Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

হাসপাতাল আর কতদূর?

How far is the hospital?


‘দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা। এই আড়াই ঘণ্টায় চোখের সামনে চার চারটা মৃত্যু। ইমার্জেন্সির গেটে পৌঁছালেও কারও আর হাসপাতালে ভর্তির সৌভাগ্য হয়নি। পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর ভর্তির দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষ করতে করতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরল মানুষগুলো। হাতের কাছে থাকা হাসপাতালটাও যেন তাদের জন্য বহুদূর…..’- কাতর কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামের ফটোসাংবাদিক আবু সাঈদ মোহাম্মদ।

বুধবার (১০ জুন) দুপুরে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগ এমন মর্মান্তিক দৃশ্যের মুখোমুখি হন তিনি।

ফটোসাংবাদিক আবু সাঈদ মোহাম্মদ বলেন, ‘রাঙ্গুনিয়া থেকে করোনার উপসর্গ নিয়ে বুধবার দুপুর ১২টার দিকে চমেক হাসপাতালে আনা হয়েছিল আয়ূব আলী নামের এক ব্যক্তিকে। পরে হাসপাতালের সামনে হুইলচেয়ারেই তার মৃত্যু হয়। অক্সিজেনের অভাবে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু হাসপাতালের দুয়ারে আসলেও তিনি সামান্য চিকিৎসাটুকু পাননি।’

এ গণমাধ্যম কর্মী বলেন, ‘আয়ূব আলীর মতোই ওই আড়াই ঘণ্টায় রেলের সাবেক কর্মকর্তা সুনীল কুমার, রাঙ্গুনিয়ার আরেক বাসিন্দা ফজলুল কাদের চৌধুরীসহ চারজনকে চোখের সামনে হাসপাতালের গেটে মারা যেতে দেখলাম একপ্রকার বিনা চিকিৎসায়!’
হাসপাতাল আর কতদূর?
শুধু এই আড়াই ঘণ্টা বা চমেক হাসপাতাল নয়। হাসপাতালের দরজায় বিনা চিকিৎসায় এমন মৃত্যু এখন চট্টগ্রামে প্রতি মুহূর্তের ঘটনা। হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে একের পর এক মানুষ মরছে। অনেক আকুতি করেও কোথাও হাসপাতালের সিট পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা আক্রান্ত হওয়া কিংবা উপসর্গ নিয়ে অনেক রোগীই বিনা চিকিৎসায়ই মারা যাচ্ছেন।

শুধু বুধবার দুপুরে নয়, মধ্যরাতে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের চৌধুরীর বাবা জসিম উদ্দিন ও নগর বিএনপির সহ-সভাপতি লায়ন মো. কামাল উদ্দিনের।

নগর বিএনপির সভাপতি ও ট্রিটমেন্ট হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, কামাল উদ্দিনের করোনার উপসর্গ ছিল। শ্বাসকষ্টে বেড়ে যাওয়ায় প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় মা ও শিশু হাসপাতালে। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা বসেছিলেন তিনি, এরপরও অক্সিজেন মেলেনি। পার্কভিউ, ম্যাক্স ও মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে গেলেও কোথাও করোনা সন্দেহে ভর্তি নেয়নি। ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে যখন আনা হয়, তখন তার অক্সিজেন নেমে গিয়েছিল ৭৮-এ। তখন তার আইসিইউ সাপোর্ট লাগত। কিন্তু ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে তিনটি আইসিইউ শয্যার মধ্যে তিনটিতেই রোগী ভর্তি ছিল। এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এর আগে গত মঙ্গলবার (৯ জুন) সকালে বুকে ব্যথা নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা মেলেনি বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম ছগীরের। সময় মতো চিকিৎসা না পেয়ে গাড়িতেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
হাসপাতাল আর কতদূর?
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে বুকে ব্যথা অনুভব করলে শফিউল আলম ছগীরকে একটি মাইক্রোতে করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে, তারপর নগরের ও আর নিজাম রোডের চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে, এরপর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়ার পরে তাকে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নির্দেশনায় পাঁচলাইশ পার্কভিউ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও ততক্ষণে শফিউল আলম ছগীরকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। গাড়িতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

শুধু শফিউল আলম ছগীর নন, করোনার প্রকোপ শুরুর পর থেকেই চট্টগ্রামের নানা হাসপাতালে অন্য রোগে আক্রান্ত সাধারণ রোগীরা নানারকম হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অসুস্থ ব্যক্তি এবং তাদের উদ্বিগ্ন স্বজনরা চিকিৎসা সেবা পেতে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটে চলেছেন এবং করোনার এ সংকটের সময়ে অন্য গুরুতর রোগীরা কীভাবে চিকিৎসা পাবেন বা রোগ নির্ণয় করাবেন সে বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা না থাকায় অনেক রোগী চিকিৎসা পাওয়ার আগেই মারা যাচ্ছেন।
হাসপাতাল আর কতদূর?
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের চৌধুরীর বলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে বাবার মাথার এক পাশে ব্যথা ওঠে। ডান হাত অবশ হয়ে যায়। আমি তখনই ন্যাশনাল হাসপাতালের ল্যান্ড ফোনে কল করি। বাবার পরিস্থিতি জানাই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে বলে, ‘আপনি রোগী নিয়ে আসেন’। আমরা যখন বাবাকে নিয়ে সিএনজি অটোরিকশায় উঠি তখন আমি আবার কল করি ন্যাশনাল হাসপাতালে। ওনারা তখন বলে, ‘আপনি একবার কল করেছিলেন না? রোগী নিয়ে আসেন। আমরা ভর্তি করাব’। কিন্তু বাবাকে নিয়ে আসার পর তারা গাড়ি থেকেই নামাল না। এক কর্মচারী এসে অক্সিজেন সেচ্যুরেশন মেপে দেখল। আমি তাকে বললাম, ডাক্তারকে ডাকুন, নয়তো জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। তখন উনি কল দিলেন কর্তব্যরত চিকিৎসককে। বললেন, ‘রোগীর অক্সিজেন সেচ্যুরেশন ৮৯। এখন কী করব? এরপরই ওই কর্মচারী আমাদের বললেন, ‘আমাদের ফ্লু কর্নার খালি নেই। আপনারা অন্য হাসপাতালে রোগী নিয়ে যান।’

জোবায়ের বলেন, ‘আমাদের যদি ন্যাশনাল হাসপাতালে ভর্তি করাবে না বলে দিত, তাহলে আমরা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারতাম বাবাকে। কিন্তু ন্যাশনাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতারণাই করল আমার বাবার জীবন নিয়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরে চমেক হাসপাতালে নিলাম। জরুরি বিভাগে দেখি কোনো ডাক্তার নেই। তখন প্রায় সাড়ে ৩টা। কর্মচারীরাই বাবার ইসিজি করালেন। কর্মচারীরাই বাবাকে মৃত ঘোষণা দিলেন। চমেকে আনার আগেই পথে সম্ভবত বাবা মারা যান।’

হাসপাতাল আর কতদূর?
হাসপাতাল আর কতদূর?

অব্যবস্থাপনার বলি গর্ভের বাচ্চাও
সাতদিন পর ছিল বাচ্চা ডেলিভারির তারিখ। এর মধ্যেই উঠল প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট। পেটে অনাগত সেই বাচ্চা নিয়ে অন্তঃসত্ত্বা ওই নারী দিনভর ঘুরলেন হাসপাতালে-হাসপাতালে। টানা ১৮ ঘণ্টা চেষ্টা করেও পুরো চট্টগ্রামে মেলেনি একটি আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র)। শেষে অনেকটা বিনা চিকিৎসাতেই মঙ্গলবার গভীর রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ১০ মাসের গর্ভবতী মা মুক্তা (৩০)।

অথচ মাত্র এক সপ্তাহ পর, ১৮ জুন বাচ্চা জন্ম দেয়ার সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারিত ছিল তার। মৃত্যুর পর ফৌজদারহাটের কবরস্থানে মায়ের সঙ্গী হয়েছে ওই বাচ্চাও।

মৃত মুক্তার ছোট ভাই জনি মুঠোফোনে বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল থেকে আপুর জন্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে একটি আইসিইউ বেডের খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। ১৮ ঘণ্টার সব চেষ্টার পরও আইসিইউ না পেয়ে তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল আর ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে দৌড়াদৌড়ির পর মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আপু।’

এর আগে ওয়ার্ড থেকে তাকে আইসিইউতে রেফার করা হলেও ১০ মাসের গর্ভবতী জেনেও মা ও শিশু হাসপাতাল থেকে বলা হয় আইসিইউতে সিট খালি নেই। পরে মুক্তার স্বামী ও ভায়রা চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, ম্যাক্স হাসপাতাল, পার্কভিউ হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতালসহ একে একে সব বেসরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করেও একটা আইসিইউ সিটের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হন।

অথচ মাত্র কয়েক দিন আগে করোনার সময়ে সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে প্রসূতি মায়েদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা পরীক্ষাসহ অন্যান্য সুচিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
-জাগোনিউজ২৪.কম

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.