Beanibazarview24.com
বিদেশে পড়তে যাওয়া সম্পর্কে আমাদের মধ্যে নানা ধরনের ভুল ধারণা আছে। এমন পাঁচটি ভুল তুলে ধরেছেন ইউনিভার্সিটি অব নিউক্যাসল, অস্ট্রেলিয়ার পিএইচডি গবেষক বিপাশা মতিন।
১. ‘আইইএলটিএসের স্কোর ভালো থাকতে হবে।’
‘মামা ৭-৮ না থাকলে হবেই না।’
‘মানসম্মানও থাকে না ব্রো।’
বাস্তবে ব্যাপারটা মোটেই তা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে এই স্কোর কমবেশি হতে পারে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ৬ বা ৬.৫ স্কোর থাকলেও আবেদন গ্রহণ করে। আরেকটি প্রচলিত ভুল ধারণা হচ্ছে, স্কোর ভালো হলেই বৃত্তি নিশ্চিত। আদতে তা নয়। আইইএলটিএস স্রেফ আবেদনের জন্য একটি মানদণ্ড; এর সঙ্গে আপনার বৃত্তি পাওয়ার সম্পৃক্ততা নেই। স্কোর ভালো থাকলে ভালো, তবে ভালো হলেই আপনি বৃত্তি পাবেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আবার স্কোর হাতে পেয়ে তবেই আবেদন করতে হবে, তা-ও কিন্তু নয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় স্কোর ছাড়াই আবেদনের সুযোগ দেয়। কিংবা এমন শর্ত জুড়ে দেয়—ভর্তির আবেদন তখনই নিশ্চিত হবে, যখন আপনি স্কোর জমা দেবেন। আবার অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অন্যান্য যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে আইইএলটিএস স্কোরের মানদণ্ড শিথিল করে।
২. দুই নম্বর ভুল ধারণাটি আক্ষরিক অর্থেই ‘দুই নম্বর’! সেটা হলো—সিজিপিএ ভালো হতে হবে। অনেকের ধারণা, কম সিজিপিএ হলে বিদেশে পড়তে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাও পাপ। জানিয়ে রাখি, সিজিপিএ ভালো থাকলে বেশ ভালো, তবে ভালো না থাকলেও যে আপনি আবেদন করতে পারবেন না বা স্কলারশিপের জন্য বিবেচিত হবেন না, তা নয়। সিজিপিএ কম হলেও অন্যান্য ক্ষেত্র, যেমন সহশিক্ষা কার্যক্রম, গবেষণা বা কাজের অভিজ্ঞতা দেখিয়ে আবেদন করা যায় এবং বৃত্তির সুযোগও পাওয়া যায়।
৩. ‘ফান্ডিং’ নিয়েও অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে। কেউ কেউ ‘ফুল ফান্ডিং’ ছাড়া পড়তে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারেন না। আবার কেউ কেউ মনে করেন, টাকা থাকলেই বিদেশে পড়তে যাওয়া যায়। দুটিই ভুল। ফুল ফান্ডিং না থাকলেও আপনি বাইরে পড়াশোনা করতে পারবেন, তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে টিউশন ফি জোগাড়ের জন্য খণ্ডকালীন কাজ করতে হবে। আবার যাঁরা ভাবেন টাকা থাকলেই বাইরে পড়তে যাওয়া যায়, সেটিও ভুল। সে ক্ষেত্রে বড়জোর ভর্তি হতে পারবেন, কিন্তু পড়ালেখা চালিয়ে যেতে মেধা ও পরিশ্রমই আপনার সম্বল।
৪. অনেকে ভাবেন, বিদেশে পড়ালেখা করতে গেলে তেমন কষ্ট করতে হয় না, মজা–মাস্তি করে কোনো রকম দিন কেটে যায়। ভিন দেশে পড়তে যাওয়া বন্ধুবান্ধবদের সুন্দর, ঝকঝকে ছবি দেখলেই ভেবে বসবেন না—‘খুব চিল হচ্ছে!’ এরা সারা সপ্তাহ প্রচুর পরিশ্রম করে, শনি বা রোববারে একটু ঘুরতে তো যেতেই পারে, নাকি? তাই বলে এটা ভাবা ভুল, যে বিদেশ মানেই আরামদায়ক জীবন। এই ভুল ধারণা নিয়ে বিদেশে পড়তে গেলে বড়সড় ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা আছে।
৫. পাঁচ নম্বর মিথ হলো—একবার বিদেশে যেতে পারলেই আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই! দুই হাতে টাকা কামানো যায়! চাকরিবাকরি নিয়ে আর কোনো টেনশনই থাকে না! ভুল। পড়ালেখা শেষে আপনি বিদেশে কিংবা দেশে, যেখানেই কাজ করতে চান না কেন, সেই পরিশ্রম করেই আপনাকে নিজের জায়গা করে নিতে হবে। জীবনটা তো বাংলা সিনেমা নয় যে একটা বিদেশি ডিগ্রি থাকলেই আপনি বাড়ি-গাড়ি পেয়ে যাবেন। অতএব ভিন দেশে পড়ার ইচ্ছে যদি থাকে—পরিশ্রম করার জন্য, নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন। ‘একবার বাইরে যেতে পারলেই লাইফ সেট’—এমন ভাবনা ভবিষ্যতে আপনাকে ভোগাবে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.