Beanibazarview24.com
বিশ্বের মানুষের কাছে আমেরিকা স্বপ্নের দেশ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবছর শত-সহস্র মানুষ দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় আসার চেষ্টা করেন। কেউ সফল হন, কেউবা ধরা পড়েন ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট পুলিশের হাতে। গত এক বছরে লুইজিয়ানা সীমান্তেই দুই শতাধিক বাংলাদেশি আ.ট.ক হয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে আ.ট.ক হওয়ার পর বাংলাদেশি ছয় তরুণ সম্প্রতি নিউইয়র্কে ফিরেছেন। নাম ও পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এসব বাংলাদেশি তরুণ জানিয়েছেন, তারা সীমান্তে আ.ট.ক হওয়ার পর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। তাদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন প্র.ত্যা.খ্যা.নে.র পর তারা কারাগারে ছিলেন দীর্ঘদিন। সম্প্রতি আদালত থেকে জামিন নিয়ে মুক্ত হয়েছেন। এ জন্য প্রত্যেককে ৫ হাজার ডলার করে বন্ড দিতে হয়েছে। তবে বন্ডের অভাবে অনেকেই কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন ওই তরুণেরা।
এ বিষয়ে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করলে রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম জানান, এ ধরনের খবর দূতাবাসের কাছে নেই। তবে পরবর্তীতে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন হলে তিনি তা করবেন বলে জানান।
বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী জানান, সীমান্তে দুই শতাধিক বাংলাদেশি ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে আটক রয়েছেন বলে আমরা অনানুষ্ঠানিকভাবে জানতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত কেউ বাংলাদেশ সোসাইটির সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে কেউ প্রয়োজনীয় সহায়তা চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে সবধরণের সহযোগিতা করা হবে।
সম্প্রতি নিউইয়র্কে ফেরা তরুণেরা জানিয়েছেন, প্রায় এক বছর আগে দালালের মাধ্যমে ব্রাজিলের ভিসা নিয়ে তারা আমেরিকার লুইজিয়ানা সীমান্তে আসেন। প্রায় আড়াই মাস বনে-জঙ্গলে কাটিয়ে এপ্রিল মাসে তারা লুইজিয়ানা সীমান্তে পৌঁছান। যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে প্রবেশের পর তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইস) হাতে আটক হন। এরপর তাদের ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অন্য অভিবাসী প্রত্যাশীদের সঙ্গে বহু বাংলাদেশি তরুণদের দেখেছেন, যারা বিভিন্ন সময় আইসের হাতে আ.ট.ক হয়েছেন।
তরুণেরা আরো জানান, করোনা মহামারির কারণে তাদের মুক্তি পেতে বিলম্ব হয়েছে। কিন্তু করোনা তাদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশকে ত্বরান্বিত করেছে। এর কারণ হিসেবে তারা মনে করেন, যারা যেহেতু ব্রাজিল হয়ে এসেছেন, এ জন্য আইস এজেন্টরা তাদের কাছে আসতে চাইত না। অন্য সময় হলে সীমান্তেই হয়তো তাদের আটকে দেওয়া হতো। তবে নিজেদের ভুলের কারণে বাংলাদেশি অনেক তরুণকে ডিপোর্ট করা হয়েছে বলে জানান।
তারা বলেন, যাদের কাছে পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট পাওয়া গেছে, আদালত কর্তৃক রাজনৈতিক আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্রুত বহিষ্কার করে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব বাংলাদেশি ভিটেমাটি বিক্রি করে ২৫-৩০ লাখ টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে আমেরিকায় রওনা হয়েছিলেন। বন-জঙ্গল, মরুভূমি ও সাগর পাড়ি দিয়ে তারা বিভিন্ন উপায়ে স্বপ্নের দেশে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে নিজেদের ভুলে সর্বস্ব খুইয়ে শূণ্যহাতে দেশে ফিরতে হয়েছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.