Beanibazarview24.com
নিয়ম করেই প্রতিনিয়ত পৃথিবীর আকাশে চাঁদ ওঠে। কোটি বছরের আদি থেকে এই চাঁদ মানুষের জীবনে প্রভাব রাখে জোয়ার-ভাটায়, আনন্দ-বেদনায়। চাঁদের দিকে চেয়ে বিচিত্র মায়ায় আলোড়িত হয় হৃদয়- কখনও-বা চাঁদ বিভিন্ন দার্শনিক ভাবনায় নিক্ষেপ করে চিন্তাশীল মানুষকে। ভাবুন তো, সেই চাঁদে আপনার একখানা জমি আছে!
চাঁদের জমির মালিক হওয়াটা এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তবেই দলিল নিয়ে ঘুরছেন অনেকে। ৫ দশক আগে চাঁদের বুকে পদচিহ্ন রেখে ইতিহাসের অংশ হয়েছেন নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন। সম্প্রতি চাঁদে জমি কেনার হিড়িক পড়েছে দেশেও। গেল বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) খুলনার এমডি অসীম নামের একজন তার ষষ্ঠ বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রী ইসরাত টুম্পাকে চাঁদে জমি কিনে দিয়েছেন। এই খবর রীতিমতো ভাইরাল নেট দুনিয়ায়। হচ্ছে ট্রোল, সৃষ্টি হয়েছে হাস্যরসের। এর আগেও সাতক্ষীরা জেলার দুই তরুণ চাঁদে জমি কিনে উঠে আসেন খবরের শিরোনামে।
এতক্ষণে নিশ্চয়ই ভাবছেন চাঁদে একখণ্ড জমি কিনে রাখলে মন্দ হয় না! তাহলে পরের লাইনগুলো আপনার জন্য।
চাঁদে জমি বিক্রি করে মার্কিন নাগরিক ডেনিস হোপের সংস্থা ‘লুনার অ্যাম্বাসি’। যার বাংলা অর্থ চন্দ্র দূতাবাস। তবে চাঁদের মালিকানা কিন্তু হোপের। এই সংস্থাটিই তার এসব জায়গাজমির ‘দেখভাল’ করে। লুনার অ্যাম্বাসির সিইও হোপ নিজেই। যদিও এই সিইও’র অর্থ সেলেশ্চিয়াল এগজিকিউটিভ অফিসার। এর বাংলা অর্থ মহাজাগতিক বিশেষ অধিকর্তা।
আপনাকে ডেনিস হোপের সংস্থা ‘লুনার অ্যাম্বাসি’ ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর প্রতি একর জমির দাম শুরু ২৫ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি প্রায় ২ হাজার টাকা। এটি আইনত বৈধ; দলিল, মৌজা-পরচার মতো আইনি নথিও আছে। অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়া শেষে আপনাকে চাঁদের যে অংশটি আপনি কিনলেন তার একটি স্যাটেলাইট ম্যাপ এবং জমি কেনার আইনি কাগজপত্র দেয়া হবে মেইলের মাধ্যমে।
চাঁদের জমির ব্যবসার বুদ্ধি এবং রসদ দুই-ই হোপ পেয়েছিলেন তার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জ্ঞানের দৌলতে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের আনা একটি প্রস্তাবের ফাঁকফোকরই সাহায্য করেছিল হোপকে। জাতিসংঘ বলেছিল, বিশ্বের কোনো দেশ বা কোনো দেশের সরকার সৌরজগতের কোনো মহাজাগতিক বস্তুর উপর নিজেদের অধিকার, মালিকানা বা আইনি সত্ত্ব দাবি করতে পারবে না। ১৯৬৭ সালে আনা ওই প্রস্তাবে পৃথিবীর প্রায় সবক’টি দেশ সম্মতি দিয়েছিল।
ওই প্রস্তাবের ফাঁকফোকর হচ্ছে, যেকোনো ব্যক্তি এই দাবি করতে পারবেন না, এমনটা কোথাও উল্লেখ নেই। হোপ ওই অসম্পূর্ণতাকে কাজে লাগিয়েই চাঁদের মালিকানা দাবি করেন। এমনকি জাতিসংঘের কাছে চিঠিও পাঠান। এর বিপরীতে তিনি কোনো উত্তর পাননি। বরং তিনি ধরেই নিয়েছেন, মৌনতা সম্মতির লক্ষণ।
যতদূর জানা যায়, ডেনিস হোপ হলেন একজন মার্কিন নাগরিক। ১৯৮০ সাল থেকেই তিনি দাবি করে আসছেন, সৌরমণ্ডলের সব গ্রহের মালিক তিনি।
কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, জাতিসংঘের ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ চুক্তি অনুযায়ী, চাঁদে কেউ জমি কিনতে পারে না। তবে কিছু দেশের নাগরিক আইন বা চুক্তির ফাঁকফোকর বের করে চাঁদ এবং অন্যান্য গ্রহ–উপগ্রহে জমি বিক্রির নাম করে পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে। যারা কিনছেন, তারা আসলে চাঁদে জমি কিনছেন, না তৃপ্তির ঢেকুর কিনছেন? বাস্তবিক অর্থে উত্তরটা এখনো অজানা!
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.