Beanibazarview24.com
স্মার্টফোনের সামনের অংশে ডিসপ্লে আঠা বা গ্লু দিয়ে জোড়া দেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু। সেই আঠা শুকানোর জন্য তিন ঘণ্টা রেখে দেওয়া হচ্ছে। তারপর শুরু হয় একে একে মাদারবোর্ড, ব্যাটারি, ক্যামেরা, অডিও সিস্টেম ইত্যাদি যন্ত্রাংশ সংযোজন। ক্যামেরা, অডিও এবং নেটওয়ার্কিংয়ের মতো বিষয়গুলো কর্মীদের পাশাপাশি যন্ত্রের মাধ্যমেও সুচারুভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সবশেষে চার্জিং মোডে আবারও আট ঘণ্টা স্মার্টফোনকে যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়।
গাজীপুরের ভোগড়ায় গত সোমবার চীনা ব্র্যান্ড শাওমির স্মার্টফোন কারখানায় গিয়ে এমন কর্মযজ্ঞই দেখা গেল। শাওমির এ ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ স্মার্টফোন আগামী মাসে বাজারে আসবে বলে জানালেন ব্র্যান্ডটির কর্তাব্যক্তিরা।
দেশের ভেতরে স্মার্টফোন সংযোজন কারখানা স্থাপনের তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো শাওমি। চীনা এই ব্র্যান্ডের জন্য স্মার্টফোন সংযোজন করবে তাদেরই সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডিবিজি টেকনোলজি বিডি লিমিটেড। গাজীপুরের ভোগড়ায় ৫৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের কারখানাটিতে বছরে ৩০ লাখ স্মার্টফোন বানাবে শাওমি বাংলাদেশ। তবে বর্তমানে দৈনিক আট ঘণ্টার শিফট বা পালায় দুই হাজার স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে। তাতে মাসে উৎপাদন হবে ৫০ হাজার স্মার্টফোন। আগামী জানুয়ারিতে নতুন লাইন চালু হলে স্মার্টফোন উৎপাদন আরও বাড়বে।
শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী জানালেন, ভারত, চীন ও ভিয়েতনামে উৎপাদিত স্মার্টফোনের মতোই একই মানসম্পন্ন স্মার্টফোন বাংলাদেশের কারখানাতেও তৈরি হবে। এ জন্য ধাপে ধাপে এক কোটি মার্কিন ডলার বা ৮৫ কোটি টাকা বিদেশি বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন কারখানায় এক হাজারের বেশি কর্মসংস্থান হবে। যদিও বর্তমানে কাজ করছেন ২৬০ জন কর্মী।
নির্ধারিত নিরাপত্তা পোশাক পরিধান করার পর আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জীবাণুমুক্ত করার পরই কারখানায় প্রবেশের অনুমতি মিলল। ভেতরে যেতেই চোখে পড়ল নিঃশব্দে কাজ করছেন নারী ও পুরুষ কর্মীরা। বিদেশ থেকে নিয়ে আসা যন্ত্রাংশ এক পাশ দিয়ে উৎপাদন সারিতে প্রবেশ করছে। বেশ কয়েক ধাপ ও হাত পেরিয়ে শেষ মাথায় প্যাকেট বা মোড়কজাত হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে স্মার্টফোন। সব ধাপ শেষ করতে ১৯-২০ ঘণ্টার মতো লাগে।
বর্তমানে দেশে ডজনখানেক মুঠোফোন সংযোজন কারখানা গড়ে উঠেছে। দেশে প্রথম মুঠোফোন কারখানা করে ওয়ালটন। গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের কারখানার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় ২০১৮ সালের মাঝামাঝি। একই বছরের জুনে স্যামসাং ব্র্যান্ডের মুঠোফোন সংযোজন শুরু করে ফেয়ার ইলেকট্রনিকস লিমিটেড। তার তিন মাস পর সিম্ফনি ব্র্যান্ডের মুঠোফোন বাজারজাতকারী এডিসন গ্রুপের কারখানার উদ্বোধন হয়। তারই ধারাবাহিকতায় কারখানা করেছে ভিভো, অপো, রিয়েলমি, টেকনো, আইটেল, ইনফিনিক্স, ফাইভস্টার ও নকিয়া।
সরকারের নীতিসহায়তার কারণেই দেশে একের পর এক মুঠোফোন উৎপাদন বা সংযোজন কারখানা হচ্ছে। বর্তমানে স্মার্টফোন আমদানিতে প্রায় ৫৭ শতাংশ শুল্ক ও কর দিতে হয়। আর যন্ত্রাংশ আমদানি করে সংযোজনে শুল্ক ও কর ১৮ শতাংশের মতো।
রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে শাওমির স্মার্টফোন সংযোজন কারখানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুব্রত রায়, শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শাওমির কারখানার উদ্বোধনে শুভেচ্ছা জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘শুধু স্মার্টফোন নয়, সব ধরনের প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশকে হাব বানান। এখান থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করুন।’
২০১০ সালে শাওমি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষস্থানীয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড হয়েছে শাওমি।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.