Beanibazarview24.com
প্রায় ১৭০ বছর আগের কথা, ১৮৫২ সালে অন্য এক জগতের অস্তিত্ব ঠাহর করা গিয়েছিল। ইতালির জ্যোতির্বিজ্ঞানী আনিবেল দি গাসপারিস প্রথম সেটি আবিষ্কার করেন। শুরুতে আর পাঁচটা মৃতপ্রায় গ্রহাণুর সঙ্গে সেটিকে গুলিয়ে ফেলেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, ততই মোহময়ী রূপে ধরা দিয়েছে প্রাণহীন সেই গ্রহাণু। সেই ১৬-সাইকির গায়ে আঁচড় কাটতে চলেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৭ কোটি কিলোমিটার দূরে মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মাঝামাঝি অবস্থান করছে এই গ্রহাণু। ২০২২ সালের অগস্টে এই গ্রহাণু অভিযানে নামছে নাসা। নাসার মহাকাশযানের পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে তিন বছর। ২০২৬-এর শুরুর দিকে ওই গ্রহাণু থেকে মূল্যবান ধাতু সমৃদ্ধ চাঙর তুলে এনে গবেষণাই আপাতত লক্ষ্য বিজ্ঞানীদের।
প্ল্যাটিনাম, সোনা, লোহা, তামা-সহ একাধিক বহুমূল্য ধাতুতে ঠাসা এই গ্রহাণু। এ বার পৃথিবীর বুকে সেই সম্পদের ভাণ্ডারকে নামিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু করে দিলেন বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, ওই গ্রহাণুর এক একটি টুকরোয় বিশ্বের সবাই কোটিপতি হয়ে যেতে পারেন! মহাশূন্যে সন্ধান মিলেছে বহু আশ্চর্য জগতের। এরই একটি ১৬-সাইকি।
নাসা জানিয়েছে, গ্রহ হিসেবে একটু একটু করে গড়ে ওঠার পথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় কক্ষপথ থেকে বিচ্যূত হয়ে অন্যদের সঙ্গে ধাক্কা লেগে সেটি মৃত অবস্থায় ভাসছে মহাশূন্য। প্যাসাডিনার ক্যালটেক গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, ৫০ মেগাপিক্সেল রেজোলিউশনের যে ছবি তাদের হাতে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে গ্রহাণুপৃষ্ঠটি ধাতুতে মোড়া।
মাত্র গ্রহাণুটি মাত্র ২০০ কিলোমিটার চওড়া। তার কলবরে জমা বহুমূল্য ধাতুর। যার বাজারমূল্য হরেদরে প্রায় ১০ হাজার কোয়াড্রিলিয়ন, অর্থাৎ ১০ লাখ কোটি ডলার। গোটা গ্রহাণুটিকে ভেঙে ভেঙে নিয়ে এসে বণ্টন করে দিলে, পৃথিবীর ৭৭০ কোটি মানুষের প্রত্যেকে মাথা পিছু কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবেন।
১৬-সাইকি গ্রহাণুর শরীরে প্ল্যাটিনাম, সোনা, নিকেল, লোহা, তামা-সহ একাধিক বিরল প্রকৃতির ধাতুর হদিশ পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে গ্রহাণুটি সম্পর্কে এখনও পুরোপুরি ধাঁধা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। নাসার মহাকাশযান পৌঁছলে আরো অনেক রহস্যের উদঘাটন হবে বলে আশাবাদী তারা। তাই একটানা ২১ মাস ধরে নাসার মহাকাশযান গ্রহাণুটিকে পর্যবেক্ষণ করবে। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাবে। তাতে আরো একটি বিষয়ে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। তারা জানিয়েছেন, নাসার মহাকাশযান পৌঁছালে গ্রহাণুটির আসল বয়সও নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। বোঝা যাবে, সেটি পৃথিবীর সমবয়সি নাকি তার চেয়েও প্রবীণ।
প্ল্যানেটারি সায়েন্স জার্নালে এরইমধ্যেই ১৬-সাইকি সম্পর্কিত বিশদ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এখনও পর্যন্ত যা যা তথ্য সামনে এসেছে, তা জড়ো করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে নাসা। চিলির বিজ্ঞানীদের দাবি, গ্রহাণুটির ভূপৃষ্ঠের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ নিশ্চিত ভাবে বহুমূল্য ধাতুর মোটা চাদরে ঢাকা। তার বুকে জমা হওয়া পাথরের মতো চাঁইগুলোও ধাতুতে ঠাসা। নাসার মহাকাশযান পৌঁছালেই এ ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে আশাবাদী তারা।
তবে এত দিন মহাকাশ অভিযান যেখানে প্রাণের সন্ধানে এবং জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে বার করার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে এই সম্পদ অভিযান নিয়ে আপত্তিও উঠতে শুরু করেছে। এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত নাসার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী তথা অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড স্পেস এক্সপ্লোরেশনের অধ্যাপক লিন্ডি এলকিন্স ট্যান্টন নিজেই মহাকাশ থেকে এই সম্পদের ভাণ্ডারকে পৃথিবীতে আনার বিপক্ষে।
লিন্ডির মতে, এখনো পর্যন্ত ১৬-সাইকি গ্রহাণুর মতো অত্যাশ্চর্যজনক দ্বিতীয় কিছু মেলেনি। এই প্রথম তার অন্তঃস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। কাছাকাছি পৌঁছাতে পারলেই গ্রহাণুটি সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে। তবে সেখান থেকে বহুমূল্য ধাতু নিয়ে আসা শুরু হলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ধস নামবে।
লিন্ডির দাবি, ওই গ্রহাণু থেকে আহরিত সব ধাতুর মধ্যে শুধু লোহার মূল্যই হয়ত ১০ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এতে পৃথিবীতে যে লোহা রয়েছে, তার আর কোনো মূল্য থাকবে না। সোনা, প্ল্যাটিনাম, তামাও মূল্যহীন হয়ে যাবে। তাতে গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশাল ধস নামবে। সমস্ত দেশের সরকার, খননকার্যে যুক্ত ছোট-বড় সংস্থা, ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে যাবেন।
তবে ক্যালটেকের গ্রহবিজ্ঞান এবং জোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপিকা ক্যাথরিন দি ক্লিরের মতে, এমনও হতে পারে যে ধাতুগুলো সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ অবস্থায় নেই। গ্রহাণুর গোটা কলেবরে ভিন্ন ভিন্ন রূপে মিশে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে গ্রহের অন্তঃস্থল পরীক্ষার ক্ষেত্রেও এই অভিযান যুগান্তকারী হয়ে দাঁড়াতে পারে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.