Beanibazarview24.com
বিরল প্রজাতির মাকড়সার দেখা পাওয়া গেলো মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজে’লার পল্লীতে। মানুষের মতো মুখ, দুটি চোখ, লাল ঠোঁট, মুখের আকৃতি অনেকটা নারীর মতো। আশপাশে মা’থাও ঘোরাতে পারে।
‘মানুষরূপী’ এই মাকড়সা নিয়ে এলাকায় চলছে ব্যাপক আলোচনা। কেউ বলছেন অলৌকিক কিছু, আবার কেউ কোনো গ্রহণের আলামত ভাবছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি মাকড়সার একটি প্রজাতি। এ ধরনের মাকড়সা বিরল হলেও অলৌকিক নয়। মাঝেমধ্যে যার দেখা মেলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। ২০১৯ সালে চীনের হুনান প্রদেশে এক নারীর বাড়িতে এ ধরনের একটি মাকড়সা দেখা যায়। এর একটি ভিডিও সে সময় টুইট করে চীনের পিপলস ডেইলি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুলাউড়া উপজে’লার জয়চন্ডী ইউনিয়নের ঘাগটিয়া এলাকায় ২৩ মে মো. সুন্দর মিয়ার নিজের ক্ষেত থেকে পাটশাক তুলে ঘরে নিয়ে স্ত্রী’র হাতে দেন। পরে স্ত্রী’ শাক কাটতে গিয়ে মানুষের মুখের মতো একটি মাকড়সা দেখে ঘাবড়ে যান। এ ঘটনা জেনে আশপাশের মানুষ ভিড় জমায় সুন্দর মিয়ার বাড়িতে।
এ বিষয়ে সুন্দর মিয়া জানান, মাকড়সাটি দেখতে অনেকটা মে’য়েদের মুখের মতো। অলৌকিক কোনো ঘটনা ধরে নিয়ে সন্ধ্যায় সেটি বাড়ির পাশে জমিতে ছেড়ে দেয়া হয়। এই মাকড়সার ছবি তোলেন সুন্দর মিয়ার প্রতিবেশী মাদরাসা শিক্ষক মো. আবু বক্কর।
আবু বক্কর বলেন, ‘মাত্র দেড় ঘণ্টা পরই ভ’য়ে মাকড়সাটি ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর থেকে আমি আশপাশের জমিতে অনেক খুঁজেছি, তবে এমন মাকড়সা আর পাইনি।’
মানুষের মুখের মতো দেখতে মাকড়সা পাওয়ার বিষয়টি কুলাউড়ার উপজে’লা নির্বাহী কর্মক’র্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরীও নিশ্চিত করেছেন।
মাকড়সা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বিবেকানন্দ বিশ্বা’সের মতে, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের হিউম্যান ফেস মাকড়সা দেখা গেলেও বাংলাদেশে এর আগে দেখা যায়নি। এরা অ্যারেইনিয়াস মাইটিফিকাস পরিবারের একটি প্রজাতি। এদের সমগোত্রীয় অন্যান্য প্রজাতির মাকড়সা দেশে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৪০০ এর বেশি মাকড়সার পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। তবে শনাক্তের বাইরে বড় একটি অংশ এখনো রয়ে গেছে।’
ড. বিবেকানন্দ বলেন, ‘হিউম্যান ফেস মাকড়সা বলার কারণ, দূর থেকে এগুলোর পৃষ্ঠদেশকে মানুষের, বিশেষ করে নারীর মুখের মতো মনে হয়। চোখ, ঠোঁট সবই দৃশ্যমান মনে হলেও এটা আসলে মাকড়সার শরীরের একধরনের চিহ্ন। কালো চিহ্নটাকেই চোখ মনে হয়। বাস্তবে মাকড়সার চোখ থাকে ছয় থেকে আটটি এবং এর সবগুলো সামনের দিকে থাকে, পিঠে থাকে না।’
তিনি বলেন, ‘মৌলভীবাজারে এরকম একটা মাকড়সা পাওয়া গেছে বলে আমি ধারণা করছি, সেখানে এ প্রজাতির আরও মাকড়সা আছে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এদের প্রজনন মৌসুম। এই সময়ে তারা বেশি সক্রিয় থাকে।’
তবে দেশে এ ধরনের মাকড়সার অস্তিত্ব নিয়ে কিছুটা সংশয়ে আছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রা’ণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কী’টপতঙ্গ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কবিরুল বাশার।
তিনি বলেন, ‘মাকড়সাটির কেবল দুটি ছবি পাওয়া গেছে। আরও কিছু ছবি থাকলে বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যেত। তবে ২০১৯ সালে চীনে এবং ২০১৮ সালে আসামে এ ধরনের মাকড়সা দেখা গেছে। বাংলাদেশে এ ধরনের মাকড়সা দেখার কোনো রেকর্ড এর আগে নেই।’
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.