Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

‘আমেরিকা যাওয়ার লোভে চুক্তিভিত্তিক বিয়েতেই ভিখারি হলাম’







‘ইচ্ছে ছিল কৌশলে আমেরিকায় পাড়ি জমাবো। কিন্তু শর্টকার্টে তো আর বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সম্ভব নয়। জটিলতা অনেক বেশি। এছাড়া অতিরিক্ত যোগ্যতাও আমার ছিল না। এ কারণে প্রথমে স্টুডেন্ট ভিসায় সাইপ্রাসে যাই।

লোকজন থাকায় সহজেই এখানে আসতে পারি । প্রথম প্রথম দেশটিতে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। কারণ এদেশে ব্যয় অনেক বেশি। আবার সব কিছু অজানা, অচেনা। তাছাড়া আমি যে ভিসায় এসেছি তাতে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ নেই। শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে টাকা এনে খরচ চালাতাম।’



‘কিছুদিন এখানে থাকার পর সিদ্ধান্ত নিলাম আমেরিকায় যাব। যেভাবেই হোক না কেন? যেতে আমাকে হবেই। যোগাযোগ শুরু করলাম দালালের সঙ্গে। প্রথমে দালালের সঙ্গে চুক্তি করলাম। পরে দালালই সব ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেয়। কিছুদিনের ভেতর মহৎ কাজটা সম্পন্ন হয়।

চুক্তিভিত্তিক বিয়েতেই সব শেষ হয়ে গেল আমার। গোছানো টাকা যা ছিল তা শেষ হয়েছে। বাড়ি থেকে এনেও বউয়ের চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। কারণ এদের চাহিদা অনেক বেশি। বউয়ের পুরো দায়িত্ব স্বামীর। এমনকি বউয়ের বয় ফ্রেন্ড থাকলে তার দায়িত্বও আমাকে নিতে হবে।’



মো. আবু সাইদ, বাড়ি বগুড়া। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফলিত রসায়নে অনার্স সম্পন্ন করেন। মাস্টার্স করতে সাইপ্রাস যান ২০১৪ সালে। তবে তার ইচ্ছে ছিলে যেভাবেই হোক না কেন আমেরিকায় পাড়ি জমাতে হবে। সেভাবেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে শেষ পরিণতি খুবই ভয়াবহতায় রূপ নেয়।

চুক্তিভিত্তিক বিয়েতে মেয়ে থাকবে মেয়ের জায়গায়, ছেলে থাকবে ছেলের জায়গায়। মাঝখানে দালালপক্ষ উকিলের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে কাগজপত্র বানিয়ে দেয়। সাইপ্রাসে গিয়ে হাজার হাজার প্রবাসী এশিয়ান ও বাংলাদেশি ‘কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ’র মাধ্যমে কাগজপত্র বানিয়ে নিচ্ছেন। যারা এ সুযোগে ইউরোপের কয়েকটি দেশে স্থায়ী বসবাসের সুবিধা পায়। তবে বর্তমানে আমেরিকায় নতুন আইনের ফলে নাগরিকত্ব পেতে জটিলতা পোহাতে হচ্ছে।



তিনি বলেন ‘প্রথমে দালালের সঙ্গে বিয়ে করা থেকে শুরু করে কাগজপত্র পাওয়া পর্যন্ত প্রায় ৮-১০ লাখ টাকার চুক্তি করি। বিয়ের পর চুক্তি অনুযায়ী মেয়েকে রোমানিয়া বা বুলগেরিয়া থেকে নিয়ে আসতে হয়। মেয়েকে নিয়ে আসার পর থেকে শুরু হয় খরচের অত্যাচার। কারণ মেয়ের যাবতীয় খরচ বহন করতে হয় স্বামীকে। দালালের সঙ্গে চুক্তির বাইরেও তাকে টাকা দিয়ে খুশি রাখতে হয়, যাতে ওই মেয়ে কোন সমস্যা না করে।’



ইউরোপ-আমেরিকায় স্থায়ী হওয়ার জন্য ভুয়া বিয়ে নতুন কোন ঘটনা নয় বরং স্থায়ী অভিবাসী হিসেবে এ অঞ্চলে থাকার জন্য কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ পশ্চিমা দেশে আসা অভিবাসীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এতেই দালালরা আটছে অভিনব পন্থা। পদ্ধতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিয়ে করে নাগরিকত্বের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে দালালরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।



সাইপ্রাসে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ বা চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করার নিয়ম বা কত টাকা খরচ হয় এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইদ বলেন, সাইপ্রাসে যদি কেউ কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করতে চান তাহলে সে ইউরোপের মাত্র দুটি দেশের মেয়েদেরই বিয়ে করতে পারে। কারণ, এই দুই দেশ ছাড়া ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মেয়েরা এসব কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ সহজে করে না।



তিনি জানান, কম খরচে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়ার নারীদের সহজে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করা যায়। তবে বর্তমানে এখানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি। দু’বছর আগেও কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করতে বাংলাদেশি টাকায় চার-পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে সবকিছু ম্যানেজ করা যেতো। কিন্তু এখন আইন অনেক কড়াকড়ি হওয়ায় চুক্তিভিত্তিক বিয়েতে প্রায় আট-দশ লাখ টাকা লাগে।



এই আট-দশ লাখ টাকা খরচ করেও কি সফল হচ্ছেন প্রবাসীরা? নাকি নিজের সর্বস্ব হারিয়ে ইউরোপের কাগজপত্র পাওয়ার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাচ্ছে তাদের? এ বিষয়ে তিনি বলেন, চুক্তিভিত্তিক বিয়ের নামে এখন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশিসহ শত শত এশিয়ান প্রবাসী। তার মধ্যে আমিও একজন। জানি না কপালে কি আছে।



তিনি বলেন, যেখানে এক ইউরো লাগে সেখানে দশ ইউরো খরচ করতে হচ্ছে তাদের। শুধু তাই নয়, দালালদের ঠিক করা ব্যক্তিরা ম্যারেজ কন্ট্রাক্টের বাইরেও টাকা দাবি করে ব্ল্যাকমেইল শুরু করে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে। মেয়েরা চুক্তির বাইরে আরো টাকা চাওয়া শুরু করে। আর না দিতে চাইলে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। কারণ ছেড়ে দিলে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ আর থাকবে না। ফলে লোকসানে পড়বে বিয়ে করা সেই ব্যক্তি। ফলে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বে মেনে নিতে হয় তাদের বেআইনি আবদার।



ইউরোপে কোনো একটি দেশের নাগরিকত্বের সুযোগ পেলে সে ব্যক্তি ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভিসা ছাড়াই চলাচল করতে পারে। একদিকে স্বপ্নের দেশ ইউরোপ, অন্যদিকে স্থায়ী নাগরিত্বের সুবিধা থাকায় এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না অনেক বাংলাদেশিই।



এসব কারণে বৈধ ভিসা ছাড়া বিদেশে না যাওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। কারণ যে কোনো উপায়ে অবৈধভাবে বিদেশে গিয়ে কোনো ভালো কাজ পাচ্ছে না প্রবাসীরা। এছাড়াও তাদের অবৈধভাবে যেতে বৈধ ভিসার থেকেও বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তিনি প্রবাসীদের পরামর্শ দেন চুক্তিভিত্তিক বিয়ে না করতে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.