Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি প্রবাসীরা, আটক ২


মালয়েশিয়ায় দালাল সিন্ডিকেটের দুই সদস্যকে আটক করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। ৭ ফেব্রুয়ারি পেনাংয়ে এক বিশেষ অভিযানে তাদের আটক করা হয়। গত একমাস ধরে প্রতারকদের ধরতে গোয়েন্দা সংস্থা অভিযান চালিয়ে আসছিল। অভিযানে ৩১ বছর বয়সী মালয়েশিয়ান নাগরিক ও ৩৫ বছর বয়সী ভারতীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে।

সিন্ডিকেটের এই দুই সদস্য বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে (পিকেপি) সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দেশটিতে থাকা অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতার আওতায় আনতে ‘রিক্যালিব্রেশন’ নামে একটি কর্মসূচি হাতে নেয়। এই রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচির বিপরীতে কাজ করছিল সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযানের উদ্দেশ্য হলো অসহায় প্রবাসীদের নিয়ে যেন সিন্ডিকেট অবৈধ ব্যবসা করতে না পারে। দালালদের কারণে বিদেশি নাগরিকদের জন্য সরকারের দেয়া বিভিন্ন সময় প্রোগ্রামগুলো সফল হয়নি।

এই সিন্ডিকেটের কাজ হলো ইমিগ্রেশন অফিসের সঙ্গে সমন্নয় রেখে বিদেশি নাগরিকদের অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইয়ে দেয়া। ইমিগ্রেশন কর্তৃক অ্যাপয়েন্টমেন্ট না করে অবৈধ উপায়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জনপ্রতি ১ হাজার থেকে শুরু করে ১৫শ রিঙ্গিতের বিনিময়ে কাজ করে দেয়া।

এই সিন্ডিকেটটি পেরলিস, কেদাহ, পেনাং, পেরাক, তেরেংগানু, কুয়ালালামপুর, জহুর বারুরাজ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছিল। অভিযানের সময় একটি হোন্ডা সিটি গাড়ি তল্লাশি করে নগদ ৪ হাজার রিঙ্গিতসহ তাদের আটক করা হয়।

মাস্টারমাইন্ড সিন্ডিকেট সদস্যদের পাসপোর্ট আইন ১৯৯৬ ধারা (এফ) সেকশন ১২ (১) এর অধীনে অপরাধে আটক করা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদন্ড বা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে। তাদেরকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে আরো তদন্ত চলছে।

এদিকে অবৈধদের বৈধতা প্রদানে রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য সরকার কোনো মধ্যস্থতাকারী দালাল-এজেন্ট-এজেন্সি-নিয়োগ দেয়নি। সরকারের পরামর্শ হলো কোনো এজেন্ট-দালাল-এজেন্সি দারস্থ না হতে। দালালের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন না করতে আবারও সতর্ক করে দিয়েছেন দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের সংশ্লিষ্টরা।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারি কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলাচলের বা প্রবেশের বিধি-নিষেধের ফলে নতুন করে নিয়োগ থমকে গেছে। সরকারগুলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশি মনোযোগ দিয়েছে ফলে নিজ দেশে থাকা বিদেশিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার আওতায় আনার কৌশল নিয়েছে।

তদ্রুপ মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা বিদেশি অবৈধ কর্মীদের বৈধ হবার রিক্যালিব্রেশন কর্মসূচি চালু করেছে যা ১ জানুয়ারি ২০২১ থেকে বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার, চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত। এ সুযোগ নিয়ে বৈধভাবে অবস্থান করার জন্য যে ১৫টি দেশের নাগরিকদের অনুরোধ করেছে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস। এটি মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের এবং নিয়োগকর্তাদের শৃঙ্খলাজনিত করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা।

বৈধকরণ কর্মসূচির আওতায় বৈধ হবার জন্য নির্দিষ্ট শর্ত ও যোগ্যতা আরোপ করেছে যেমন বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় এসে ভিসায় উল্লিখিত নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করছে কিন্তু ভিসা রিনিউ করেনি বা ওভার স্টে হয়েছে, নিজ নিজ কোম্পানিতে কাজ করেনি এবং কোম্পানি থেকে পালিয়ে গেছে। এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে হবে ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ এর মধ্যে। এরপর হলে হবে না।

এর আগে ২০১৬ সালে রি-হিয়ারিং নামে বৈধকরণ কর্মসূচি দিয়েছিল তার সঙ্গে রিকেলিব্রেশন এর কিছুটা পার্থক্য রয়েছে যা না বুঝলে প্রতারিত হতে হবে। যেমন রি-হিয়ারিং এ নৌ, সাগর বা স্থলপথে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছিল তাদেরকেও বৈধতা দিয়েছিল। এবার সে সুযোগ নেই।

সেবার বিভিন্ন ভিসাধারীদেরও সুযোগ দিয়েছিল এবার সুনির্দিষ্ট করে পি এক কে এস উল্লেখ করা হয়েছে এবং অবশ্যই বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করার প্রমাণ থাকতে হবে। রি-হিয়ারিং এজন্য ভেন্ডর বা এজেন্ট ছিল এবার কোনো ভেন্ডর বা এজেন্ট নিয়োগ করেনি। গত রি-হিয়ারিংয়ে বৈধ হবার জন্য আবেদন করে প্রতারিত হবার মূল কারণ ছিল সেই সব এজেন্ট।

ফলে এবার কোনো এজেন্ট নিয়োগ করেনি। এটি মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে প্রচার করছে। এবার কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা সরাসরি ইমিগ্রেশনে কর্মীদের নাম জমা দিয়ে বৈধতার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। কোম্পানি নিয়োগ করতে পারবে কিনা তার যাচাই করবে লেবার ডিপার্টমেন্ট অর্থাৎ বিদেশি কর্মী নিয়োগের কোটা না থাকলে নিয়োগ দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ নিয়ে সরে পড়তে পারবে না।

রিহায়ারিং এর সময় অনেক ভুয়া ও অযোগ্য কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা বৈধতার নামে প্রতারণা করেছিল। ফলে রি-হিয়ারিং কর্মসূচি শেষে হাজার হাজার কর্মীর প্রতারিত ও নিঃস্ব হবার কান্না ও অভিযোগ ছিল। অনেক প্রতারক হাজার হাজার কর্মীর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে রাতারাতি কৌশলে বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে অবস্থান করে ফলে তাদের মালয়েশিয়া পুলিশ খুঁজে পায়নি।

যদিও হাইকমিশন থেকে সতর্ক করে লিফলেট, টিভিসি এবং অন্যান্য প্রচার করেছিল, সংবাদ মিডিয়া নিয়মিত আপডেট প্রচার করে সতর্ক করেছিল। কিন্তু দালাল ও প্রতারকদের চটকদার কথা এবং কর্মীদের নিজেদের তথ্য গোপন করার ফলে সহজেই প্রতারিত হয়েছে। এবার এদের বৈধ করার জন্য স্পেশাল সুযোগ দেয়া হয়েছে।

মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী এ ধরনের কাজে আর্থিক লেনদেন ফাইন্যান্সিয়াল অপরাধ প্রতারিত ব্যক্তি আইনের আশ্রয় নিতে পারে, অনেকে মামলা করেছিল কিন্তু খোঁজ করে জানা গেছে সাক্ষী প্রমাণ না দেয়া বা বাদীর অসহযোগিতা থাকায় সুরাহা করতে পারেনি। তবে মালয়েশিয়ার সিস্টেম অনুযায়ী দীর্ঘ অনুসন্ধান করে এবং প্রতারকদের গ্রেফতার করছে বলে মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে।

ভিসা করে দেয়া প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় কর্মীরা বেশি প্রতারিত হয়। এজন্য দালালদের বা এজেন্টের কাছে অর্থ ও পাসপোর্ট দিয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নকল ভিসা বা রিপ্লেসমেন্ট ভিসা দিয়ে থাকে অর্থাৎ কোনো বিদেশি কর্মী খালি থাকলে সেখানে আরেকজন বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে থাকে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় খুব বেশি সংখ্যক নিয়োগ করার সুযোগ নাই। তবে একজন ভিসা পেলে অনেকেই সে সুযোগ নিতে টাকা ও পাসপোর্ট দিয়ে থাকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব মালয়েশিয়ার সভাপতি মনির বিন আমজাদ বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী অবৈধ হয় প্রতারণার মাধ্যমে যেমন, বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে কর্মী ভাগিয়ে আনা, পরিচিত জনের কাছে শুনে বেশি আয়ের লোভে সেখানে চলে যাওয়া, কাজ পছন্দ না হওয়ায় পালিয়ে যাওয়া। তাই দেশ ছাড়ার আগেই কর্মীদের এসব বিষয়ে কঠোর প্রশিক্ষণ দিতে হবে অন্তত ভালোটা বুঝতে পারে।

তিনি বলেন, বেশি অভিবাসন ব্যয় তোলার জন্য বেশি আয়ের উপায় খুঁজে নিতে অবৈধ হতে বাধ্য হয় তাই অভিবাসন ব্যয় সরকার নির্ধারিত পরিমাণ বাস্তবায়ন করতেই হবে। বেতন, ভাতা ও কাজ সম্পর্কে সঠিক ধারণা প্রচার করতে হবে।

কেননা অনেকে বলে যে, কাজ ও বেতন দেবে বলে বলা হয়েছে সে কাজ ও বেতন দেয়া হয়নি। আসার পর মোহ থেকে বের হয়। এই মোহ দেশেই শুরু হয় তাই দেশেই এর প্রতীকার করতে হবে। তাহলে বৈধ কর্মী অবৈধ হবে না।

দূতাবাস ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশের বৈধ হতে প্রত্যাশীদের সতর্ক করে দিয়েছে যেন কোনো এজেন্ট বা দালালের কাছে না যায়, আর্থিক লেনদেন না করে। কোম্পানি সম্পর্কে জেনে নিতে দূতাবাসে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেছে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.