Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

বাংলাদেশি খুদে ব্যবসায়ীরা ইতালিতে কেমন আছেন

শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থেকে বছর সাতেক আগে ইতালি এসেছেন আবুল খায়ের মৃধা (৩২)। কৃষিকাজের জন্য চুক্তিভিত্তিক ভিসা ছিল ছয় মাসের। ইতালিপ্রবাসী এক নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে তিনি এখানে আসেন। ভিসা-প্রক্রিয়া আর বিমান ভাড়া মিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় পৌনে নয় লাখ টাকা। ছয় মাস পর ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধ হন মৃধা। ২০০৯ সালে দেশটির সরকারের অবৈধ অভিবাসী বৈধকরণ ঘোষণায় ভাগ্য খুলে। বৈধ অভিবাসী হিসেবে সরকারের তালিকাভুক্ত হন তিনি।

দেশে বর্ষা মৌসুমে ছাতা মেরামত ও বিক্রির পাশাপাশি পারিবারিক জমিতে চাষাবাদ করতেন খায়ের মৃধা। এতে সঞ্চয় না থাকলেও খেয়ে পরে মোটামুটি স্বচ্ছল দিন পার করছিলেন। ইউরোপ আসার পোকা মাথায় ঢুকলে তার খেসারত দিতে হয় পুরো পরিবারকে। নয় লাখ টাকা জোগাড় করতে বিক্রি করতে হয় ধানি জমি।

২০০৭ সালে পুরো বিশ্বে চলছিল চরম অর্থনৈতিক মন্দা। এ থেকে বাদ যায়নি শিল্পোন্নত দেশের সংস্থা জি-৮ ভুক্ত ইতালিও। স্বাভাবিকভাবে মন্দার প্রভাব পড়ে চাকরি বা শ্রমবাজারে। চাকরির ‘সোনার হরিণ’ দশা দেখে রীতিমতো অবাক খায়ের মৃধা। ইতালি আসার চার মাস পর্যন্ত চাকরিহীন ছিলেন মৃধা। ইতালিতে বসবাসরত আত্মীয়দের থেকে ঋণ নেন প্রায় ৬০০ ইউরো। চাকরির বিকল্প কিছু একটা করার ভাবনা থেকে সিদ্ধান্ত নেন, অন্যদের মতো রোমের পর্যটক স্থানসমূহে ভাসমান কিছু বিক্রি করবেন।

২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিক। তখন ইতালিতে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। শীতের কানটুপি, হাতমোজাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কাপড় দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন খায়ের মৃধা। পিয়চ্ছা স্পেনিয়া (Piazza Spgna), পিয়চ্ছা নাভোনা (Navona), পিয়চ্ছা ভেনিছিয়া (Venezia), ভ্যাটিকানসহ (Vatican) রোমের নামকরা পর্যটক স্থানে শীতবস্ত্র ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন মৃধা। এতে ঘুরে দাঁড়ানোর পাশাপাশি নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফেরে তার।

বছর সাতেক পর এখন পারতিতা ইভা (Partita IVA) বা ট্যাক্স (Tax) ফাইল আর ব্যবসার লাইসেন্সের মালিক খায়ের মৃধা। কিন্তু তাঁর ব্যবসার স্থানসমূহ আগের মতোই। বৈধ অনুমতি থাকা সত্ত্বেও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা করতে গিয়ে সাত বছরে তিনবার পুলিশে ধরে। এ ছাড়া পুলিশের তাড়ানিতে দৌড়ে পালাতে গিয়ে হাঁটু আর মাজায় ব্যথা পেয়েছেন দুবার।

রাজধানী রোমে চাকরি না পাওয়া কিংবা চাকরিবিমুখ বাংলাদেশিদের জীবন এমনই। উন্মুক্ত স্থান ও গলিতে ভ্রাম্যমাণ বা ফুটপাতে বসে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী কিংবা কাপড় বিক্রি করে চলে উপার্জন। বিক্রয় সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে বাচ্চাদের খেলনা ও মোবাইল সামগ্রীও।

ভ্রাম্যমাণ বা ফুটপাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির জন্য উল্লিখিত আকর্ষণীয় পর্যটক ও প্রাগৈতিহাসিক স্থানসমূহের পাশাপাশি ফুনতানা ডি ত্রেভি (Fontana di trevi), নগরের কেন্দ্রবিন্দু টারমিনি (Termini), ভ্যাটিকানের (Vatican) আশপাশ এলাকা, পাতাল ট্রেনের স্টেশন কিংবা গ্রীষ্ম মৌসুমে সাগরপাড় এলাকাসমূহ উল্লেখযোগ্য। এসব স্থানসমূহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে লুকোচুরি খেলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের।

রুজিরোজগারের জন্য এ পথটি ঠিক কতজন বাংলাদেশি বেছে নিয়েছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও বাংলাদেশ সমিতি ইতালির সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী জানান, শুধু রোমেই এ পেশায় আছেন আনুমানিক ১৫ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি।

এক অনুসন্ধানে জানা যায়, ইতালিতে অনেক পণ্য আমাদের দেশের মতো পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়। এখানে বিক্রীত পণ্য সামগ্রীর ওপর সরকার পায় তার নির্দিষ্ট অঙ্কের কর। পাইকারি বাজার থেকে খুদে ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা পণ্য ক্রয় করেন। যেখানে খুচরা ক্রেতা বেশি এবং ভালো লাভে বিক্রি করা যায়, সেখানে তাঁরা তাদের পণ্য সুবিধামতো দামে বিক্রি করেন।

উল্লেখ্য, এসব খুদে ব্যবসায়ীদের অধিকাংশেরই রয়েছে ইতালিতে বসবাসের বৈধ কাগজ। এমনকি ট্যাক্স নিবন্ধন ও কেনাবেচার লাইসেন্স পর্যন্ত। একে ইতালির ভাষায় বলে পার্তিতা ইভা (Partita Iva)। তার পরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রুদ্ররোষের স্বীকার হন এইসব বাংলাদেশি। অনুসন্ধানে জানা যায়, ইতালি সরকারের খুদে ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের ব্যাপারে কোনো নীতিমালা না থাকা এর প্রভাব পড়ছে খুদে ব্যবসায়ীদের ওপর।

এ ব্যাপারে এই প্রতিবেদক কথা বলেন স্থানীয় কয়েক জনের সঙ্গে। তাঁদের একজন ইতালির কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। তাঁর নাম অ্যালেসান্দ্র বেত্তিনি (Allosandro Bettini), রোম অঞ্চলের শীর্ষস্থানীয় নেতা। তিনি জানালেন, বাংলাদেশি ভ্রাম্যমাণ খুদে ব্যবসায়ীদের ওপর পুলিশ হয়রানির কথা শুনেছেন। তাঁদের অধিকার আদায়ে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে হবে। তিনি মনে করেন, অধিকার আদায়ে আন্দোলনের বিকল্প নেই।

অধিকার বঞ্চিতদের সরকারি আইনজীবী প্রদানের সংস্থার আইনজীবী ও ইতালির ট্রাইব্যুনাল বিশেষজ্ঞ মারিও এনতনিও এনজেল্লি (Mario Antonio Angelelli) বলেন, ‘আমার কাছে অভিযোগ আসছে পুলিশ বাংলাদেশি খুদে ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে জবানবন্দি, মুচলেকা ও শারীরিক নির্যাতন করার। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিষয়টি বাংলাদেশিদের সংঘবদ্ধ হয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো উচিত।’

সুবিধাবঞ্চিত বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশিয়ার মানুষদের জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজ করেন ইতালিয়ান কাতিউচ্ছিয়া কার্না (Katiuscia Carna)। তিনি জানান, নিরীহ বাংলাদেশিদের ওপর পুলিশি খড়গের বিরুদ্ধে তিনি। নিরীহ বাংলাদেশিরা যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে রোজগার করতে পারে তার জন্য খুদে ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করা। এটা করা হলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ইতালির অর্থনীতিতে।
শেখ মোহাম্মদ সাহেদ
রোম, ইতালি।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.