Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

ফাঁ.সির মঞ্চে বললেন আমি খু.ন করিনি


দিনাজপুর জেলা কা.রাগার। ফাঁ.সির মঞ্চ প্রস্তুত। জল্লাদকেও অন্য একটি জেলা কা.রাগার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে দিনাজপুরে। আর কয়েক ঘণ্টা পরই ফাঁ.সির মঞ্চে আলো জ্বলবে। স্বাধীনতার পর দিনাজপুর জেলা কা.রাগারে এটিই প্রথম ফাঁ.সি কার্যকরের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করা হচ্ছে। এ কারণে আয়োজনটাও একটু বেশি। কোনো রকম ত্রুটি-বিচ্যুতি যেন না ঘটে। সে কারণে জেল কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপও একটু বেশি।

কা.রাগারে প্রথমবারের মতো এই ফাঁ.সির রায় কার্যকরের ঘটনাটি একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রস্তুত করা হয়েছে কা.রাগার। কিছুক্ষণের মধ্যেই জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন আসবেন। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। চলতি বছর ৯ জুন এভাবেই প্রস্তুত হচ্ছিল দিনাজপুর জেলা কা.রাগার। যাকে কেন্দ্র করে পুরো কা.রাগারে এমন কর্মচাঞ্চল্য, সেই ফাঁ.সির দ.ন্ডপ্রা.প্ত আসামি আবদুল হকের মধ্যে ছিল না কোনো প্রতিক্রিয়া। কারণ, তিনি জানতেও পারছিলেন না যে তাকে নিয়েই কা.রাগারে সৃষ্টি হয়েছে ভিন্ন এক পরিবেশ। কয়েক ঘণ্টা পরই ফাঁ.সির দড়িতে ঝুলতে হবে তাকে। কনডেম সেলে ব.ন্দী আবদুল হক শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছেন অন্যান্য দিনের মতোই। কা.রাগারে তার ব.ন্দী জীবন যখন শুরু হয়, তখন তার বয়স ছিল ৩৩। এখন ৫২।

দীর্ঘ ১৯ বছর কা.রাগারে ব.ন্দী জীবনের অবসান ঘটবে তার মৃ.ত্যুর মধ্য দিয়ে। সেদিন বিকালেই কা.রাগারের ফাঁ.সির সেলের কাছে হঠাৎ আত্মীয়-স্বজনকে দেখে তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। অন্যান্য সময়ে যেভাবে তাকে দেখতে আসতেন, সে রকম সাধারণ দিনের মতোই ভেবেছিলেন আবদুল হক। আত্মীয়-স্বজনকেও এ বিষয়ে কথা বলতে বারণ করে দিয়েছিলেন কা.রা কর্তৃপক্ষ। করোনাকাল। যে কারণে, যারা দেখতে আসতে পারেনি, তাদের সঙ্গেও মোবাইলে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়।

এরপরও ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি আবদুল হক, এ দেখাই শেষ দেখা প্রিয় স্বজনদের সঙ্গে। সন্ধ্যার মধ্যেই সবাই চলে যান। আবারও একা জীবন। আত্মীয়রা সঙ্গে করে কিছু খাবার এনেছিলেন। আর এনেছিলেন তার প্রিয় আম। সেই আম কেটে দেওয়া হয়েছিল আবদুল হককে। কিন্তু খাননি। প্লেট ভর্তি আম রয়ে গেছে। কিছু সময় পর একজন ডেপুটি জেলার কয়েকজন কা.রারক্ষীকে নিয়ে গেলেন সেই কনডেম সেলে। আবদুল হক শুয়ে ছিলেন। কা.রা কর্মকর্তার ডাকে তিনি উঠে বসলেন। ডেপুটি জেলার তাকে বললেন, আপনাকে প্রস্তুত হতে হবে। আর কিছুক্ষণ পরই যেতে হবে। এটাই জীবনের শেষ সময় আপনার।

ডেপুটি জেলারের মুখে এমন ভয়ংকর কথা শুনে কিছু বললেন না আবদুল হক। কথাটা শোনা মাত্রই সামনে রাখা প্লেট ভর্তি আমের দিকে তাকালেন। আমের টুকড়া হাতে নিয়ে মুখে দিলেন। খেতে থাকলেন। একটা শেষ হতে আরেকটা। একটার পর একটা। তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছেন। অন্য কোথাও তাকাচ্ছেন না। দৃষ্টি আমের প্লেটে। সেদিকে তাকিয়েই খেয়ে যাচ্ছেন। মনে হচ্ছিল দৃষ্টি সরালেই হয়তো কেউ আম সরিয়ে নেবে। চোখ তার সরেনি প্লেট ভর্তি আম শেষ না হওয়া পর্যন্ত। আবদুল হক কোনো কথা বলেননি। জবান বন্ধ। ডেপুটি জেলার তাকে জিজ্ঞাস করলেন, আর কিছু খেতে মন চায় কি না। কিন্তু আবদুল হকের জবান বন্ধ।

ডেপুটি জেলার তাকে প্রস্তুত হতে বলে চলে গেলেন। এরপর আসলেন জেলা কা.রাগার মসজিদের ইমাম। আবদুল হককে গোসলের পর অজু করতে বলেন। এরপর তওবা পাঠ করান তাকে। একদম ধীর স্থির হয়ে যান আবদুল হক। কোনো কথাই ছিল না তার মুখে। ইতিমধ্যে সময় ঘনিয়ে আসে। রাত পোনে ১২টায় তার সেলে যান জেলার, ডেপুটি জেলার, .কা.রারক্ষী আর জল্লাদের সহযোগী। কালো রঙের জমটুপি পরিয়ে ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মঞ্চের দিকে। হাতে লাগানো হ্যান্ডকাফ। কিছুই বলছিলেন না। বাধাও দিচ্ছিলেন না আবদুল হক। তার কোনো বিকার ছিল না। তাকে দাঁড় করানো হয় মঞ্চে।

জল্লাদ তার গলায় পরিয়ে দেন ফাঁ.সির দড়ি। সেখান থেকে সরে মঞ্চের হাতল নিয়ে প্রস্তুত হলেন। পিনপতন নিস্তব্ধতা। জেল সুপার তার বাম হাত উঁচু করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছেন। আরেক হাতে তার লাল রুমাল। ১২টা ০১ মিনিটেই তার হাতের রুমাল ছেড়ে দেবেন। জল্লাদ তখনই হাতল ধরে টান দেবেন। আবদুল হকের পায়ের নিচের দুই পাটাতন দুই পাশে সরে যাবে। ঝুলে পড়বেন আবদুল হক। এমনই এক শাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। আর মিনিট সময় আছে। টিক টিক করে ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটা ঘুরছে।

জল্লাদ হাতলে হাত রেখে তাকিয়ে আছেন জেল সুপারের হাতের রুমালের দিকে। আর দশ সেকেন্ড! ঠিক তখনই আবদুল হকের জবান খুলল। তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন, আমি খু.ন করিনি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। এ সময় আঁতকে ওঠেন উপস্থিত সবাই। বলে কী লোকটা। কিন্তু আবদুল হকের শেষ শব্দটাই ছিল জীবনের শেষ মুহূর্ত। রুমাল শূন্যে ভাসছে। জল্লাদ ততক্ষণে হাতল টেনে ধরেছেন। ফাঁ.সির দড়িতে ঝুলছেন আবদুল হক। স্ত্রী হত্যার দায়ে চলতি বছরের ৯ জুন বুধবার দিবাগত রাত ১২টা এক মিনিটে দিনাজপুর জেলা কা.রাগারে প্রথম ফাঁ.সি কার্যকর হলো এভাবেই।

জানা গেছে, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ভক্তিপুর চৌধুরী পাড়া এলাকার মৃ.ত আছির উদ্দীনের ছেলে মো. আবদুল হক। একই এলাকার বেলী আক্তারকে তিনি বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই আবদুল হক যৌতুকসহ নানা কারণে বেলী আক্তারের ওপর নির্যাতন করতেন। এক পর্যায়ে ২০০২ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি আবদুল হক তার স্ত্রীকে হত্যা করে ফেলেন। পরে বেলী আক্তারের মা বাদী হয়ে ২০০২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৫।

জিআর নং-৮৬/ ২০০২, নারী ও শিশু মামলা নং-৩৩৭/২০০২, ধারা- ২০০০ সালের নারী ও শি.শু নি.র্যাতন দমন আইনের ১১ (ক)। ২০০৭ সালের ৩ মে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আবদুল হককে মৃ.ত্যুদ.ন্ডে দ.ন্ডিত করে। পরবর্তীতে হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে সাজা বহাল থাকায় সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভি.ক্ষার আবেদন করেন আবদুল হক। রাষ্ট্রপতি সবকিছু বিবেচনায় গত ১৮ মে প্রাণভিক্ষার আবেদন না মঞ্জুর করলে ফাঁ.সি কার্যকরের উদ্যোগ নেয় কা.রা কর্তৃপক্ষ। গত ৯ জুন দিনাজপুর জেলা কা.রাগারে আবদুল হকের ফাঁ.সি কার্যকর করা হয়।

আর এই ফাঁ.সি কার্যকর করতে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কা.রাগার থেকে অহিদুল ইসলাম নামে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ব.ন্দীকে জল্লাদ হিসেবে আনা হয়। দিনাজপুর জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন লাল রুমাল ফেলে ফাঁ.সির সংকেত দেন। এ সময় জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বিপিএম, পিপিএম (বার), সিভিল সার্জন ডা. আবদুল কুদ্দুস ছাড়াও রংপুর ডিআইজি (প্রিজন) আলতাফ হোসেন, জেলার ফরিদুর রহমান রুবেল, কা.রা চিকিৎসকসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ২০০২ সালের ২৮ আগস্ট থেকে আবদুল হক রংপুর জেলা কা.রাগারে ব.ন্দী ছিলেন। ফাঁ.সির রায় কার্যকর করতে তাকে দিনাজপুর জেলা কা.রাগারে নেওয়া হয়।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.