Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

পেঁয়াজু বিক্রি করে ‘কোটিপতি’ দেড় লাখ টাকাও বিক্রি হয় একদিনে!


গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর বাসস্ট্যান্ডের ফলপট্টিতে পেয়াজুর এক বিশাল সম্ভার। দোকনটি মাসুদের। পুরো নাম মো. মাহফুজুর রহমান মাসুদ খান। গাজীপুর জেলার বরইতলীর বাসিন্দা তিনি।পেঁয়াজু ছাড়াও মাসুদের ঐ দোকানে পাওয়া যায় বেগুনি, আলুর চপ ও সেদ্ধ ছোলা। সারাদিন ভিড়বাট্টা লেগেই আছে তার দোকানে। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে ২০-২৫ জন কর্মচারী সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন মাসুদের দোকানে।

মাসুদের পেঁয়াজুর এই স্বাদে মোহিত হয়ে কালিয়াকৈর ছাড়াও গাজীপুরের নানা অঞ্চল, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, ময়মনিসংহ, জামালপুর এমনকি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা এসে পেঁয়াজু কিনে নিয়ে যান।

প্রথমে ২ টাকা দরে পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করেন মাসুদ। বর্তমানে তা ১০ টাকা। জানা যায়, প্রতিদিন ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকার পেঁয়াজু বিক্রি হয় মাসুদের দোকানে। শুক্রবার সাপ্তাহিক হাটের দিন হওয়ায় সেদিন দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বেচা-বিক্রি হয় বলেও জানিয়েছেন দোকানের ম্যানেজার ওমর উদ্দিন।

প্রায় ৩০ বছর ধরে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন মাসুদ। ধীরে ধীরে বড় হয়েছে ব্যবসা। এখন শুধু কর্মচারীর বেতনই দিচ্ছেন মাসে ছয় লাখ টাকা। শুধু পেঁয়াজু বিক্রি করেই মাসুদ হয়েছেন কোটিপতি।

১৯৯২ সালে মাত্র ৩০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ফুটপাতে পেঁয়াজুর ব্যবসা শুরু করেছিলেন মাসুদ। এই ব্যবসা করেই জমি কিনে নির্মাণ করেছেন পাকা দালান, বিয়ে দিয়েছেন তার ৬ বোনকে।

মাসুদের দোকানে পেঁয়াজু খেতে আসা নার্সিং কলেজের ছাত্র শাওন বলেন, ‘প্রথমে কালিয়াকৈরে আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে এই পেঁয়াজুর কথা শুনি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও দেখে আমার আগ্রহ হয়।

আমি প্রায় ৩০০ কি.মি. দূরে লালমনিরহাট থেকে এসেছি। পেঁয়াজু খেয়ে আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। এত দূর থেকে আসা সার্থক হয়েছে। পেঁয়াজুর এত স্বাদ এর আগে আমি আর কোথাও পাইনি।’

নার্সিং কলেজের আরেক ছাত্রী ফারজানা বলেন, ‘আমি ফেসবুকে এই পেঁয়াজুর বিষয়টি দেখে এখানে খেতে এসেছি। আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে এবং মনে হয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত।’

কালিয়াকৈর রেমন্ড টেইলার্সের মালিক খুশি বলেন, ‘আমার এক বউদি উত্তরা দিয়াবাড়ী থাকেন। তিনি মাঝে মাঝেই এখান থেকে পেঁয়াজু কিনে নিয়ে যান।’

মাসুদের দোকানের কারিগর আইয়ুব আলী বলেন, ‘১০ বছর ধরে এই দোকানে পেঁয়াজুসহ নানা ভাজাপোড়া তৈরি করছি। আমার মাসিক বেতন ৩০ হাজার টাকা। তবে রমজান মাসে ৪০ হাজার টাকা পাই। আমাদের পেঁয়াজু স্বাদ হওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে। আমরা নিজেদের বানানো কিছু মসলা ব্যবহার করি, তাই এত বেশি স্বাদ হয়।

সেই বিশেষ মসলার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘এগুলো বলা যাবে না।’

আরেক কারিগর দুলাল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পেঁয়াজুসহ নানা খাবার তৈরি করি। প্রতি মাসে নিয়মিত বেতন পাই। আসলে সারা বছরই আমাদের বেচাকেনা ভালো হয়। এজন্য আমরা সবাই খুশি।’

কারিগর নাহিদ হোসেন বলেন, ‘তিন বছর ধরে চাকরি করছি। ১৮ হাজার টাকা বেতন পাই। পরিবার নিয়ে খুব সুন্দরভাবে জীবনযাপন করছি।’

দোকানের ম্যানেজার ওমর উদ্দিন বলেন, ‘২২ বছর ধরে এই দোকানে চাকরি করছি। এই চাকরি করে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তিনতলা বাড়ি করেছি। মাসে এখান হতে ৪৫ হাজার টাকা বেতন পাই, বেতন-ভাতাসহ কোনো কোনো মাসে ৫০ হাজার টাকাও পাই।

প্রতিদিন ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। শুক্রবার ১ লাখ টাকার উপরেও বিক্রি হয়, রমজান মাসে দেড় লাখ টাকার বেশিও বিক্রি হয়। ক্রেতার ভিড়ে মাঝে মাঝে দুপুরে খাবার যেতে পারি না।’

দোকানের মালিক মাসুদ খান বলেন, ‘৩০ বছর আগে ফুটপাতে পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করি। আমার পেঁয়াজুর বিশেষত্ব হলো পেঁয়াজের সঙ্গে অল্প ময়দা, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া পাতা এবং বিশুদ্ধ সয়াবিন তেল দিই। পুরোনো তেল দিয়ে কখনো পেঁয়াজু ভাজি না। আমাদের এখানে ভেজাল কোনো খাবার দেওয়া হয় না। আমাদের নিজস্ব তৈরি কিছু মসলা ব্যবহার করে থাকি।’

তিনি আরও বলেন, ‘পেঁয়াজুর সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। একটা সময় অনেক কষ্ট করেছি কিন্তু হাল ছাড়িনি। এই ব্যবসা করে বোনদের বিয়ে দিয়েছি, হোটেল করেছি, বাড়িতে বিল্ডিং করেছি। ২৫ জন কর্মচারি-কারিগর নিয়মিত কাজ করছেন। এ ছাড়া দৈনিক মজুরিভিত্তিতে কিছু নারী কারিগর রয়েছেন। সবমিলিয়ে প্রতি মাসে তাদের ছয় লাখ টাকা বেতন দিই।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.