Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সুখের আশায় বিদেশ এসেছিলাম, কিন্তু স্বপ্নই রয়ে গেল


জিসান মাহমুদ, কুয়েত থেকে
‘আমার বাড়ি নোয়াখালী। দেশে এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। কুয়েত আসার আগে দালাল আমাকে বলেছিলেন মেডিকেল ভিসা। এখানে এসে বুঝলাম আমার ক্লিনার ভিসা। কেউ কি জেনে-শুনে এই ভিসায় আসে? এখন রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করছি। মধ্যপ্রাচ্যে যারা আছে তারা জানে দালালের কথার সঙ্গে কাজের কোনো মিল থাকে না। একটার কথা বললে আরেকটা কাজ দেয়।’

কথাগুলো বলছিলেন সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে আসা যুবক রবিন। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে আসতে সবমিলিয়ে আমার সাত লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ক্লিনার ভিসায় তো বেতন কম। শুনেছি ৬০-৮০ দিনার (১৬-২২ হাজার টাকা)। থাকা কোম্পানির হলেও খাওয়া কিন্তু নিজের।’

এভাবে চলেন কীভাবে, জানতে চাইলে রবিন বলেন, ‘কী আর করার আছে, কপালে যা থাকে তাই হবে। ৮ ঘণ্টা কোম্পানির ডিউটি শেষ করে বিকেলে একটা পার্টটাইম কাজ করি। সেখান থেকে কিছু আয় হয়। এভাবেই কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছি। ’

তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস শুরুর আগে এসেছি। এরপর মহামারির জন্য দুই মাস কাজ বন্ধ ছিল। বাড়িতে অনেক ধারদেনা করেছিলাম। সেসব টাকা ধীরে ধীরে দিতে হচ্ছে। পরিবারের একটু সুখের আশায় বিদেশ এসেছিলাম। ভেবেছিলাম ভালো বেতনে চাকরি করব। স্বপ্ন আমার স্বপ্নই রয়ে গেল।’

রবিন বলেন, ‘ভালো দিন বলতে কিছু নেই এখন। অভাবের সংসার। দেশে পরিবারকে খাওয়াতে হয়। কবে তাদের টাকা পাঠাব, সব সময় সেই চিন্তায় থাকি। তাদের কাছে টাকা পাঠিয়ে ধারদেনা পরিশোধ করতে হয়। নিজের কাছে অবশিষ্ট বলতে কিছুই থাকে না।’

রবিনের সঙ্গে ক্লিনার ভিসায় কাজ করেন চাঁদপুরের যুবক আনোয়ার। পরিবারের অভাব ঘোচাতে বহুদিন আগে তিনিও কুয়েত আসেন। ক্লিনার ভিসায় আসার পর আর ভিসা পরিবর্তন করতে পারেননি আনোয়ার।

তিনি বলেন, ‘দালালের মাধ্যমে কুয়েত এসেছি। ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠে কোম্পানির পোশাক পরে কাজে যেতে হয়। সারাদিন তপ্ত রোদে কখনো আবার হাড় কাঁপানো শীতে রাস্তা পরিষ্কার করতে হয়। ডিউটি শেষে বাসায় গিয়ে রান্না করতে হয়। এভাবে চলছে আমাদের জীবন।’

শুক্রবার (১২ মার্চ) কুয়েতের সেফদি এলাকায় কথা হয় রবিন ও আনোয়ারের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলার আগে সেখানে চোখে পড়লো হলুদ রঙের পোশাকে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনকে। তাদের বেশিরভাগ ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। কৌতূহলবশত তাদের একজনের সঙ্গে আলাপ হয়। এ সময় সেখানে একসঙ্গে অনেকে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে রবিন নামের ওই যুবক বলেন, ‘হ্যাঁ ভাই, আমাদের কোম্পানির গাড়ি আসবে।’

তাকে জানালাম, আমিও ফরওয়ানিয়া যাওয়ার জন্য গাড়ি পাচ্ছিলাম না। তখন রবিন বললেন, ‘আপনি চাইলে আমাদের সঙ্গে যেতে পারেন। আমরাও ফরওয়ানিয়ার পাশে খায়তান যাব।’ এ সময় তাদের গাড়ি এসে দাঁড়াল।

সবাই তাড়াহুড়ো করে গাড়িতে উঠে পড়লো। ডিউটি শেষ সবাই বাসায় যাবে। আমাকেও ডেকে নিয়ে গাড়িতে উঠালো এবং নিজের পাশের সিটে বসতে দিলেন রবিন।

কথা বলার সময় হঠাৎ মাঝপথে গাড়ি থামান চালক। সবাই গাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছেন। কারণ কী? এখনো তো গন্তব্যে আসিনি। আমিও নেমে পড়লাম। নেমে দেখলাম দুই লেনের মাঝখানে হলুদ রঙের অনেকগুলো পুটলি বাঁধা। বুঝলাম এগুলো রাস্তা থেকে কুড়িয়ে রাখা ময়লা। সব এক জায়গায় জমাট বেঁধে রাখা হয়েছে। এগুলো আবার সবাই ময়লার গাড়িতে তুলে দিচ্ছে।

এদিকে অনেকের আবার পার্টটাইম কাজ আছে। তাই বাসায় ফেরার জন্য তাড়াহুড়ো করছেন। কিন্তু কোম্পানির ফোরম্যান কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। ইচ্ছে ছিল তাদের সবার গল্পগুলো শোনার। একেকটা গল্পের সঙ্গে কতগুলো স্বপ্ন জড়িয়ে থাকে। সময়ের অভাবে আর কথা বলা হলো না।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.