Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

‘ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছি তাই সেবা দিতে কোনোদিন টাকা নেব না’


‘আমি তিনবার চেষ্টার পর পুলিশে চাকরি পেয়েছি। এলাকার মানুষ বলতো ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না। আজকাল টাকা দিলে সব হয়, যোগ্যতার প্রয়োজন হয় না। আমি খুব প্রস্তুতি নিয়ে তৃতীয়বার শেষবারের মতো চেষ্টা করলাম। অবশেষে পুলিশের চাকরি হলো আমার। ১২০ টাকায় চাকরি হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। আমাদের সবার অনুভূতি অনেক ভালো।’

রোববার (১৯ মার্চ) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নোয়াখালী জেলার ট্রেইনি রিক্রুট পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এ সময় আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে এভাবেই কথাগুলো ঢাকা পোস্টকে বলছিলেন নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার ধানশালিক ইউনিয়নের কৃষক বাবুল মিয়ার মেয়ে আকলিমা জাহান।

সদর উপজেলার বাধেরহাট এলাকার মফিজ উল্যাহর ছেলে হোসনে মোবারক শাকিল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এ বছর প্রথম আবেদন করেছি। প্রথমবারে পরীক্ষা দিয়ে ঘুষ ছাড়া চাকরি হওয়ায় আমি খুব খুশি। আমি সবাইকে বলব স্বপ্ন থাকলে তা একদিন সত্য হবেই।

হাতিয়ার বাসিয়নিজাম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় তার প্রমাণ আমি নিজেই। প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছি। আমি যেহেতু চাকরি ঘুষ ছাড়া পেয়েছি তাই সেবা দিতে কোনোদিন টাকা নেব না। আমি সবার কাছে দোয়া চাই।

কবিরহাট উপজেলার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের আমির হোসেন সেলিম কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল আমি পুলিশের সদস্য হব। বাবা-মা খুব কষ্ট করে আমাকে লালন পালন করেছেন। তাদের খুব চিন্তা ছিল কীভাবে আমি প্রতিষ্ঠিত হব। আমি দুইবার পরীক্ষা দিয়েছি কিন্তু হয়নি। এবার তৃতীয়বারের সময় চাকরিটা আমি পেয়েছি। সরকার এমন স্বচ্ছ নিয়োগ দিচ্ছে তার জন্য ঊর্ধ্বতন সকলের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।

হাতিয়া উপজেলার ইসমাইল হোসেন নামের এক অভিভাবক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১২০ টাকায় চাকরি হয়েছে। সেই জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। এমন নিয়োগ হওয়ায় আমরা খুব খুশি। আমাদের বাড়ি হাতিয়া দ্বীপে এখানে মেধাবী শিক্ষার্থীরা রয়েছে কিন্তু টাকা দিয়ে চাকরি নেওয়ার মতো অবস্থা নাই। এই সুন্দর নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আবারো ধন্যবাদ জানাই।

জেলা পুলিশ জানায়, নোয়াখালী জেলার জন্য নিয়োগযোগ্য শূন্য পদ ছিল ১১৯টি। পুরুষ ১০১ জন এবং নারী ১৮ জন। বিজ্ঞপ্তির শর্ত পালন করে আবেদন জমা হয় ৬ হাজার প্রার্থীর। যাচাই-বাছাই শেষে ৩৮৩৬ জন প্রার্থীর আবেদন গৃহীত হয়। বিভিন্ন ধাপের পরীক্ষা শেষে প্রাথমিকভাবে ১১৯ জন পুলিশ পরিবারের নতুন সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে সাধারণ কোটা পুরুষ ৭৯ জন, নারী ১৩ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুরুষ ৯ জন, নারী ৪ জন, পুলিশ পোষ্য কোটা পুরুষ ১০ জন, নারী একজন, আনসার ও ভিডিপি কোটা পুরুষ একজন, এতিম কোটা পুরুষ ২ জন উত্তীর্ণ হন।

নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, টিআরসি নিয়োগ এমন একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি, যেখানে চাইলেও অনিয়ম করার সুযোগ নেই। এটি স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং দুর্নীতিমুক্ত। যে সকল প্রার্থী প্রতিটি পরীক্ষায় শারীরিকভাবে যোগ্য, মেধাবী ও সৎ শুধুমাত্র তারাই তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগযোগ্য হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। পুরো চাকরিতে খরচ হয়েছে মাত্র ১২০ টাকা। এর জন্য যোগ্যতা ও মেধাকে কাজে লাগাতে হয়েছে।

মো. শহীদুল ইসলাম আরও বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর আগে আমি কমিটমেন্ট করেছিলাম, নিয়োগ প্রক্রিয়া শতভাগ স্বচ্ছ হবে। আমার বিশ্বাস, আমার কমিটমেন্টের এক চুলও ব্যত্যয় হয়নি। শতভাগ স্বচ্ছ পরীক্ষায় নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে বলেই রিকশাওয়ালা, কাঠমিস্ত্রি, পান বিক্রেতা, দিনমজুর ও বর্গাচাষির ছেলে-মেয়েরা নিয়োগের জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের অনেকের কাউকে ৪০-৫০ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়ার ক্ষমতাও নেই। কেবল যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তারা নিয়োগ পেয়েছেন।

এ সময় নিয়োগ বোর্ডের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) চাঁদপুর সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ব্রাহ্মণবাড়িয়া মো. মোজ্জামেল হোসেন রেজা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মোর্তাহীন বিল্লাহসহ পুলিশ সদস্য ও জেলায় কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.