Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

প্রতারণা : খাদেম ভিসা এবং কিছু কথা


আরিফুল ইসলাম, কুয়েত থেকে
বাংলাদেশিদের জন্য জনপ্রিয় শ্রমবাজার হলো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত। করোনাকালেও রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের একটা বড় অংশ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। জীবিকার তাগিদে ভিসার বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশিরা প্রবাসে পাড়ি জমান। তাদের মধ্যে অধিকাংশই জানে না আসলে কোনো ক্যাটাগরির ভিসায় বিদেশ যাচ্ছেন। কোন ক্যাটাগরির ভিসায় কী সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। যার কারণে বিপুল অর্থ ব্যয় করে সুখের সোনার হরিণ ধরতে গিয়ে অনেকেই বিপদে পড়েন, নিঃস্ব হয়েও ঘরে ফেরেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবাসী জানান, আমরা কয়েকজন কুয়েত প্রবাসীর সমন্বয়ে বাংলাদেশিদের উপকারে ‘কুয়েত প্রবাসী’ নামে একটি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ পরিচালনা করি। গ্রুপে আমরা প্রবাসীদের বেশ কিছু সমস্যা লক্ষ্য করেছি। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা পাওয়া যায় তা হলো ভিসার ক্যাটাগরি না জেনে বিদেশে পাড়ি জমানো এবং পরিশেষে তা নিয়ে আফসোস করা।

তিনি জানান, বিদেশিদের জন্য বেশ কিছু ক্যাটাগরির ভিসা সরবরাহ করে কুয়েত সরকার। এর মধ্যে আমাদের বাংলাদেশিদের কাছে দুই ক্যাটাগরির ভিসা বেশ জনপ্রিয়। এক, (১৮) নম্বর ক্যাটাগরির ভিসা ও দুই, (২০) নম্বর ক্যাটাগরির ভিসা।

এবার আসি, (২০) নম্বর যা ‘খাদেম ভিসা’ নামে অধিক পরিচিত তা নিয়ে কিছু বিভ্রান্তির খোলামেলা আলোচনা নিয়ে। খাদেম মানে হচ্ছে সেবক অর্থ্যাৎ যিনি সেবা প্রদান করেন এমন ব্যক্তি। মধ্যপ্রাচ্যে আরবিদের ঘরের সবধরনের কাজের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের বিশেষ ভিসার অনুমোদন করা হয় যাকে ‘খাদেম ভিসা’ বলা হয়। খাদেম ভিসা আবার বিভিন্ন ক্যাটাগরির হতে পারে। যেমন- ড্রাইভার, তাব্বাক (রাঁধুনি), দেওয়ানিয়ার কাজ (টি বয়) ও ঘরের অন্যান্য কাজ।

আরেক প্রবাসী জানান, কুয়েতে খাদেম ভিসা নিয়ে বহুদিন ধরে অবৈধ ব্যবসা চলে আসছে। এটা দুইভাবে হয়ে থাকে। এক, ঘরের কাজের (সব ধরনের কাজ হতে পারে) কথা বলে দালালরা খাদেম ভিসায় আসতে ইচ্ছুকদের থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। যেখানে প্রকৃত সত্য হচ্ছে কুয়েত সরকার নতুন আইনে বাংলাদেশিদের জন্য খাদেম ভিসা মাত্র ১৯৬ দিনারে (বাংলা ৫৫ হাজার টাকা) সরবরাহ করছে, তাও সেটা কফিল/মালিক সরকারকে পরিশোধ করে ভিসা ইস্যু করতে হবে।

এক্ষেত্রে খাদেম ভিসায় আগত ব্যক্তিকে শুধুমাত্র টিকিট, মেডিকেল বা নিজ দেশের ভিসা প্রসেসিং প্রক্রিয়ার সব খরচ বহন করতে হয় বা অনেক ক্ষেত্রে মালিক (কোফিল) নিজেই সব খরচ দেয়। এক কথায় খাদেম সম্পূর্ণ ফ্রিতে আসতে পারে।

বেতন, আলোচনা সাপেক্ষে হতে পারে। তবে নতুনদের ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ১২০ দিনার যা বাংলাদেশের ১৫ থেকে ৩২ হাজারের মধ্যেই। অধিকাংশ বেতন নির্ধারিত হয় এবং মালিকের সঙ্গে আগে থেকেই। প্রতিশ্রুতি থাকলে তা প্রতি বছর বৃদ্ধি করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে এসব খাদেমদের মালিকের গন্ডির বাইরে কাজ করার কোনো সুযোগ থাকে না।

দুই, দালালরা খাদেম ভিসায় আসতে ইচ্ছুকদের কাছে ফ্রি ভিসার নাম করে একেকটি ভিসা প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে, সেখানে কুয়েতিদেরও সম্মতি থাকে।

উল্লেখ্য, ফ্রি ভিসা নামে কোনো ভিসা মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলন নেই। এই ভিসাগুলো এই শর্তে নেয়া হয় যে, কফিল তার খাদেমকে কুয়েতে নিয়ে আসার পর তাকে দিয়ে ঘরের কাজ করানো হবে না, খাদেম তার মর্জি মতো বাইরে যে কোনো কাজ করবে। সেক্ষেত্রে প্রতি বছর আকামা বা সিভিল আইডি নবায়নের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কুয়েতি দিনার কফিলকে পরিশোধ করতে হয়।

যদিও সাধারণত আকামা নবায়ন কফিল সম্পূর্ণ ফ্রিতে করে দেয় তবুও কফিলরা যেহেতু ফ্রি ভিসার নাম করে অবৈধভাবে তাদের খাদেমদের বাইরে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে এবং একটা অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করছে যা আইন পরিপন্থী। সেই হিসেবে আকামা নবায়নের সময় তারা খাদেমদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করে।

কেউ চাহিদা মতো অর্থ দিতে অস্বীকার করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হিসেবে বাড়ি থেকে পলায়নের মামলা দিয়ে দেয়া হয় বা অনেক সময় বাড়িতে ডেকে এনে মারধরের ঘটনাও ঘটে। মামলার পর সেই খাদেম হয়ে যায় আইনিভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ বসবাসকারী। কারণ, ইতোমধ্যে তার মালিক তাকে পলায়নের মামলা দিয়ে দিয়েছে।

আবার বৈধ খাদেম আকামাধারীরা যদি মালিকের কাজ ছাড়া বাইরে অন্য কোনো কাজ করা অবস্থায় পুলিশের কাছে ধরা পড়ে তবে কফিল ও খাদেম উভয়েরই আইনি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে যদি বৈধ আকামা বা সিভিল আইডি থাকে তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোফিল পুলিশি ঝামেলা মিটাতে সক্ষম হয়।

কিন্তু নতুন আইনে কোনো খাদেম বাইরে কাজ অবস্থায় ধরা পড়লে কোফিলদের আইনি ঝামেলা পোহাতে হয় বিধায় খাদেম আকামাধারীরা বাইরে কাজ করা অবস্থায় পুলিশের কাছে ধরা পড়লে মালিক তাকে ছাড়াতে যায় না। এক্ষেত্রে সেই খাদেমের পরিণাম হয় ভয়াবহ। আইনি প্রক্রিয়া শেষে সোজা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু এসব কিছু মাঝেও এই অবৈধ সিস্টেম চলে আসছে বছরের পর বছর।

এসব সমস্যার মূল কারণ ভিসা সম্পর্কে ধারণা না থাকা। খাদেম ভিসায় আসার আগে সবকিছু যাচাই-বাছাই করে না নেয়া। এজন্য ভবিষ্যতে বাংলাদেশিরা কুয়েত বা মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো দেশে এই ক্যাটাগরির ভিসায় আসার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
-jagonews24

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.