কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইনের গড়ে তিন থেকে চার লাখ বাংলাদেশি আছেন৷ একে তো করোনা তার ওপর জ্বালানি তেলের দাম একেবারেই কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে নানা সংকট তৈরি হয়েছে৷ ওদিকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ায় থাকা বাংলাদেশিরাও একইভাবে নানা সংকটে৷

এই সংকটের কারণ কী? বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের যতো লোক বিদেশে যায়, তাদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলীর বা পেশাদার লোকের সংখ্যা মাত্র দুই শতাংশ৷ এরা মাস গেলে বেতন পান, ফলে খুব দুশ্চিন্তা করতে হয় না৷ বাকি যারা আছেন তারা অদক্ষ বা আধাদক্ষ৷ তাদের বেতন হয় কাজের ওপর৷ নির্মাণ শ্রমিক, পরিচ্ছন্ন কর্মী বা ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তারা৷ করোনা ও লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ থাকায় তারা আছেন সংকটে৷ এছাড়া যারা ছোটবড় ব্যবসাবাণিজ্য করতেন, তাদেরও ব্যবসা ক্ষতির মুখে৷ আর যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই তাদের সংকটের তো শেষ নেই৷

এই যেমন মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক লাখ বাংলাদেশি আছেন যারা তথাকথিত ফ্রি ভিসায় গিয়েছেন যাদের কাগজে কলমে মালিক থাকলেও বাস্তবে নেই৷ তাদের একজন জুয়েল আলম৷ লকডাউন শুরুর পর সৌদি আরব থেকে প্রবাসী হেল্পলাইনে ফোন করে বলছিলেন, তার মতো অনেকের এখন কোন কাজ নেই৷ সামনে তাদের কী হবে জানেন না৷ মালয়েশিয়া থেকে অনেকেই বলেছেন, করোনার সময় তারা সবসময় পুলিশ আতঙ্কে ছিলেন৷

এই যে প্রবাসীরা নানা সংকটে, তার ছাপ পড়েছে প্রবাসী আয়েও৷ বাংলাদেশের প্রবাসীআয় আহরণের শীর্ষ ১৫টি উৎস দেশ হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, ইতালি, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও জর্ডান৷ বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি বছরে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় ২২ শতাংশ কমে যাবে৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারিতে ১৬৩ কোটি ডলার ও ফেব্রুয়ারিতে ১৪৫ কোটি ডলার আসে৷ তবে করোনার কারণে ব্যাপকভাবে লকডাউন শুরু হওয়ায় মার্চে সেটি কমে হয় ১২৮ কোটি ডলার, যা আগের বছরের মার্চের চেয়ে ১২ শতাংশ কম৷ আর এপ্রিলে প্রবাসীরা ১০৯ কোটি ডলার পাঠান যা যে কোন সময়ের চেয়ে কম৷

অবশ্য ঈদের কারণে মে মাসে প্রবাসী আয় কিছুটা বাড়ে৷ মে মাসে প্রবাসী আয় আসে ১৫০ কোটি ডলার৷ তবে জুন মাসেই ১৮৩ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় এসেছে যা কোন মাসে সর্বোচ্চ৷ হঠাৎ করে এই প্রবাসী আয় বাড়ার কারণ, অনেকেই তাদের সব সঞ্চয় দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন৷

জুন মাসে প্রবাসী আয় বাড়লেও বৈদেশিক কর্মসংস্থান কিন্তু গত চার মাস ধরেই বন্ধ৷ গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে সাত লোক বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছিলেন, সেই হিসেবে প্রতিমাসে যান ৫০ থেকে ৬০ হাজার কর্মী৷ এ বছরের জানুয়ারি মাসে গেছেন ৫২ হাজার মানুষ, ফেব্রুয়ারি মাসে গেছেন ৪৪ হাজার মানুষ, আর মার্চে ফ্লাইট বন্ধের আগ পর্যন্ত ৩৮ হাজার লোক গেছে৷ কিন্তু করোনার কারণে বিদেশে লোক পাঠানো পুরোপুরি বন্ধ৷ গত চারমাসে অন্তত দুই লাখ লোক বিদেশে যেতে পারেননি৷ এর মধ্যে প্রায় এক লোক লোকের পাসপোর্ট-ভিসা সব প্রস্তুত ছিল৷

বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-র মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী বলছিলেন, ৭৮ হাজার ৪২৫ জন কর্মীর বিদেশ যাওয়ার সবকিছু মোটামুটি চূড়ান্ত ছিল৷ করোনার কারণে তারা যেতে পারেননি৷ এখন তারা সবসময় তাড়া দিচ্ছে৷ অন্যদিকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা লগ্নি আটকা পড়েছে এজেন্সিগুলোর৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে এই খাতের সবার বিপদ৷

অবশ্য করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে তেমনটাও বলা যাচ্ছে না৷ বিশেষ করে তেলের দাম অস্বাভাবিকভাব কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনীতি সংকটে৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেখান থেকে অনেক লোক কাজ হারিয়ে ফিরতে পারেন এমন আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে৷

সৌদি আরবের ইংরেজি দৈনিক সৌদি গেজেটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলছে, মহামারির কারণে এ বছরই দেশটিতে ১২ লাখ বিদেশী কর্মী চাকরি হারাবেন৷ সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস ঢাকায় পাঠানো এক চিঠিতে বলেছে, আগামী তিন বছরে দশ লাখ লোক বাংলাদেশি চাকুরি হারাতে পারেন৷

অবশ্য কোভিড-১৯ শুধু প্রবাসীদের জীবিকাতেই নয়, আঘাত করেছে জীবনেও৷ গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন দূতাবাসের দুদিন আগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনার কারণে বিদেশেইতিমধ্যেই এক হাজার ৩৮০ জন প্রবাসী বাংলাদেশি মারা গেছেন৷ এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশেই ৭৫৩ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে৷ শুধুমাত্র সৌদি আরবেই মারা গেছেন ৫২১ জন বাংলাদেশি৷ এছাড়া প্রায় ৭০ হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷

বাংলাদেশিদের আক্রান্ত হবার একটা বড় কারণ মধ্যপ্রাচ্যে বা মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকতে বাধ্য হন৷ ফলে আক্রান্ত বেশি৷ শুধু সিঙ্গাপুরেই আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ২৩ হাজার৷ তবে যথাসময়ে চিকিৎসাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ায় দেশটিতে কেউ মারা যাননি৷ সিঙ্গাপুর প্রবাসী নির্মাণ শ্রমিক আসাদুল আলম বলছিলেন, করোনা শুরুর পর লকডাউনে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে ডরমেটরিতে থাকতে বলা হয়৷ কিন্তু সবাইকে বেতন দেওয়া হয়েছে৷ আক্রান্তদের পাঁচ তারকা হোটেলে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে৷ চিকিৎসকরা সবার খোঁজ খবর নিয়েছেন৷ এসব কারণেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি৷

অবশ্য মারা না গেলেও সিঙ্গাপুর থেকে অন্তত ১২ হাজার বাংলাদেশি এসেছেন যাদের অধিকাংশই প্রবাসী শ্রমিক যাদের অনেকেই কাজ হারিয়ে ফিরেছেন৷ পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন৷ এর মধ্যে অবশ্য বেড়াতে যাওয়া কিংবা নানা কাজে যাওয়া লোকজনও থাকলেও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী রয়েছেন৷

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চে ফ্লাইট চলাচল বন্ধের আগ পর্যন্ত সাড়ে চারলাখ লোক বিদেশ থেকে এসেছেন৷ এর মধ্যে অন্তত দেড় থেকে দুই লাখ প্রবাসী কর্মী৷ এর মধ্যে সৌদি আরব থেকে ৪১ হাজার ৬৬১, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৩৭ হাজার ৩২১, মালয়েশিয়া থেকে ১৮ হাজার ৯৪২, কাতার থেকে ১৩ হাজার ৮৬৫, সিঙ্গাপুর থেকে ১২ হাজার ৩৪২, ওমান থেকে ১১ হাজার ৭৮৪, কুয়েত থেকে ৬ হাজার ১২০, বাহরাইন থেকে ৩ হাজার ৫৫৪ জন, ইতালি থেকে ২ হাজার ৭০৩, মালদ্বীপ থেকে ১৫০৯ জন দেশে এসেছিলেন৷ এদের বড় অংশই প্রবাসী কর্মী যারা আবার কাজে ফিরতে পারবেন কী না নিয়ে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন৷ কারণ অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ, অনেকের মালিক কোন আশ্বাস দিচ্ছেন না৷

অন্যদিকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এপ্রিল থেকে ৬ জুলাই সময়ে বিশেষ বিমানে ১৫ টি দেশ থেকে ২৩ হাজার ২৬৯ জন বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন৷ এর মধ্যে কাজ না থাকায় ছয় হাজার ৬৩৮ জন কর্মীকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত৷

মালদ্বীপে বিদেশি ভ্রমণকারীরা না আসায় সেখানেও কাজ হারাচ্ছে অনেক বাংলাদেশি৷ সেখান থেকে ফিরেছেন ৪১৬৯ জন৷ এছাড়া কাজ নেই বলে কাতার থেকে দুই হাজার ৪৬ জন, ওমান থেকে ১৬১৩ জন, সিঙ্গাপুর থেকে ৭০৪ জন ও জর্ডান থেকে ৫৩৬ জন ফিরেছেন৷ এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগের পর বা কাজের চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় কুয়েত থেকে পাঁচ হাজার, সৌদি আরব থেকে ১৩২৩ জন, বাহরাইন থেকে ৭৪৬ জন দেশে ফিরেছেন৷

গত তিন মাসে ফেরত আসাদের মধ্যে অন্তত ৭৮৩ জন নারীও রয়েছেন৷ এর মধ্যে জর্ডানে পোষাক কারখানা থেকে কাজ হারিয়ে ফিরেছেন ৪৮১ জন৷ এছাড়া সৌদি আরব থেকে ফিরেছেন ২১৮ জন, ওমান থেকে ৪৮ জন ও কুয়েত থেকে ৩৩ জন ফিরেছেন৷

করোনার এই সময়ে ফেরত আসা নারীদের সংখ্যা অনেক না হলেও এর আগে বিভিন্ন সময়ে দেশে ফেরা নারীরা নানা সংকটে আছেন৷ এই যেমন সৌদি আরব থেকে ফেরা সাতজন নারী ব্র্যাকের সহায়তায় ধ্রুবতারা নামের একটি ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন৷ কিন্তু লকডাউন তাদের সব এলেমেলো করে দিয়েছেন বলে জানালেন ক্যাটারিং সার্ভিসটির ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা ডালিয়া আক্তার৷ তিনি জানান, সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন সময়ে ফেরা অনেক নারীই সংকটে আছেন৷ কিন্তু সেই সংকট কতোটা?

করোনার সময়ে দেশে ফেরত আসা প্রবাসীরা কেমন আছেন সেটা জানতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের পক্ষ ৫৫৮ জন প্রবাসী কর্মীর সঙ্গে কথা বলে এপ্রিল ও মে মাসে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়৷ বিদেশ ফেরত অভিবাসী কর্মীদের জীবন ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব’শীর্ষক জরিপে জানা যায়, কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির সময়ে দেশে ফেরত আসা অভিবাসী কর্মীদের ৮৭ শতাংশেরই কোনও আয়ের উৎস নেই৷ ৭৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা এখন প্রচণ্ড দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন৷ ৩৪ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের নিজেদের সঞ্চয় বলতে এখন আর কিছু নেই৷ ৯১ শতাংশ বলেছেন, তারা সরকারি বা বেসরকারি কোন সহায়তা পাননি৷

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে সরকার এই ফেরত আসাদের জন্য কী করছে? আবার যারা বিদেশে নানা সংকটে তাদের জন্যই বা করা হচ্ছে? এই সমস্যারই বা সমাধান কী? এ নিয়ে কথা হয়েছে জাতীয় সংসদেও৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসী শ্রমিকদের ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য কূটনৈতিক চাপ অব্যাহত রয়েছে৷ তবে এ চাপ প্রশমিত করার জন্য আমাদের সরকার বিভিন্নমুখী কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ পাশাপাশি বিদেশ ফেরতদের জনও নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে৷

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে করোনার কারণে চাকরিচ্যুত হয়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে বিদেশফেরত কর্মীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অনুকূলে ৫০০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়েছে৷ এছাড়া প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে স্বল্পসুদে ও সহজ শর্তে বিনিয়োগ ঋণ প্রদানের জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছে৷

তবে এই ঋণ নিয়ে প্রবাসীরা আসলেই ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন কী না তা নিয়েও শঙ্কা আছে৷ এক্ষেত্রে তাদের টেকসই পুনরেকত্রীকরণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো সমন্বিত উদ্যোগ নিতে পারে৷ ছোটছোট ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান গড়া যায়৷ ফেরত আসা দক্ষ লোকজনকে দেশের ভেতরেই চাকুরি দেওয়া যায়৷ তবে একটা বিষয় সবাইকে মনে রাখতে হবে, করোনা একট স্বাস্থ্যখাতের সমস্যা৷ একটি মহামারি৷ কাজেই বাংলাদেশকে করোনামুক্ত করতে হবে পৃথিবীর সব দেশের সঙ্গে৷ নয়তো বাংলাদেশিদের চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়ে যেতে পারে৷

তবে সংকটময় এই সময়ে রাষ্ট্রসহ সবার প্রবাসীদেরপাশে থাকাটা জরুরী৷ কারণ এক কোটিরও বেশি প্রবাসী রাষ্ট্রকে শুধু দিয়েই যাচ্ছেন, সেই তুলনায় তাদের প্রাপ্তি নেই বললেই চলে৷ করোনার এই সংকটময় সময়ে পাশে থেকে ঋণশোধ করার চেষ্টা করতে পারে বাংলাদেশ৷ পাশাপাশি অভিবাসন খাতকে স্বাভাবিক করা ও করোনা পরবর্তী নতুন পৃথিবীর জন্য যেসব খাতে দক্ষ লোকের দরকার সেই প্রস্তুতিও নিতে হবে এখুনি৷ কারণ, করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে ভালো খবরও নিশ্চয়ই থাকবে৷

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.