Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে প্রকাশ্যে কোরবানি দেওয়ার অনুমোদন


ভিন্ন ভিন্ন জাতি, বর্ণ ও ধর্মের অনুসারীর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বহুজাতিক এই দেশের মিশিগান রাজ্যের হ্যামট্রামেক সিটিতে মুসলিমদের জন্য বাসা-বাড়ির আঙিনায় প্রকাশ্যে পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানি দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে সিটি প্রশাসন।

১০ জানুয়ারি হ্যামট্রামেক সিটির হলরুমে বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানি শেষে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সিটি প্রশাসনের কাউন্সিলদের সরাসরি ৩-২ ভোটে বিষয়টি অনুমোদন করা হয়।

জানা গেছে, বিষয়টির পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন মেয়র প্রোটেম কামরুল হাসান, কাউন্সিলর নাইম চৌধুরী ও আমান্ডা জোয়াস্কী এবং বিপক্ষে ‘না’ ভোট দেন কাউন্সিলর আল মাসমারী ও মুহিত মাহমুদ। তবে কাউন্সিলর খলিল রেফাই গণশুনানিতে অনুপস্থিত ছিলেন। ফলে ভোটে অংশ নিতে পারেননি।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই বিরল ঘটনায় হ্যামট্রামেক সিটির মুসলিম সম্প্রদায়রা যেমন আনন্দ উল্লাস করছেন তেমনি বহুজাতিক এই দেশে এই সিদ্ধান্তের জন্য পরিবেশ বিপর্যয়সহ ভিন্ন ধর্মের মানুষদের অসুবিধায় ফেলে দেওয়ার কথা নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা করছেন। এমনকি দেশটির শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

হ্যামট্রামেক সিটির মেয়র আমির গালিব বলেন, ১৯৯৩ সালে ফ্লোরিডায় পশু জবাই/কোরবানি দেওয়ার জন্য একটি মামলা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের আইন অনুযায়ী আমরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমনকি ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণে আমরা সিটির বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে গণশুনানির ব্যবস্থা করেছি। বিষয়টির অনুমোদনের পক্ষে উপস্থিত অধিকাংশ বাসিন্দা মতামত প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, এরপর সিটি কাউন্সিলদের মধ্যে ভোটাভুটির ব্যবস্থা করা হয়। ভোটে পাঁচজনের মধ্যে তিনজন ‘হ্যাঁ’ ভোট দেন। যার কারণে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টির পক্ষে। কারণ বহুজাতিক এই দেশে জনগণের অধিকার ও মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। গণশুনানিতে সিটি অ্যাটর্নি, সিটি ম্যানাজারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কাউন্সিলর নাইম চৌধুরী বলেন, আমি যেহেতু জনগণের অধিকার আদায়ে কথা বলি এবং এই সিটির জনপ্রতিনিধি তাই আমিও মনে করেছি এটা মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার। তাই আমিও এই বিষয়ে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছি। তবে ধর্মীয় কারণে পশু কোরবানি বা জবাই করলেও যাতে অন্য ধর্মের মানুষের কোনো অসুবিধা না হয় সেই ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। কোরবানির আগে প্রশাসন থেকে অনুমোদন নিয়ে কাজটি করতে হবে। এ ব্যাপারে অনেক আইন করা হবে সেগুলো যথাযথ পালন না করলে আর্থিক জরিমানাসহ অন্যান্য শাস্তি রাখার বিধান রাখা হবে।

গ্লোবাল ডেট্রয়েট অর্গানাইজেশনের কমিউনিটি অ্যাংগেজম্যান্ট স্পেশালিস্ট রেজাউল চৌধুরী বলেন, ছোট এই শহরে সিটি প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, সেটা আসলেই অনভিপ্রেত। কারণ এই শহরে শুধু মুসলিমরাই বসবাস করেন না, অন্য ধর্ম ও মতের মানুষরা বসবাস করেন। এই শহরে ভালো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ক্ষেত্রে অনেক সময় দীর্ঘ সূত্রিতা অবলম্বন হয়।

‘পশু জবাই বা কোরবানি দিলে পশুর মল, রক্তসহ চামড়া পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে যে পরিবেশ দূষণ হবে সেই দিকটা খেয়াল না করেই বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে। আমি মনে করি এই সিদ্ধান্তের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়সহ মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক বড় প্রভাব ফেলবে।’

এ বিষয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আহমেদ কাশেম বলেন, ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোরবানি দেওয়ার অনুমোদন পাওয়া আমাদের মুসলিম সম্প্রাদায়ের জন্য অনেক আনন্দের। তবে বহুজাতিক এই দেশে যেন অন্য ধর্মের মানুষেরা সমস্যায় না পড়েন সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

বিশেষ করে কোরবানি কাজটা সম্পন্ন হওয়ার পরে ময়লা- আবর্জনা পরিষ্কার করতে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করতে হবে এবং সেটা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশগত বিপর্যয় হলে অনেক সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে, তাই সবাইকে এ ব্যাপারে কঠোর সতর্ক থাকতে হবে।

নারী অ্যাক্টিভিস্ট কার্নিজ ফারিহা বলেন, ধর্মীয় কারণে বহু আগে মুসলিমদের জন্য কোরবানি দেওয়ার প্রচলন আছে। তবে সেটা ছিল নির্দিষ্ট জায়গায়। হ্যামট্রামেক সিটি প্রশাসন এবার ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে কোরবানি দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন। আমি মনে করি এটা শহরের বাসা-বাড়ির আঙিনায় না দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে দেওয়া ভালো। এতে পরিবেশ বিপর্যয় তথা অন্যান্য অসুবিধা থেকে মুক্তি পাবে।

দুই বর্গমাইলের ছোট এই শহরে প্রায় ৭০ শতাংশ অভিবাসীই বাংলাদেশি, আরব- ইমেয়মনি ও আফ্রিকান মুসলিম জনসাধারণ বাস করেন। বাকিরা অন্য ধর্মাবলম্বীর বাসিন্দা। এমনকি মেয়র, কাউন্সিলরসহ ৭ সদস্যবিশিষ্ট বর্তমান সিটি প্রশাসনটিও মুসলিমদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বিরল ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত।

এছাড়া প্রায় ৩০ হাজার মানুষের আবাসস্থল হ্যামট্রামেক সিটিতে ২০ এর বেশি মসজিদ আছে যেখানে নামাজ আদায়ের জন্য ২০০৪ সালে অধ্যাদেশ পাসের মাধ্যমে উচ্চস্বরে আজান দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.