Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

টাইটান: কেমন ছিল অভিযান, যেভাবে ধ্বংসাবশেষের সন্ধান মিললো

১১১ বছর আগে ডুবে যাওয়া টাইটানিক দেখতে নিয়ে যেত ‘ওসেন গেট’ সংস্থার সাবমেরিন টাইটান। শতাব্দী প্রাচীন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া সেই সাবমেরিনই পরিণত হয়েছে ধ্বংসাবশেষে। টাইটানিকের মতোই হলো টাইটানের পরিণতি। টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপের কাছে কী ভাবে হারিয়ে গেল টাইটান? কীভাবে হদিস মিলল আটলান্টিকের অতলে? এসব প্রশ্নই এখন প্রতিধ্বনি হচ্ছে বিশ্বের আনাচে-কানাচে।

ঠিক কী হয়েছিল সাবমেরিন টাইটানের, তা নিয়েই এখন কাটাছেঁড়া চলছে। সঙ্গে বাড়ছে রহস্যও। আটলান্টিকের গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের ১৬০০ ফুট দূরে পাওয়া গেছে টাইটানের ধ্বংসাবশেষ। আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনীর দাবি, সমুদ্রের গভীরে একেবারে ‘দুমড়ে মুচড়ে’ গেছে সাবমেরিনটি। ২২ ফুটের সাবমেরিনটির পাঁচটি টুকরো হয়ে গেছে। সেগুলোরও খোঁজ মিলেছে। কিন্তু পাঁচ অভিযাত্রীর দেহের কোনো হদিস মেলেনি। তাদের দেহ উদ্ধারের সম্ভাবনাও ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসছে বলেও জানিয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনী।

ব্রিটিশ ধনকুবের হামিশ হার্ডিংয়ের ইনস্টাগ্রাম পোস্টকে উদ্ধৃত করে মার্কিন কোস্টগার্ড জানিয়েছে, গত ১৮ জুন স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা নাগাদ পাঁচ অভিযাত্রীকে নিয়ে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনে আটলান্টিকের ১৩ হাজার ফুট গভীরে নেমেছিল টাইটান। সমুদ্রের উপরে থাকা সহযোগী জাহাজ ‘পোলার প্রিন্স’কে প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর সিগন্যাল পাঠানোর কথা ছিল টাইটানের। কিন্তু দুপুর পৌনে ২টা নাগাদ টাইটানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে টাইটানের ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও টাইটান না ফেরায় মার্কিন কোস্ট গার্ডের কাছে খবর পৌঁছায়।

১৯ জুন আমেরিকা এবং কানাডা টাইটানের খোঁজে নামে। সমুদ্রের ৪০০০ মিটার গভীরে শব্দ নিরীক্ষণ যন্ত্র পাঠানো হয়। সিএনএন এবং রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে ৩০ মিনিট অন্তর বেশ কয়েকটি জোর শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। কোথা থেকে শব্দ আসছিল সেটি চিহ্নিত করে ২১ জুন দূরনিয়ন্ত্রিত একটি সমুদ্রযানকে পানির গভীরে পাঠানো হয়।

উদ্ধারকাজে নামানো হয় ‘ভিক্টর-৬০০০’ নামের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন রোবট। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধারকাজে নামানো হয় ‘ভিক্টর-৬০০০’ নামের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন রোবট। ছবি: সংগৃহীত

এরপর সাবমেরিনের সন্ধানে ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়। ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও টাইটানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। উত্তর আটলান্টিকে যে অঞ্চলজুড়ে উদ্ধারকাজ চালানো হয়, তার আয়তন যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের দ্বিগুণ। আরোহীরা বেঁচে আছেন বলে গতকালও আশা প্রকাশ করেছিলেন পরিবারের সদস্য ও উদ্ধারকারীরা। গত মঙ্গল ও বুধবার কানাডার উদ্ধারকারী দল আটলান্টিকের তলদেশ থেকে কিছু শব্দ শনাক্তের পর ওই আশা আরো জোরদার হয়।

গতকাল অভিযানে নতুন করে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি জাহাজ অংশ নেয়। নামানো হয় ‘ভিক্টর-৬০০০’ নামের বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন রোবট। ওই রোবটই টাইটানের ধ্বংসাবশেষের ছবি তুলে পাঠায়। ২২ জুন (বৃহস্পতিবার) স্থানীয় সময় বিকেল ৩টা ৪৮ মিনিটে আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনী জানায়, টাইটানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে।

আমেরিকার উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং সমুদ্র বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যে জোরালো শব্দ চিহ্নিত করা গিয়েছিল, সেই সময়েই কিছু একটা ঘটেছিল টাইটানের সঙ্গে। অনুমান করা হচ্ছে, জলের প্রবল চাপে সাবমেরিনটি দুমড়ে গিয়েছিল। এই ধরনের সাবমেরিন কার্বন ফাইবার এবং টাইটানিয়াম দিয়ে তৈরি করা হয়। যদি তাতে কোনো ত্রুটি থাকে বা কোনোভাবে চিড় ধরে তা হলে দুমড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এভাবেই হয়তো শেষের মুহূর্ত ঘনিয়ে আসে সাবমেরিনের। ওই পানির চাপে কোনো মানুষেরই বেঁচে থাকার কথা নয়। এমনকি সামুদ্রিক প্রাণীর আক্রমণও দেহ না পাওয়ার নেপথ্যে অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

টাইটানের মতো ছোট সাবমেরিন নিয়ে সাগরের এত গভীরে যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। ছবি: সংগৃহীত
টাইটানের মতো ছোট সাবমেরিন নিয়ে সাগরের এত গভীরে যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। ছবি: সংগৃহীত

আটলান্টিক সাগরের সাড়ে ১২ হাজার ফুট নিচে দুই টুকরো হয়ে পড়ে থাকা বিখ্যাত টাইটানিক জাহাজ দেখার আগ্রহ আছে অনেকেরই। তবে সেই সাধ পূরণে সাগরের অতলে যেতে হলেও গুনতে হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করলেও পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে মোটেও ভাবেনি নিউফাউনল্যান্ড ভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওশানগেট। সাগরে পর্যটকদের নিয়ে নিখোঁজ হওয়ার পর ডুবোজাহাজটির নানা ত্রুটির কথা সামনে আসছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাগরের গভীরে ডুব দিতে হলে যেকোনো সাবমেরিন কিংবা ছোট সাবমারসিবলের বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সেগুলো পাস করলে দেওয়া হয় নিরাপত্তা সার্টিফিকেট। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে সাগরের ডুব দিতে সক্ষম দাবি করা টাইটান সাবমারসিবলের ছিল না কোনো সনদ। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে ২০১৯ সালে বিষয়টি স্বীকার করলেও কোনো সদুত্তর দেয়নি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওশানগেট। উল্টো চালিয়ে গেছে সব কার্যক্রম।

সাগরের ৪ হাজার মিটার গভীরতায় ডুব দেওয়ার সক্ষমতা আছে বিশ্বের মাত্র ১০টি সাবমারসিবলের। টাইটান তাদের মধ্যে একটি হলেও এর কোনো সার্টিফিকেট ছিল না। এই খাতের বিশেষজ্ঞরা আগেই এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন। এটা খুবই বিপজ্জনক।

টাইটানের গভীর সাগরে ডুব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এর আগের অভিযানে যাওয়া পর্যটকরাও। মেক্সিকান এক পর্যটক নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, টাইটানের মতো ছোট সাবমেরিন নিয়ে সাগরের এত গভীরে যাওয়া খুবই বিপজ্জনক।

চার দিন মহাসাগরের তলদেশে ব্যাপক তল্লাশির পর বৃহস্পতিবার উদ্ধারকারীরা পাঁচ আরোহীর মৃত্যুর কথাও জানান।

টাইটানে ছিলেন পাঁচ যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত
টাইটানে ছিলেন পাঁচ যাত্রী। ছবি: সংগৃহীত

শাহজাদা দাউদ ও সুলেমান দাউদ
টাইটানে ছিলেন ৪৮ বছর বয়সী শাহজাদা দাউদ। তিনি পাকিস্তানের একটি ধনী পরিবারের সদস্য। ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রতিষ্ঠিত দুটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সেবাকাজের সঙ্গে তিনি যুক্ত। তাঁর ছেলে সুলেমান দাউদও ওই সাবমেরিনে ছিলেন। ১৯ বছর বয়সী সুলেমান শিক্ষার্থী।

শাহজাদা দাউদের স্ত্রীর নাম ক্রিস্টিন। তিনি আরেক সন্তান আলিনার সঙ্গে লন্ডনে থাকেন। শাহজাদা পাকিস্তানি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এনগ্রো কর্পোরেশনের ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি এসইটিআই নামের একটি ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক গবেষণা সংস্থার সঙ্গে কাজ করেন।

সাবমেরিনটি নিখোঁজ হওয়ার পর শাহজাদার পরিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তিনি বিভিন্ন প্রাকৃতিক জায়গা নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া ও যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব বাকিংহামে পড়াশোনা করেছেন।

হ্যামিশ হার্ডিং
৫৮ বছর বয়সী হ্যামিশ হার্ডিং একজন ব্রিটিশ অভিযাত্রী। বেশ কয়েকবার দক্ষিণ মেরু ঘুরে এসেছেন তিনি। আমেরিকান ধনকুবের জেফ বেজোসের যাত্রীবাহী মহাকাশযান ব্লু অরিজিনে চড়ে ২০২২ সালে মহাকাশ ভ্রমণ করেছেন হ্যামিশ হার্ডিং। তার নামের পাশে তিনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রেকর্ডটি হলো, পৃথিবীর গভীরতম স্থান হিসেবে পরিচিত মারিয়ানা ট্রেঞ্চে ডুব দিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় থাকা।

হ্যামিশ হার্ডিংয়ের বেড়ে ওঠা হংকংয়ে। আশির দশকে ক্যামব্রিজে পড়াশোনা করার সময় তিনি বিমান চালনায় দক্ষতা অর্জন করেন। ব্যাংকিং সফটওয়্যারে অর্থ উপার্জন করে নিজের বিমান তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

পল হেনরি নারজোলেত
৭৭ বছর বয়সী পল হেনরি নারজোলেত ফরাসি নৌবাহিনীর সাবেক ডুবুরি। তিনি মি. টাইটানিক নামে পরিচিত। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন নারজোলেত।

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার দুই বছরের মাথায় ১৯৮৭ সালে প্রথম অভিযানে গিয়েছিলেন পল হেনরি নারজোলেত। টাইটানিকের অনেক ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বেশিরভাগের উদ্ধারকাজই তিনি তদারকি করেন। পল হেনরি নারজোলেতের অধীনে টাইটানিকের ‘বিগ পিস’ খ্যাত ২০ টন ওজনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার হয়েছিল।

স্টকটন রাশ
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাবমেরিন সরবরাহকারী কোম্পানি ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টকটন রাশ (৬১)। তিনি সাবমেরিন টাইটান চালাচ্ছিলেন। গ্রাহকদের গভীর সমুদ্রের অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য ২০০৯ সালে ওশানগেট প্রতিষ্ঠা করেন স্টকটন রাশ। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখানোর প্রস্তাব দিয়ে ২০২১ সালে প্রচারিত বিজ্ঞাপন বিশ্ব জুড়ে সাড়া ফেলেছিল।

স্টকটন রাশ ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মহাকাশ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি নেন। স্নাতক শেষ করার পর ম্যাকডোনেল ডগলাস করপোরেশনে ফ্লাইট টেস্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে চলে যান স্টকটন রাশ। ১৯৮৯ সালে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া (বার্কলে) থেকে এমবিএ ডিগ্রি নেন।

৬১ বছর বয়সী রাশ বলেছিলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন আকাশের চেয়ে সমুদ্র মানুষকে বেঁচে থাকার সেরা সুযোগ দেয়। তিনি আরও বলেন, মানবজাতির ভবিষ্যৎ পানির নিচে, মঙ্গলগ্রহে নয়।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.