Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

কোরআনের হাফেজ হলেন ডাউন সিনড্রোম তরুণী


পবিত্র কোরআন হেফজ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জর্দানের রাওয়ান দাওয়াক। সাধারণত প্রতি বছর অসংখ্য মুসলিম শিশু ও কিশোর-কিশোরী পবিত্র কোরআন হেফজ সম্পন্ন করেন। তবে ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগী হিসেবে বিশ্বে তিনিই প্রথম বলে মনে করা হয়।

ডাউন সিনড্রোম একটি জেনেটিক বা জিনগত সমস্যা। এর কারণে মানুষের মধ্যে এর কারণে মানুষের মধ্যে মৃদু বা মাঝারি স্তরের বুদ্ধিবৃত্তিক সমস্যা, বেড়ে ওঠায় বিলম্ব বা অন্য কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। ​বর্তমান বিশ্বে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, প্রতি বছর জন্মগ্রহণকারী এক হাজার শিশুর মধ্যে একজন ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মায়।

এ রোগে আক্রান্ত শিশদের খুবই কম সংখ্যক উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে পারেন। অধিকাংশ মাধ্যমিকে এসে আর পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না। তবে নিজের সব বাঁধা পেরিয়ে মায়ের তত্ত্বাবধানে রাওয়ান পুরো কোরআন হেফজ করে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেন।

সম্প্রতি তুরস্ক ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে এক সাক্ষাতকারে কোরআন হেফজ করতে পেরে রাওয়ান দাওয়াক (২৬) নিজের আনন্দ প্রকাশ করেন। নিজের অনুভূতি জানান তিনি বলেন, ‘পবিত্র কোরআনই আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু। আমি প্রতিদিন তিনবার কোরআন পড়ি। পুরো জীবন তেলাওয়াত করে তা মুখস্থ রাখব।

রাওয়ানের মা আওয়াতেফ জাবির বলেন, ‘আমি রাওয়ানের গর্বিত মা। ছোটবেলায় তার বাবা মারা যায়। আমার চারজন মেয়ে ও একজন ছেলে। রাওয়ান আমাদের পুরো পরিবারে জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে এসেছেন। আজ তাঁকে নিয়ে আমরা সবাই গর্বিত ও আনন্দিত।

রাওয়ানের মা আরো জানান, ‘রাওয়ানের জন্মের পর অন্য মায়েদের মতো আমি খুবই দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। কারণ সে ডাউন সিনড্রোম আক্রান্ত ছিল। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর প্রতি গভীর ভালোবাসা তৈরি হয়। তখনই আমি প্রতিজ্ঞা করি, আমি তাঁকে পবিত্র কোরআন হেফজ করাব। মহান আল্লাহ তাঁর সঙ্গে আমাকেও কোরআনের হাফেজ হওয়ার তাওফিক দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সাল পর্যন্ত সে একটি মাদরাসায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে। বিশুদ্ধ ভাষায় কথা বলায় পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তাঁর জন্য সহজ ছিল। কিন্তু এরপর সে আর এখানে পড়তে চায়নি। নিজের আগ্রহে সে তাজবিদ (কোরআন পাঠের নিয়ম-কানুন সংক্রান্ত বিষয়) পড়া শুরু করে। আমাকে সঙ্গে নিয়ে সে আরেকটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়।

তিনি আরো বলেন, ‘রাওয়ান খুবই মেধাবী মেয়ে। তাঁর প্রখর বুদ্ধিমত্তা উপলব্ধি করে প্রথমে আমি তাঁকে ছোট ছোট সুরা মুখস্থ করাতে থাকি। খুব দ্রুতই সে তা মুখস্থ করত। অতঃপর ছয় বছর বয়সে তাকে মাদরাসায় ভর্তি করাই।

‘রাওয়ানের মুখস্থের নিয়মও ভিন্ন ধরনের। সে লিখে লিখে মুখস্থ করে। দেড় বছরে সে পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারার অংশটুকু হেফজ করে। নির্দিষ্ট সময় পর অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেজদায় পড়ি।

আওয়াতেফ আরো জানান, ‘হেফজকালে রাওয়ান প্রায় সময় নববধুর পোশাক পরার আগ্রহের কথা জানাত। আমি তাকে জান্নাতে এ পোশাক পরার কথা বলতাম। কিন্তু তাঁর কোরআন হেফজ শেষ হলে সম্মাননার দিন আমি তাকে নববধুর পরিয়ে তার আগ্রহ পূরণ করি।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি ২০১৯ সালে কোরআন হেফজ সম্পন্ন করি। আর রাওয়ানের সাত বছর সময় লাগে। এ বছরের ২৯তম রমজান সে হেফজ শেষ করে। কোরআন হেফজকালে কয়েক পারা মুখস্থ হলে তাকে পেছনের পড়ায় পরীক্ষা দিতে হতো। হেফজ করার সময় তার যা প্রয়োজন সবই পূরণ করেছি। নিজের পুরো সামর্থ্য দিয়ে তার কাজে গুরুত্বারোপ করেছি।

‘হেফজের সময় তাঁর মেধা ও বিশুদ্ধ উচ্চারণ বিশেষ সহায়তা করে। মাশায়েখের কাছে কোরআন শোনায়নি। তবে শিগগির সে শুনানি শুরু করবে। মূলত কোরআন হেফজ করা মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও সম্মাননা। সে আমার কাছে পার্থিব জীবনের জান্নাতের মতো। আখেরাতে সে আমাকে সম্মানের মুকুট পরাবে ইনশাআল্লাহ।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.