Beanibazarview24.com
১৮ বছরে পা দিয়েছে তারেক মাসুদের সিনেমা ‘মাটির ময়না’। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই সিনেমার দুই চরিত্র আনু ও রোকনের কথা নিশ্চয় পাঠকের এখনো মনে আছে। তবে ছবিটির বয়স এত বাড়লেও আজকের এই জামানায় চলচ্চিত্রসংক্রান্ত কেউই মনে রাখেননি সিনেমাটিতে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া চরিত্র আনু’র (নুরুল ইসলাম) কথা।
সেই নুরুল ইসলাম এখন কামরাঙ্গীরচরে চায়ের দোকান করেন। সম্প্রতি তার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তার জীবনের কোথাও আর ‘সিনেমা, চলচ্চিত্র, মিডিয়া এসব শব্দাবলী নেই। তিনি ছিঁড়ে ফেলেছেন ‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্রের পোস্টার। নেই জাতীয় পুরস্কারের স্মারকটিও। এখন তিনি মনে করেন ‘মিডিয়া’ গরিবের জন্য নয়।
২০০২ সালে সিনেমাটি মুক্তির আগে তারেক মাসুদ তাকে সুবিধাবঞ্চিতদের এক স্কুল থেকে নিয়ে তার বাসায় আনেন। তাকে অভিনয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন এই নির্মাতা। ২০০২ সালে মুক্তি পাওয়া মাটির ময়নাই তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা। সিনেমার নির্মাণ শেষ হলেও তারেক মাসুদের বাসাতেই ছিলেন নুরুল। সেখানে অন্যান্য নির্মাতারাও আসতেন। তাদের কাছেও কাজ চেয়েছেন নুরুল। অনেকেই ‘দিব, দিচ্ছি’ বলে আর কাজ দেননি তাকে। পরে অভাবের সংসারে বড় ছেলের দায়িত্ব পালন করার নিমিত্তে মিডিয়া ছেড়ে চায়ের দোকান করাটাই শ্রেয় মনে হয় তার।
শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসিও না হওয়ায় চাকরি হয়নি। পরে ভ্রাম্যমাণ দোকান চালানো শুরু করেন তিনি। পরে পানের দোকানও দেন। সেটাও আলোর মুখ দেখেনি। গিয়েছিলেন কাতারেও। ভাগ্য তার সেখানেও ফেরেনি। জীবন সংগ্রামে তিনি বারংবার পর্যুদস্ত হয়ে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে চায়ের দোকানের টাকা ধার নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তবে এখন চায়ের দোকানটি থাকলেও সেখানেও ভাড়া বাকি তিন মাসের এবং সেই সঙ্গে রয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকার মতো দেনা।
একটি স্বনামধন্য গণমাধ্যম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের স্মারকটা কী করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পুরস্কার দিয়ে আর কী হইব? এই দেশে এই পুরস্কারের কোনো দাম আছে? থাকলে তো আমার লাভ হইত! অভিনেতা বলে কাউকে পরিচয় দিই না। নিজের কাছ লজ্জা লাগে।’
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.