Beanibazarview24.com






পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় গরু চুরির ঘটনা বেড়ে গেছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) রাতে দুই মেধাবী ছাত্রীর বৃত্তির টাকায় কেনা চারটি গরু চুরি হয়ে গেছে। না খেয়ে কষ্ট করে মেয়ের বৃত্তির টাকা জমিয়ে কেনা গরু চুরি হওয়ায় কাঁদছেন দিনমজুর বাবা ও পরিবারের সদস্যরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০ শতকের ভিটেমাটি আর চারটি গরু ছিল দিনমজুর আনিসুর রহমানের সম্পদ। দুই মেয়ের বৃত্তির টাকা জমিয়ে গরুগুলো তেনেন তিনি। প্রায় দুই লাখ টাকা দামের চারটি গরু চুরি হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আনিসুর রহমান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আনিসুর রহমানের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঘটবর গ্রামে। রাতে খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়েন আনিসুরসহ পরিবারের সদস্যরা। ফজরের নামাজ পড়তে উঠে তার স্ত্রী আয়েশা বেগম দেখতে পান গোয়ালঘরে গরু নেই। চিৎকার করতেই চারপাশের লোকজন জড়ো হন। আশপাশে খোঁজাখুঁজি করেও একটি গরুরও সন্ধান পাননি তারা। তাদের ধারণা, রাত আড়াইটা থেকে ৩টার মধ্যে তালা ভেঙে গরুগুলো সংঘবদ্ধ চোরেরা পিকআপে নিয়ে গেছে।
দিনমজুর আনিসুরের চার মেয়ে। চারজনই অত্যন্ত মেধাবী। বড় মেয়ে আফসানা খাতুন এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ইংরেজি বিষয়ে অনার্স সম্পন্ন করেন। মাস্টার্স পড়া অবস্থায় সম্প্রতি তার বিয়ে হয়েছে। মেজো মেয়ে রোমানা আক্তার এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তিনি এখন রংপুর মেডিকেল কলেজে ডেন্টাল বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। তৃতীয় মেয়ে লাবণী আক্তার এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তিনি এখন রংপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে (আইএইচটি) রেডিওলোজি নিয়ে পড়াশোনা করছেন।
ছোট মেয়ে রিপা আক্তার পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। বড় মেয়ে আফসানা ইসলামী ব্যাংক থেকে মাসে তিন হাজার ও মেজো মেয়ে রোমানা ডাচ্-বাংলা ব্যাংক থেকে মাসে দুই হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি পান। সেই টাকার সঙ্গে টিউশনির টাকা এবং দিনমজুরির জমানো কিছু টাকা যোগ করে বাবাকে চারটি গরু কিনে দেন তারা। স্বপ্ন ছিল গরুগুলো বিক্রি করে মেয়েদের পড়াশোনা ও বিয়ের খরচ জোগাবেন। কিন্তু চোর তাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে দিয়েছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাদের জীবনযাত্রা।
রংপুর মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগের শিক্ষার্থী রোমানা আক্তার বলেন, গরুগুলো আমরা কিনেছিলাম যেন বিপদের সময় বিক্রি করে চলতে পারি। এখন আমাদের আর কিছু রইলো না। সামনে আমার পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করতে ১২ হাজার টাকা লাগবে। সেই টাকা কোথায় পাব ভেবে পাচ্ছি না। বাবা বলেছিলেন গরু বিক্রি করে টাকা দেবেন। করোনার মধ্যে এমনিতে টানাপোড়েনে দিন যাচ্ছিল আমাদের। এখন পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করাও অনিশ্চিত হয়ে গেল।
আনিসুর রহমান বলেন, আমার মেয়েরা বৃত্তি আর টিউশনির টাকা দিয়ে গরুগুলো কিনে দিয়েছিল। সেগুলো পালন করে বড় করেছি। একটি বিদেশি গরুসহ চারটি গরুর বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। আশা ছিল গরুগুলো বিক্রি করে মেয়েদের লেখাপড়া ও বিয়ের খরচ দেব। কিন্তু আমার সব স্বপ্ন শেষ করে দিল চোরেরা। মেয়েরা খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। আমি পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছি। সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে তারা।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ওই পরিবারের চারটি গরু চুরির ঘটনা আমরা তদন্ত করছি। চোর চক্রটিকে ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে চোরদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারব।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.