Beanibazarview24.com
যুক্তরাষ্ট্রে ‘অডিটর জেনারেল’ পদে বাংলাদেশি নারীর রেকর্ড বিজয়
যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রাজনীতিতে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. নীনা আহমদ। পেনিসেলভেনিয়ায় ‘অডিটর জেনারেল’ পদে পাঁচ লাখ ভোটে জিতলেন নীনা। ২৩৩ বছরের রাজ্যটিতে এই প্রথম শ্বেতাঙ্গ প্রার্থীর পরাজয়। প্রথম সম্মানিত হলো বাংলাদেশও।
ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির এই ভোট অনুষ্ঠিত হয় গত ২ জুন। মোট পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে ড. নীনা পেয়েছেন প্রায় ৪ লাখ ৮৫ হাজার ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পিটাসবার্গ সিটি কম্পট্রোলার মাইকেল ল্যাম্ব প্রায় ৮০ হাজার ভোট কম পেয়েছেন।
নীনা পেনসেলভেনিয়ার রাজধানী ফিলাডেলফিয়ায় বসবাস করেন। ২০১৪ সালে বারাক ওবামা সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদ পান। এশিয়া-অ্যামেরিকা বিষয়ক কমিশনের উপদেষ্টা হন তিনি। প্যাসিফিক আইল্যান্ডও এই কমিশনের আওতাভুক্ত ছিল।
২০১৫ সালে নীনা ফিলাডেলফিয়া সিটির ডেপুটি মেয়র হন। এই সময়ে তিনি রাজ্যে তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটান। ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা হিসেবে অন্যান্য রাজ্যেও সক্রিয়তা দেখান।
২০১৮ সালে তিনি ফিলাডেলফিয়া রাজ্যের লে. গভর্নর পদে প্রার্থী হন। নিয়ম অনুসারে আগের বছর ডেপুটি মেয়র পদে পদত্যাগ করেন। কিন্তু ভোটের আগে প্রতিপক্ষের কৌশলের শিকার হন। নির্বাচনী এলাকা আদালতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়। ফলে তিনি এলাকাবিহীন প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন।
এবার নির্বাচনে তিনি অসামান্য সাফল্য দেখালেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, তিনি ব্যাপকভাবে মাঠ চষেছেন। কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের হত্যাপরবর্তী আন্দোলনকেও কাজে লাগিয়েছেন। নারী ও অশ্বেতাঙ্গদের প্রতিনিধিরূপেও জিতেছেন প্রথম বিজয়।
বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মেয়ে নীনা ২১ বছর বয়েসে মার্কিন প্রবাসী হন। তখন মেডিকেলে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। মার্কিন বৃত্তি নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। ১৯৯০ সালে ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভেনিয়ায় পিএইচডি করেন রসায়নে। জেফারসন ইউনিভার্সিটি থেকে ফেলোশিপ করেন মলিকুলার জেনেটিক্স তথা চিকিৎসাবিজ্ঞানে।
বিয়ে হয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আহসান নসরুল্লাহ’র সঙ্গে। স্বামী ব্যবসায় মনোনিবেশ করলে ড. নীনা চাকরি ছাড়েন। নিজে মনোনিবেশ করেন মার্কিন রাজনীতিতে। ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী মোর্চায় কাজ করেন। মার্কিন জীবনের কল্যাণচিন্তার ওপর গবেষণাও অনেক।
দুই কন্যাসন্তানের জননী ড. নীনা বাংলাদেশের কল্যাণেও কাজ করতে আগ্রহী। ব্যক্তিগতভাবে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যচর্চায় নিবেদিতপ্রাণ। তারুণ্যে ঢাকায় ‘লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতা’য় অংশ নেন। ‘রানার্স-আপ’-এর শিরোপাও অর্জন করেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট বারাকা ওবামা ‘কমিশনের উপদেষ্টা’ হন ২০১৪ সালে।
নির্বাচনটি মূল ধারার হলেও বাঙালি কমিউনিটি প্রচুর খেটেছিল। কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের আপ্যায়ন করে স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশিরা। তাদের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহযোগিতায় অন্যরাও হতবাক। অনেক ভোটকেন্দ্রে বাংলাদেশের পতাকাও শোভিত হয়। ড. নীনার পক্ষে নির্বাচন সমন্বয়ক ছিলেন ইমরুল চৌধুরী। অন্যতম উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ।
সাম্প্রতিক বিজয়ে ড. নীনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর ঢল নেমেছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.