Beanibazarview24.com
‘নাম বলব না, শুধু বলি, তিনি পরিচিত একজন। যার প্রশ্ন ছিল- নাম, খ্যাতি, স্বীকৃতি; অনেক কিছুই তো পেয়েছ, তাহলে এই ভয়ংকর সময়েও কেন কাজে ডুবে থাকা? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আমাকে এক মুহূর্ত ভাবতে হয়নি। কারণ, আমরা যারা শিল্পী, তারা ভালোভাবেই জানি, আমরা কেন দিন-রাত একাকার করে মানুষের জন্য কাজ করে যাই। মানুষের মনের ক্ষত মুছিয়ে দিতে, আনন্দের জোয়ারে ভাসাতেই আমরা নানা আয়োজন করি। বিনিময়ে পাই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সম্মান, স্বীকৃতি। কেউ আবার কাজের সুবাদে নাম ও যশ দুটিই পেয়ে থাকেন। তাই যখন সবই আছে, তাখনও কাজে ডুবে থাকতে হয়। ভাবতে হয় দর্শক-শ্রোতার ভালো লাগা, মন্দ লাগা নিয়ে।
আমার কাছে থেমে থাকা মানেই হলো মৃত্যু। তাই নিজে যেমন হাসি-গান-আনন্দ-উচ্ছ্বাস আর সৃষ্টির নেশায় বিভোর হয়ে বাঁচতে চাই, তেমনি বেঁচে থাকার আনন্দটা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। জানাতে চাই, জীবন মানে কিছু প্রয়োজন মিটিয়ে চলা নয়, এর প্রতিটি পৃষ্ঠায় কী আছে, তা যাচাই করে দেখার নামই জীবন। তাই তো স্বাধিকারের জন্য কখনও যুদ্ধ করি, অধিকার আদায়ের আন্দোলনে পথে নামি, মানবিকতার নজির তুলে ধরে জীবন বিসর্জন দিই কিংবা মানুষের মুখে একচিলতে হাসি ফোটাতে নিরলস কাজ করে যাই আমরা। এভাবে অনেক কিছুই করি। কারণ আবারও বলি, থেমে থাকার অবকাশ নেই, থেমে থাকা মানেই মৃত্যু।’
বিদ্যা সিনহা মিম এভাবে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেবেন, স্বপ্নেও ভাবিনি। তবে যেভাবেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হোক, তার কথায় এটা স্পষ্ট যে, করোনার এই মহামারিতেও চুপচাপ বসে নেই তিনি। জনসচেতনতা গড়ে তুলতে নানা ধরনের বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। অসহায়দের সাহায্য-সহযোহিতাও করছেন সাধ্যমতো। সামাজিক দায়িত্ব পালনের মতো করেই এসব করছেন। আর তা নিয়ে আলাদা করে কিছু বলতেও চান না। আমরা তাই এ বিষয়টি নিয়ে আর কথা বাড়াইনি। বরং জানতে চেয়েছি, নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলে দর্শকের জন্য নানা ধরনের আয়োজন করা নিয়ে। অনেকেই এর মধ্য জেনে গেছেন, বিদ্যা সিনহা মিম স্বনামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন।
যেখানে “মিম’স কাস্টডি” নামের একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন তিনি। এ ছাড়া ‘কানেকশন’ নামের একটি ছবি উন্মুক্ত করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি এ ছবির প্রযোজনাও করেছেন মিম। করোনায় সবাই যখন ঘরবন্দি, ঠিক সেই সময়ে ভিন্ন ধরনের দুটি আয়োজনের মধ্য দিয়ে উপস্থাপক ও প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন তিনি। সবাই যাকে ‘দুঃসময়’ বলছেন, ঠিক সেই সময়ে এমন কিছু করার পরিকল্পনা মাথায় এলো কীভাবে? এই ছিল আমাদের প্রশ্ন। এই প্রশ্নের সঙ্গে আরও একজনের প্রশ্ন মিলিয়ে দুটি প্রশ্নের উত্তর একসঙ্গে দিয়েছেন মিম। জানিয়েছেন, কোন উদ্দেশ্যে তার এখনকার আয়োজন।
বিশ্ব পরিস্থিতি যেমনই হোক, মিম যেমন তার ভক্ত-অনুরাগীর কথা মাথায় রেখে নানা আয়োজনে ব্যস্ত আছেন, তেমনই নিজের শিল্পী সত্তাকে খুশি রাখতে মানের বিষয়েও বিন্দুমাত্র ছাড় দেননি। তাহসানের বিপরীতে অভিনীত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং অনলাইন সেলিব্রেটি শো “মিম’স কাস্টডি” তার বড় প্রমাণ। ঘরবন্দি সময়ে নতুন পরিচয়ে দর্শকের সামনে উপস্থিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মিম বলেন, ‘আগে থেকেই স্বপ্ন ছিল নিজের নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলার। করোনার জন্য বাসায় ছুটি কাটাচ্ছিলাম। তখনই ভেবেছি, এই সময়টা বসে না থেকে কোনো কাজে লাগানো যেতে পারে। নিজের কাজগুলো ভক্ত ও দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইউটিউব চ্যানেল খোলা যেতে পারে। সেই ভাবনা থেকেই স্বনামে ইউটিউব চ্যানেল খোলা। এরপর চ্যানেলের জন্য নতুন কী করা যেতে পারে তা ভাবতে গিয়েই স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নির্মাণের পরিকল্পনা। ছবির কাজ দিয়েই প্রযোজনায় এসেছি। তবে কাজ যেন ভালো হয় সেদিকে খেয়াল ছিল সবসময়। স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবিটি পরিচালনা করেছেন রায়হান রাফী। লকডাউনে আটকেপড়া দুই তরুণের নানা ঘটনা নিয়ে ছবিটি। দুই দিনে টানা ১৪ ঘণ্টা শুটিং করা হয়েছে ছবির। আর মিম’স কাস্টডি নিজের চ্যানেলের কথা ভেবেই করা।
প্রিয়জনদের সঙ্গে নানা বিষয় শেয়ার করছি, এতে নিজে একদিকে যেমন আনন্দ পাচ্ছি, তেমনি পাচ্ছি সৃষ্টির প্রেরণা।’ অনেক প্রতিবন্ধকতার মাঝেও মিম তার নতুন কাজগুলোয় মান ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মুঠোফোন ও প্রসাধনী পণ্যের বেশকিছু বিজ্ঞাপন এবং ‘বিউটি অ্যান্ড বুলেট’সহ কিছু ওয়েব সিরিজে মিমের অভিনয় দর্শকের মনোযোগ কেড়েছে। ‘পদ্ম পাতার জল’, ‘পাষাণ’, ‘ভালোবাসা এমনই হয়’, ‘আমার আছে জল’, ‘জোনাকির আলো’, ‘সুলতান’, ‘সাপলুডু’ ছবির পর মিম আরও পরিণতি, তার কাছে পরিণত শিল্পীর ছাপ উঠে আসছে- এমন মত অনেকের। তাই অনেকে আশা করেছেন, রায়হান রাফির পরিচালিত ‘পরান’ ও ‘ইত্তেফাক’ ছবিতে মিমকে আরও নতুনভাবে আবিস্কার করতে পারবেন তারা।
এ নিয়ে মিম বলেন, ‘আমার জন্য যাদের এমন প্রত্যাশা, তাদের কখনও নিরাশ করার চেষ্টা করব না। কারণ, অভিনয় বা মডেলিং যেটাই বলুন, প্রতিটি কাজে নিজেকে নতুন রূপে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। শিল্পীরা বেঁচে থাকেন তার কাজের মধ্য দিয়ে- এটা যখন থেকে বুঝছি, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জোয়ারে গা ভাসাব না। কী হবে, বাছ-বিচারের কারণে কাজের সংখ্যা কমে যাবে, এই তো? এর বেশি কিছু তো হবে না। কিন্তু আমি যদি বছরে একটি কাজও করি এবং তা যদি দর্শকের মনে ছাপ ফেলে তাহলে যে আত্মতৃপ্তি পাবো, তার সঙ্গে আর কোনো কিছুর তুলনা চলে না। খেয়াল করে দেখেছি, ভুল-ভ্রান্তিগুলো যখন কেউ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, তখন সব প্রচেষ্টা ম্লান হয়ে যায়। আমরা যারা মডেল বা অভিনেতা-অভিনেত্রী, তারা তো প্রতিটি কাজে শ্রম-ঘাম ঝরাই। দিনের পর দিন কষ্ট করে একেকটি কাজ শেষ করি। তাহলে সেটা কেন করি না, যা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনব হয়ে উঠছে। এসব ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেগুলো করব, যেখানে দর্শক নতুন এক মিমের দেখা পাবেন। আর তা করতে পারলেই পাবো খর রোদ্দুরের মাঝে এই মেঘ এই বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.