Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

বর্গাচাষি বাবার কন্যা মারুফা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে


দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে চলমান অনূর্ধ্ব-১৯ নারী বিশ্বকাপে গ্রুপ সেরা হয়ে সুপার সিক্সে ওঠে বাংলাদেশ। এরপর সেমির আশাও জাগায়, যদিও সেই পর্যায়ে যাওয়া হয়নি। তবে, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে হারিয়ে চমক দেওয়া দলটির মেয়েরা প্রশংসা পাচ্ছে দেশে-বিদেশে।

নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ এ দলটির অন্যতম সদস্য পেসার মারুফা আকতার। বল হাতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন প্রতিটি জয়ে। দরিদ্র পরিবারে আহার যোগাতে একসময় বাবার সঙ্গে সংসারের হাল ধরেছিলেন মারুফা। এখন সেই মারুফা বল হাতে ধরেছেন দেশের হাল, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বাংলাদেশকে। এই পর্যায়ে আসার পেছনে মারুফার রয়েছে এক সংগ্রামী জীবনের গল্প।

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার দরিদ্র কৃষক আইমুল্লাহর ছোট মেয়ে মারুফা। বর্গাচাষি বাবা আর গৃহিনী মায়ের সংসারে তারা চার ভাই-বোন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ভালো ফুটবল খেললেও ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলতে শুরু করেন ক্রিকেট। সেই থেকে ভালো লাগা। প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিকেএসপিতে, খেলেছেন বিভিন্ন ক্লাব ও দলে। জাতীয় দলেও ডাক পেয়েছেন অনেক আগেই।

২০২১ সালে করোনা মহামারির সময় ক্রিকেট খেলা বন্ধ থাকায় বাবা আইমুল্লাহর সঙ্গে বর্গা নেয়া জমিতে হালচাষ করার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসেন মারুফা।

অভাব-অনটনের সংসারে দুবেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকাই যেখানে সংগ্রামের মতো, সেখানে ক্রিকেট খেলা বিলাসিতা মনে হয়েছিল মারুফার। করোনার সময় পারিবারিক দুরবস্থায় ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার কথাও ভাবতে হয় মারুফাকে। তবে এগিয়ে আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তাদের সহযোগিতায় ফিরে যান আগের ঠিকানা বিকেএসপিতে। বছর না পেরোতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক নৈপুণ্য দেখিয়ে ১৯ বছর বয়সেই ডাক পান জাতীয় দলে।

মারুফা এখন দক্ষিণ আফ্রিকাতে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন বিশ্বকাপের মঞ্চে। অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কার মতো দলকে হারিয়ে সুপার সিক্সে ওঠে লাল-সবুজরা। তিন ম্যাচে দলের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হন মারুফা।

দারিদ্র্য আর অভাব- মারুফা আকতার তার ছোট্ট জীবনে, এই শব্দগুলোর সঙ্গে বেশি পরিচিত। তবে মানুষ যে স্বপ্নের সমান বড়। তাই তো শত সীমাবদ্ধতা ও প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে মারুফাও নিজের স্বপ্নকে তাড়া করে চলেছেন প্রতিনিয়ত।

মারুফা আকতারের উৎসাহদাতা ও ক্রিকেট গুরু দুটোই বড় ভাই আলামিন। তার হাত ধরে ক্রিকেট খেলতে যেতেন তিনি। খেলতেন চাচাতো-মামাতো ভাইদের সঙ্গে। মারুফার পেস বোলিং মোকাবিলায় হিমশিম খেত ছেলেরাও।

ঢাকা পোস্টকে মারুফা বলেন, অভাব অনটনের কারণে করোনাকালে ক্রিকেট খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলাম। তবে বিসিবির সহযোগিতায় আজ এতদূর আসতে পেরেছি। বিসিবির অনুদান না পেলে করোনার প্রথম ওয়েভের সময়ই থমকে যেত স্বপ্ন। ছোট বেলা থেকে কৃষিকাজে বাবাকে সাহায্য করতাম। করোনাকালে বাড়িতে অবস্থান করায় পুরো সময় বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করেছিলাম। সেই সঙ্গে আমার বড় ভাই আল-আমিনের সাথে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে নিয়মিত অনুশীলন করেছি। সবাই দোয়া করবেন দেশকে যেন ভালো কিছু দিতে পারি।

একসময় মেয়েকে ক্রিকেট খেলতে বারণ করতেন আর এখন সেই মেয়েকে নিয়েই নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন মারুফার বাবা-মা। তাদের প্রত্যাশা ব্যাট-বল দিয়ে নিজ গ্রামকে বিশ্বমঞ্চে চেনাবেন মারুফা।

মারুফার বাবা আইমুল্লাহ বলেন, ছোটবেলা থেকে অনেক কষ্ট করে আমার মেয়েটা বড় হয়েছে। আশা করি সে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে। গ্রামবাসীর জন্য সুনাম বয়ে আনতে পারবে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.