Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সব বাধাকে উপেক্ষা করে প্রবাসের মায়াকাজল


sভারত থেকে বৈধপথে ইউরোপ, আমেরিকায় যাওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু বেআইনি পথেও যাচ্ছেন হাজারো মানুষ। চরম কষ্টের মধ্যে পড়ছেন তারা।

প্যারিসে একটি ঘটনার কথা বলি। আইফেল টাওয়ারের একটু দূরের রাস্তায় হাঁটছি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফ্রান্সের কিছু স্মারক বিক্রি করছেন বেশ কয়েকজন যুবক। আইফেল টাওয়ারের মিনি সংস্করণ থেকে শুরু করে নানা ধরনের ফ্রিজ ম্যাগনেট ও অন্য জিনিস।

চেহারা দেখে বোঝা যাচ্ছে, উপমহাদেশের মানুষ। তার হাতের জিনিসগুলির দিকে তাকিয়ে আছি দেখে বিক্রেতার প্রশ্ন, ইন্ডিয়ান? হ্যাঁ, বলতেই হিন্দিতে বললেন, কী নেবেন বলুন। দাম কম করে দেব। দেশের লোক বলে কথা! জিজ্ঞাসা করলাম, বাড়ি কোথায়? জবাব এলো, হরিয়ানা।

প্রশ্ন, বৈধ কাগজপত্র আছে? জবাব, পাগল নাকি! তাহলে? মাঝে মধ্যেই পুলিশ তাড়া করে। পালাই। ধরা পড়ে গেলে, আদালতে চুপ করে বসে থাকি। দেশ কোথায় জানতে চাইলেও জবাব দিই না। এখানকার পুলিশ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার লোকের মধ্যে ফারাক করতে পারে না। ফলে এখানে আমি দেশহীন। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়েই ছুট লাগালেন তিনি। বুঝলাম, পুলিশ দেখতে পেয়েছেন। এভাবেই থাকবেন তিনি। বিদেশি মরীচিকা তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াবে।

২০০৯ সালে ইউএনওডিসির হিসাব ছিল, প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষ শুধু পাঞ্জাব থেকে বেআইনিভাবে বিদেশ যান। তাদের সব চেয়ে পছন্দের জায়গা যুক্তরাজ্য, আমেরিকা এবং কানাডা। আর ইউরোপের মধ্যে যুক্তরাজ্যের পর রয়েছে ইতালি ও জার্মানি।

সুষমার কথায় ফিরি। প্রয়াত সুষমা এই বেআইনি বিদেশযাত্রা বন্ধ করা নিয়ে বহু ভাবনাচিন্তা করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য নথিভুক্ত সংস্থা আছে। এই দালালরা একটি সংস্থা খোলে, তারপর বেআইনি পথে একটি গ্রুপকে পাচার করে দিয়েই তা বন্ধ করে দেয়।

তারপর নতুন সংস্থা খোলে। এভাবে বিদেশ পাচার করতে ২৫ থেকে ৩৫ লাখ টাকা নেয় দালালরা। কখনো তারও বেশি। জমি-জমা, ঘটি-বাটি বন্ধক রেখে বা বিক্রি করে সেই অর্থ জোগাড় করে আগ্রহীরা। তারপর দীর্ঘ সমস্যা সঙ্কুল বিপজ্জনক যাত্রা। শেষ পর্যন্ত বিদেশে পৌঁছাতে পারবেন কিনা, তা জানা নেই।

হয়ত সর্বস্বান্ত হবেন, জেলে যাবেন, নৌকাডুবি হয়ে মারাও যেতে পারেন। তা সত্ত্বেও বিদেশের মায়াকাজল যাদের চোখে লেগে যায়, সে এসব বাধাকে উপেক্ষা করে। পাগলের মতো বিদেশ যেতে চায় বেআইনিপথে। আর তারপর বিপদে পড়লে তখন পরিবার এসে ধরে মন্ত্রীকে।

অথচ, সোজা পথেই তো যাওয়া যায়। যাচ্ছেনও হাজার হাজার মানুষ। কেউ লেখাপড়ার জন্য, কেউ চাকরি করতে। দিল্লির একটি এডুকেশন কনসালটেন্ট কোম্পানির হিসাব, এই বছর তাদের কাছে হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী এসেছে, বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য। করোনার মধ্যে বিদেশে পড়তে যাওয়ার হিড়িক বিন্দুমাত্র কমেনি।

ওই সংস্থায় যারা আসেন, তাদের প্রায় সকলেই সুযোগ পেয়েছেন বা পেয়ে যাবেন। এটাই তাদের রেকর্ড। দিল্লিতে এই ধরনের প্রচুর কনসালটেন্ট কোম্পানি আছে। ফলে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী বিদেশমুখি। সেখানে পড়ার পরেই বা পড়তে পড়তেই চাকরির হাতছানি। ওই কোম্পানির তথ্য বলছে, পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতেও ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীরা পড়তে যান। তবে অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্যের তুলনায় কম। বিদেশি ডিগ্রি, চাকরির সুযোগের লোভ তো আছেই, সেই সঙ্গে আছে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ। আর বিদেশে যে শুধুই খুব মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা যায় এমন নয়, সব মেধার ছাত্রছাত্রীই যায়।

সকলে তো আর হার্ভার্ড বা অক্সফোর্ড বা ক্যামব্রিজে পড়বে না। মাঝারি বা সাধারণ মানের কলেজও আছে। সেগুলিও আমাদের দেশের কলেজের তুলনায় ভালো বলে তাদের দাবি। পড়তে যাওয়ার জন্য এডুকেশন লোনও আছে। তাই ক্রমশ খুবই জনপ্রিয় হচ্ছে বিদেশে পড়তে যাওয়া।

আমার এক বন্ধুই তার দুই মেয়েকে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে পড়তে। একজন কানাডায়, অন্যজন যুক্তরাাজ্যে। এডুকেশন লোন নিয়ে পড়তে গেছে তারা। চাকরি নিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যাও কম নয়। ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত এই দশ বছরে ভারত থেকে শুধু আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যে গেছেন এক লাখ ৩১ হাজার মানুষ।

ইউরোপের অন্যদেশ মেলালে সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি। কেরলসহ দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে আবার মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। তাই বেআইনিপথে যত মানুষ বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করেন, বৈধভাবে যাওয়া মানুষের সংখ্যা তার থেকে খুব একটা কম নয়।

তা হলে বেআইনিপথে যাওয়ার চেষ্টা করেন কেন এত মানুষ? কারণ, বেআইনিভাবে তারাই যান, যারা পেশাদার নন, পড়তে যাওয়ার মতো মেধার অধিকারী নন। তাদের হাতে কিছুটা পয়সা আছে। আর খেটে খেতে পরেন। বিদেশের মায়াকাজল তাদের পাগল করে দেয়। তাদের মনে হয়, বিদেশে একবার পৌঁছাতে পারলেই হলো।

তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। ভবিষ্যতের চিন্তা করতে হবে না। এক অলৌকিক স্বপ্নের পেছনে দৌড়ান তারা। বোধবুদ্ধি চলে যায়। বুঝতে পারেন না, বেআইনি পথে বিদেশ যাওয়ার থেকে স্বভূমিতে থেকে যাওয়া অনেক মর্যাদার, অনেক বেশি শ্রেয় এবং উচিত কাজ। বিদেশের মরীচিকা একবার হাতছানি দিলে খুবই মুশকিল। সূত্র: ডয়েচে ভেলে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.