Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

৩৯ বছর ধরে গোপনে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাচ্ছে ‘অস্তিত্বহীন’ বিমান


বিমানে চড়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পৌঁছে যাচ্ছেন যাত্রীরা। অথচ টের পাচ্ছেন না কেউ। মিশরের কায়রো থেকে ইজরায়েলের তেল আবিবের মধ্যে এভাবেই ৩৯ বছর ধরে যোগাযোগ রেখে চলেছে একটি ‘অস্তিত্বহীন’ বিমান।

আমেরিকার হস্তক্ষেপে ১৯৭৯ সালে ইজরায়েল এবং মিশরের মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল। চুক্তির একটি শর্ত ছিল, দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল শুরু করতে হবে। এর প্রেক্ষিতে ১৯৮২ সালে এয়ার সিনাই তৈরি করে মিশর। মিশরের রাজধানী কায়রো এবং ইজরায়েলের তেল আবিবের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হয়।

এয়ার সিনাইয়ের এই রুটে আগে মিশরের ইজিপ্ট এয়ার সংস্থার নেফারতিতি অ্যাভিয়েশনের বিমানের চলাচল ছিল। পরবর্তীকালে এই রুটেই এয়ার সিনাই নামে ওই বিমান চলাচল শুরু হয়। কিন্তু ইজরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি এবং পরবর্তী কালে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচলে রাজনৈতিক চাপ পড়তে শুরু করে মিশরের উপর। ওই চুক্তির পরই বাকি সমস্ত আরব দেশ মিশরকে বয়কট করে।

মিশরের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। ভিতর এবং বাইরে দুই চাপের মধ্যে মিশর সম্পূর্ণ ‘অভূতপূর্ব’ একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এই রুটে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা।

অন্যদিকে, মিশরকে শান্তি চুক্তির শর্তের কথাও মাথায় রাখতে হয়েছিল। চুক্তির শর্ত যাতে না ভাঙে, তার জন্য তাই একপ্রকার লুকিয়ে এই রুটে বিমান চালাতে শুরু করে মিশর। তখনই এয়ার সিনাই সংস্থা তৈরি করে ফেলে তারা। এর আগে পর্যন্ত এই রুটে ইজিপ্টএয়ার নামে বিমান চলাচল করত। ইজিপ্টএয়ারে পাইলট, বিমান, বিমানসেবিকা-সব নিয়েই উড়ান দিতে শুরু করে এয়ার সিনাই। নাম বদলানোর পাশাপাশি আরো একটি কাজ করেছিল মিশর।

গোপনীয়তা বজায় রাখতে বিমানের গায়ে লোগোর ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। এমনকি এই সংস্থার কোনো ওয়েবসাইটও ছিল না। ফলে কোনো যাত্রী যদি কায়রো থেকে তেল আভিভ যাওয়ার জন্য অনলাইনে টিকিট কাটতে উদ্যোগী হতেন, তাহলে তিনি খুবই সমস্যায় পড়তেন। কারণ তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কায়রো থেকে তেল আবিব যাওয়ার সরাসরি এই একটি মাত্র বিমান এয়ার সিনাইয়ের কোনো ওয়েবসাইট তিনি খুঁজে পেতেন না।

কিন্তু ঘুরপথে তেল আবিব যাওয়ার জন্য একাধিক বিমান সংস্থার ওয়েবসাইট ভেসে উঠত তার সামনে। তবে এয়ার সিনাইয়ের টিকিট বুক করতে আগ্রহীদের জন্য কিছু বার্তা ভেসে উঠতো ইন্টারনেটে। তাতে ক্লিক করলে ট্রাভেল এজেন্সির ইমেল, যোগাযোগ নম্বর পাওয়া যেত। সেই নম্বরে যোগাযোগ করে যাত্রীকে নিজের বিবরণ মেল করে পাঠাতে হত। পাসপোর্টের স্ক্যান কপি এবং আরো যা যা তথ্য জানতে চাইত, সে সবই ইমেল-এর মাধ্যমে পাঠাতে হত। সব কিছু বিবেচনা করে তারপর ইমেল-এই ফ্লাইটের সময়, তারিখ এবং বিমান ভাড়া জানিয়ে দিত ওই সংস্থা।

এরপরই নির্দিষ্ট ঠিকানায় টাকা দিতে হত যাত্রীকে। এখানেও গোপনীয়তা বজায় রাখতে ক্রেডিট কিংবা ডেবিটের মতো কোনো কার্ড ব্যবহার করা যেত না। শুধুমাত্র নগদেই সেই টাকা দিতে হত যাত্রীকে। এই গোপনীয়তার কারণে যাত্রীদের মধ্যে একটি অনিশ্চয়তাও কাজ করত। তারা ঠিক জায়গায় টাকা দিলেন কি না, তা বিমানের ওঠার আগে পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারতেন না।

এই বিষয়টি মাথায় রেখে ২০২০ সালে প্রথম এই উড়ানের জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি হয়। নাম রাখা হয় ফ্লাইএয়ারসিনাই ডট কম। এই ওয়েবসাইট থেকে কায়রো-তেল আবিবের মধ্যে এয়ার সিনাই ফ্লাইটের যাবতীয় তথ্য দেওয়া রয়েছে। এবং এখান থেকে খুব সহজেই যাত্রীরা টিকিট বুক করে নিতে পারেন। ক্রেডিট কার্ডও ব্যবহার করতে পারেন।

ফ্লাইএয়ারসিনাই ডট কম যদিও সরাসরি এয়ার সিনাইয়ের ওয়েবসাইট নয়। একটি থার্ড পার্টি ট্র্যাভেল এজেন্সি যাত্রীদের সুবিধার্থে এই ওয়েবসাইটটি বানিয়েছে। ফলে ঘরে-বাইরের চাপ সামলাতে আজও যাত্রীদের কায়রো থেকে তেল আবিব উড়িয়ে নিয়ে যায় মিশরের এই ‘অস্তিত্বহীন’ বিমান।

সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.