Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

অর্ধেক শরীরের মানুষটাই অসংখ্য মানুষের অনুপ্রেরণা


‘হাফ ম্যান – হাফ প্রাইস স্টোর’—অদ্ভুত নামের এ সুপারমার্কেট দেখে থমকে যান যে কেউ। এ দোকান চেনেন না, এমন মানুষ চীনের ব্যস্ত শহর চাংশায়ে বোধহয় নেই। এই দোকানে শুধু মালামালই বিক্রি হয় না, অনুপ্রেরণাও জোগায় সেখানকার মানুষদের। গল্পটা শুনলে আপনিও ভাববেন, ‘চাইলেই সব সম্ভব!’

গল্পটা পেং সুইলিন নামের এক ৬৩ বছর বয়সী যুবকের। তিনি নিজেকে ‘হাফ ম্যান’ বলেই পরিচয় করিয়ে দেন। কারণ তিনি জীবনের সঙ্গে লড়ছেন অর্ধেক শরীর নিয়েই। শত কষ্টেও মুখের হাসি মুছতে দেননি কখনও। তার সেই নাছোড় জেদ আর হার-না-মানা মনোভাব অবাক করে দিয়েছে বিশ্বের নামকরা মনোবিজ্ঞানীদেরও।

হুট করেই বদলে যায় সুইলিনের পৃথিবী

১৯৫৮ সালে চীনের হুনান প্রদেশে জন্মেছিলেন পেং সুইলিন। জীবনের প্রথম ৩৭ বছর অন্য দশজনের মতোই স্বাভাবিকভাবে কেটেছিল তার জীবন। কিন্তু হুট করেই পাল্টে গেল সব। সুইলিনের মতে ‘এ এক অন্য স্বাভাবিক পৃথিবী!’

১৯৯৫ সালে চীনের সেংজানে এক ভয়ংকর ট্রাক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। কোমর বরাবর দু’টুকরো হয়ে যায় শরীর। রাস্তায় পড়ে থাকা তার টুকরো শরীর দেখে সবাই ধরে নিয়েছেন যে নেই তিনি। কিন্তু পরে তার শরীরে হৃৎস্পন্দন অনুভব করে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যায় পথচারীরা।

একটা মানুষের শরীর দুই টুকরো হয়ে গেলে বাঁচার আশা থাকে? ডাক্তাররাও আশা করেননি। শরীরের নিচের অংশ শুধু আলাদা হয়েই যায়নি, সেটা এমনভাবে থেঁতলে গিয়েছিল যে জোড়া লাগানো অসম্ভব ছিল। কিডনির নিচ থেকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল ইউরিনারি ব্লাডারের। তবে আশ্চরর্যজনকভাবে উপরের অংশের তেমন কিছুই হয়নি।

বাঁচানোর চেষ্টা আর অজানা লড়াই

সুইলিনকে বাঁচানোর জন্য ২৪ জন ডাক্তার নিয়ে গঠন করা হয় মেডিক্যাল টিম। নিচের অংশটুকু বাদ দিয়ে তাকে বাঁচানোটাই ডাক্তারদের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। শুরু হয় একের পর এক জটিল অপারেশন। প্রথমেই অরগ্যানগুলোর চিকিৎসা করে ছিঁড়ে যাওয়া স্নায়ু, ধমনীগুলো সূক্ষ্মভাবে জোড়া লাগিয়ে সেলাই করে দেয়া হয় শরীরের উপরের অংশটি। মল, মূত্র ত্যাগের জন্য কৃত্রিম মূত্রনালী আর মলদ্বারও বসানো হয়। প্রাণে বেঁচে যান পেং সুইলিন।

প্রাণে বাঁচলেও যুদ্ধটা কিন্তু শেষ হয়নি। সামান্য একটা আঙুল না থাকলেই তো মানুষ নিজের খেই হারিয়ে ফেলে; সুইলিনের শরীরে তো নিচের অংশটুকুই নেই! বড় বড় কয়েকটি অপারেশনের পর তার জ্ঞান ফিরতেই সময় লেগেছিল কয়েকমাস। কোমরের নিচ থেকে কার্যত কিছুই নেই, তবু বিছানায় শুয়ে শুয়েই উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতেন সুইলিন। ডাক্তাররাও ভেবেছিলেন, বাকি জীবন বিছানাতেই কাটাতে হবে তাকে।

সুইলিন জীবনের সঙ্গে লড়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। স্ত্রী আর চার বছরের ছোট বাচ্ছাটার জন্য উঠে দাঁড়াতেই হবে তাকে, সচল রাখতে হবে শরীরকে। প্রায় একবছর শয্যাশায়ী থাকার পর হতাশা কাটিয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করতে শুরু করেন সুইলিন। যত যন্ত্রণাই হোক, হাসপাতালের খাটে শুয়ে হাতের নানারকম ব্যায়াম শুরু করেন তিনি। শুধু দুটো হাতের ওপর ভর দিয়ে ডন দেওয়া থেকে শুরু করে খাওয়া দাওয়া, স্নান, মুখ ধোয়া—যাবতীয় কাজ নিজেই করতেন। নার্সদের সাহায্য নিতে চাইতেন না। উদ্দেশ্য একটাই, বাকি শরীরটুকু সচল রাখা। প্রায় দুবছর এভাবে হাসপাতালে থাকার পর বাড়ি ফেরার অনুমতি পান সুইলিন।

বাড়ি ফেরার সময় কিছু না নিয়ে ফিরলেও পরিপক্ক দুটি হাত ও মনোবল ছিল তার সঙ্গে। হাতের ওপর ভর দিয়ে তিনি অনায়াসেই স্থানান্তর করতে পারতেন নিজের অর্ধেক শরীরটাকে। বাড়িতে বসেই সরকারের সাহায্য নিয়ে টুকটাক কাজ করতে শুরু করেন তিনিও। বাড়িতে নার্স রাখার খরচ অনেকটাই বেশি, তাই নিজের কাজ যতটা সম্ভব নিজেই করতেন পেং। স্ত্রীও সাহায্য করতেন।

নিজের সুপারমার্কেটে টুকটাক কাজ করেন পেং সুইলিন। ছবি: সংগৃহীত
নিজের সুপারমার্কেটে টুকটাক কাজ করেন পেং সুইলিন। ছবি: সংগৃহীত

অর্ধেক শরীর নেই, তবুও হাঁটতে চাইলেন

জমানো সব টাকা আর সরকারের সাহায্য নিয়ে একটা সুপারমার্কেট তৈরি করেন পেং সুইলিন। হুইল চেয়ারই তখন তার পা। কিন্তু শরীরের জোর দিয়ে হাঁটতে না পারা যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিলেন না তিনি। এগিয়ে আসে ‘চায়না রিহ্যাবিলিটেশন রিসার্চ সেন্টার’। একটা নরম ডিমের খোলসের মতো অংশের মধ্যে তার দেহের সেলাই করা অংশটুকু ঢুকিয়ে দিয়ে সেই ডিমের শেষভাগে দুটি বায়োনিক পা লাগিয়ে দেয়া হয়। কাজটা সহজ ছিল না। সুইলিনের শরীরের মাপ অনুযায়ী খুব দক্ষ কারিগর তৈরি করেন ওই বায়োপিক পা-দুটো। চলাফেরার ক্ষমতা ফিরে পান সুইলিন।

প্রথমে হাঁটতে অসুবিধা হলেও পরে মনের জোরে তিনি আয়ত্বে নিয়ে আসেন। যেদিন প্রথম স্বাভাবিক ছন্দে হাঁটতে শুরু করেন, আনন্দে বউ আর ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেছিলেন পেং। পা ফিরে পাওয়ায় মনোবল দ্বিগুণ হয়ে যায় তার। আগের মতোই নিজেকে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে ফেলেন কাজের মধ্যে। কর্মব্যস্ত, হাসিখুশি পেং সুইলেনকে দেখলে আজ কারও মনেই হবেনা, জীবন-মৃত্যুর কত বড় দোলাচল পার করে ফিরেছেন তিনি।

‘হাফ ম্যান’ হলেও অসম্পূর্ণ নন

নিজেকে ‘হাফ ম্যান’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেও হলেও অসম্পূর্ণ নন পেং। তার কাজই তাকে দিয়েছে মুক্তির স্বাদ। এই মুহূর্তে বিশ্বের হাজার হাজার মানুষের রোল মডেল তিনি। এত ঝড়-ঝাপটা পেরিয়েও হাসতে ভোলেননি পেং সুইলিন। ২ ফুট ৭ ইঞ্চির দুমড়েমুচড়ে যাওয়া শরীরটাকে নিয়েই তিনি হুইলচেয়ারে ঘুরে বেড়ান চীনের এক প্রান্ত আরেকপ্রান্তে।

প্রতিবন্ধকতাকে পার করে বেঁচে থাকার মন্ত্র শেখান। জীবনের প্রতি অভিযোগ নিয়ে নয়, আত্মবিশ্বাসে ভর করে উঠে দাঁড়াতে শেখান। হ্যাঁ, সময়মত ঠিকঠাক চিকিৎসার সুফল পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু সেটাই সবকিছু নয়। তার বেঁচে ওঠার তীব্র ইচ্ছে আর ইতিবাচক মনোভাবটাই ছিল আসল বিশল্যকরণী। পরের বার নিজেকে আয়নায় দেখে কান্নাকাটি করার আগে একবার এই চীনা ব্যবসায়ীর জীবনের গল্পটা মনে করবেন। জীবনটা আসলেই সুন্দর!

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.