Beanibazarview24.com
মহাকাশ পর্যটন নিয়ে গত কয়েকমাস ধরে যা হচ্ছে, তা রীতিমতো বিস্ময়কর! এ যেন এক প্রতিযোগিতা। অ্যামাজনের জেফ বেজোস, ভার্জিনের রিচার্ড ব্র্যানসন ও টেসলার ইলন মাস্ক এই প্রতিযোগিতার প্রথম সারিতেই আছেন।তবে সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগিয়েছে জেফ বেজোসের ‘ব্লু অরিজিন’ কোম্পানির বাহন ‘নিউ শেপার্ড’৷ বেজোসের স্বপ্নের এই মহাকাশযান তৈরিও এক বড়সড় ইতিহাস। কত শত মানুষের ছোট-বড় অবদান আছে এতে। তাদের মধ্যে অন্যতম ভারতীয় তরুণী সঞ্জল গাভান্দে।
জেফের সংস্থা ‘ব্লু অরিজিন’ এই রকেট বানিয়েছে। রকেটটি বানানোর জন্য বাছাই করা দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়োগ করেছেন জেফ। ওই দলেরই একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেন সঞ্জল। রকেটের ইঞ্জিন বানানোর দায়িত্ব ছিল তার দলের উপর। ৩০ বছরের সঞ্জল ও তার দল বেশ ভালোভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করেন।
ভারতের মহারাষ্ট্রের কল্যাণের এক মধ্যবিত্ত পবিারে জন্ম নেন সঞ্জল গাভান্দে। তার বাবা মু্ম্বাই কল্যাণ-দম্ভিবলি পৌরসভায় কাজ করতেন। মা এমটিএনএল-এর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। মুম্বাইয়ের স্কুলেই পড়াশোনা সঞ্জলের। তারপর মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন তিনি।
উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী সঞ্জল স্নাতক হয়ে থেমে থাকতে চাননি। ২০১১ সালে স্নাতকোত্তরের জন্য তিনি আমেরিকায় উড়ে যান। ভর্তি হন মিশিগান টেকনোলজিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে নিজের মাস্টার ডিগ্রি লাভ করেন সঞ্জল। সেই সময় এরোস্পেস নিয়েও পড়াশোনা করেন সঞ্জল।
সঞ্জল এই প্রোজেক্টে কাজ করার আগে ব্রানসউইক কর্পোরেশনের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের সঙ্গে কাজ করেন। এরপর টয়োটা রেসিংয়েও কাজ করেছেন তিনি। নাসাতে আবেদন জানালেও নাগরিকত্বের কারণে সেখানে সুযোগ পাননি তিনি। তবে থমকে যেতে শেখেননি সঞ্জল। তিনি হেঁটেছেন স্বপ্নের পথে।
মেরিন এবং রেসিং কার সংস্থার জন্য কাজ শুরু করেন তিনি। তখন তিনি টয়োটায় কাজ করতেন। টয়েটোয় থাকাকালীন তিনি পাইলটের প্রশিক্ষণও নিতে শুরু করেছিলেন। সপ্তাহে ছুটির দিনে প্রশিক্ষণ নিতেন এবং ২০১৬ সালে পাইলটের লাইসেন্সও পেয়ে যান।
সব কিছুর মধ্যেও মহাকাশযানের স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি সঞ্জল। সেই স্বপ্ন বাস্তব রূপও পেল। অ্যামাজন প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মহাকাশযান দলের সদস্য হলেন তিনি। টিম ব্লু অরিজিনের অংশ হতে পেরে সঞ্জল নিজে খুব গর্বিত বোধ করছেন বলে জানান তিনি।
সঞ্জল বলেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত যে আমি আমার ছোটবেলার স্বপ্নপূরণ করতে পারছি। আমি ব্লু অরিজিনেক অংশ হতে পেরে খুবই গর্বিত।’ এদিকে সঞ্জলের বাবা অশোক গাভান্দে বলেছেন, ‘সঞ্জল ছোটবেলা থেকেই মহাকাশযান তৈরি করতে চাইতো। এই কারণেই মাস্টারস করার সময় এরোস্পেস বিষয়টি সে বেছে নিয়েছিল।’
সঞ্জলের বানানো রকেটে চড়েই ১০ মিনিটের জন্যে মহাকাশে যাচ্ছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজস। ‘নিউ শেপার্ড’ ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় মহাকাশ ও পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যবর্তী কারম্যান লাইনে কিছু ক্ষণ অবস্থান করবে।
২০ জুলাই স্থানীয় সময় সকাল আটটায় পশ্চিম টেক্সাসের মরুভূমির ‘লঞ্চ সাইট ১’ থেকে চার জন যাত্রী-সহ উৎক্ষেপিত হবে ‘নিউ শেপার্ড’। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে সংস্থার ওয়েবসাইটে পুরো অভিযান সম্প্রচার হবে। এখনও অবধি কোনও যাত্রী ছাড়া অন্তত ১৫টি উৎক্ষেপণে সফল হয়েছে স্বয়ংক্রিয় ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য এই যান। বেজোসের সহযাত্রী হবেন ৮২ বছর বয়সি মহিলা বিমানচালক ওয়ালি ফাঙ্ক। সব ঠিক থাকলে তিনিই হবেন প্রবীণতম মহাকাশচারী। এছাড়া অলিভার ডিমেন নামের এক ডাচ কিশোর হবে সর্বকনিষ্ঠ মহাকাশযাত্রী।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.