Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

বিয়ে ছাড়া পরিচালকের সঙ্গে বসবাস, পরে খু’ন হন এই অভিনেত্রী


অভিনয়ের টানে বেছে নিয়েছিলেন নায়িকার ক্যারিয়ার। নায়িকা জীবনে ওঠাপড়া এবং ব্যর্থতা তো ছিলই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছিলেন ভয়ঙ্কর পরিণতির। নৃশংসভাবে খু’ন করা হয়েছিল প্রিয়া রাজবংশীকে।

প্রিয়ার জন্ম ১৯৩৬’র ৩০ ডিসেম্বর। জন্মগত নাম ছিল ভিরা সুন্দর সিংহ। তার বাবা ছিলেন বন দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। সিমলায় পাহাড়ের কোলে দুই ভাইয়ের সঙ্গে বড় হয়েছিলেন ভিরা।

সিমলার কনভেন্ট স্কুল এবং কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন তিনি। পড়াশোনায় মেধাবী হওয়ার পাশাপাশি নাটকেও আগ্রহ ছিল ভিরার। মাত্র ন’বছর বয়সে প্রথম অভিনয় মঞ্চে। এর পর কলেজ জীবনেও বেশ কিছু ইংরেজি নাটকে অভিনয় করেছেন।

স্নাতক হওয়ার পরে ভিরা কিছু দিন কাটিয়েছেন লন্ডনের রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব ড্রামাটিক আর্ট-এও। সে সময় একটি ইংরেজি ছবিতে অভিনয়ের কথা হয়েছিল। কিন্তু শেষ অবধি ছবিটি আর তৈরি হয়নি।

সেই সময় লন্ডনে ২২ বছর বয়সি ভিরার ছবি তুলেছিলেন এক ব্রিটিশ ফটোগ্রাফার। সেই ছবি কোনও ভাবে এসে পৌঁছায় বলিউডে, চেতন আনন্দের কাছে। প্রযোজক-পরিচালক চেতন সে সময় তার নতুন ছবির জন্য নতুন নায়িকা খুঁজছিলেন।

ভিরার ছবি পছন্দ হল চেতনের। ১৯৬২ সালে ভিরাকে ‘হকীকত’ ছবির নায়িকা হিসেবে মনোনীত করেন দেব ও বিজয় আনন্দের দাদা চেতন আনন্দ। তিনি ভিরার নাম পাল্টে দেন। নতুন নাম হয় প্রিয়া রাজবংশ।

‘হকীকত’ ছবিটি বক্সঅফিসে সুপারহিট হয়। ভারতীয় ছবির ইতিহাসে এই ছবিটিকে অন্যতম সেরা ছবি বলা হয়। ছবির পরিচালক-নায়িকার সফল রসায়ন কার্যকর হয় পর্দার বাইরেও। বয়সে ২১ বছরের ব্যবধান দূরে সরিয়ে একে অন্যের প্রেমে পড়লেন চেতন আনন্দ এবং ভিরা।

১৯৬৪ থেকে ১৯৮৬ অবধি বাইশ বছরে মাত্র সাতটি ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রিয়া। প্রত্যেক ছবির পরিচালকই ছিলেন চেতন আনন্দ। ‘হকীকত’ ছাড়া বাকি ছবিগুলি হল ‘হাথো কি লকীড়েঁ’, ‘কুদরত’, ‘সাহেব বাহাদুর’, ‘হাসতে জখম’, ‘হিন্দুস্তান কি কসম’ এবং ‘হীর ঝঞ্ঝা’।

চেহারা এবং উচ্চারণে পাশ্চাত্য প্রভাব থাকায় বলিউডে জনপ্রিয় নায়িকা হয়ে উঠতে পারেননি প্রিয়া। চেতনের ছবি ছাড়া অন্য কারও নির্দেশে কাজ করার বিশেষ ইচ্ছেও দেখাননি তিনি। গতানুগতিক বলিউডি নায়িকার বাইরে প্রিয়া যুক্ত থাকতেন ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজেও।

চেতন-প্রিয়া দীর্ঘ দিন ধরে লিভ ইন সম্পর্কে ছিলেন। তার সঙ্গে আলাপের আগেই স্ত্রী উমার সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল চেতনের। কিন্তু তার দুই ছেলে কেতন ও বিবেক আনন্দ কিছুতেই এই সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি।

মুম্বাইয়ের জুহুতে চেতন আনন্দের রুইয়া পার্কের বাংলোয় থাকতেন দু’জনে। তবে প্রিয়ার নিজস্ব সম্পত্তিও কিছু কম ছিল না মুম্বাইয়ে। মুম্বাইয়ের অভিজাত এলাকায় একটি বাড়ি ও বাংলোর পাশাপাশি চণ্ডীগড়ে ছিল পৈতৃক বাড়ি। তার দুই ভাই কমলজিৎ লন্ডনে এবং পদ্মজিৎ থাকতেন আমেরিকায়।

১৯৯৭ সালের ৬ জুলাই ৮২ বছর বয়সে মারা যান চেতন আনন্দ। তার মৃ’ত্যুর পরে দেখা যায় তিনি দুই ছেলের সঙ্গে প্রিয়াকেও সম্পত্তির সমান ভাগ দিয়ে গিয়েছেন। এখানেই তীব্র হয় বিবাদ। জুহুর বাংলো বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন প্রিয়া। কিন্তু বাধা দেন এর বাকি দুই অংশীদার, চেতনের দুই ছেলে।

সে সময় বাংলোর বাজারদর ছিল প্রায় ১ কোটি টাকা। ২০০০ সালের ২৭ মার্চ ওই বাংলোয় নিথর অবস্থায় পাওয়া যায় প্রিয়াকে। তার দুই ভাই এবং টেলিভিশন অভিনেতা সুরেশ আরুমুগম অভিযোগ করেন, তাকে খু’ন করা হয়েছে। তদন্ত শুরু করে পুলিশে গ্রেফতার করে কেতন ও বিবেক আনন্দকে।

খু’নের ষ’ড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ওই বাংলোর এক পরিচারক ও এক পরিচারিকাকে। এই মামলায় দুই আনন্দ ভাইয়ের দাবি ছিল, বাথরুমে পড়ে গিয়ে মৃ’ত্যু হয়েছে প্রিয়ার।

মামলার টানাপড়েনে খু’নের সাক্ষ্য হিসেবে পেশ করা হয় চেতন আনন্দের ভাই বিজয়কে লেখা প্রিয়ার একটি চিঠিও। মৃ’ত্যুর কয়েক দিন আগে সেই চিঠিতে প্রিয়া লিখেছিলেন, তিনি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

এই মামলায় কেতন ও বিবেক দোষী সাব্যস্ত হন। খু’নের ষ’ড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অপরাধে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। খু’ন করার অপরাধে পরিচারক ও পরিচারিকারও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। পরে অবশ্য ২০০২’তে চার জন হাইকোর্টে জামিনে মুক্তি পান।

প্রিয়ার দুই ভাইয়ের অভিযোগ, তাদের বোনের জীবনের এই করুণ পরিণতির জন্য দায়ী পরিচালক চেতন আনন্দই। তিনি যেমন প্রিয়াকে অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছিলে, আবার তিনিই নাকি প্রিয়াকে অন্য পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে দেননি। চেতনের ছায়া থেকে বের হতে না পারার মাশুল প্রিয়াকে দিতে হয়েছিল নিজের জীবন দিয়ে।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.