Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সিলেটের ওয়াসিম খান; ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের মুখপাত্র


খেলাধুলা ডেস্ক: দীর্ঘাকায় একজন মানুষ, মুখে চাপ দাড়ি, চুল-দাড়িতে পাঁক ধরেছে। ঠোটে স্মিত হাসি। দে৷৷ খলে মনে হয়, কোথায় যেনো লোকটাকে দেখেছি। একটু পর মনে পড়ে, ওই যে টিভি বিজ্ঞাপনে দেখেছি। কিংবা ছোট্ট একটা নাটকেও চোখে পড়ে।

তাহলে লোকটা কে? তিনি কি ক্রিকেট বোর্ডের কেউ? তিনি কী খেলোয়াড়? নাকি অভিনেতা? অভিনেতা হলে খেলোয়াড়দের কাছে কেনো? আবার ক্রিকেটের লোক হলে টিভি পর্দায় কেন?

সবমিলিয়ে তিনি যেনো এক রহস্যমানব। হঠাৎ হঠাৎ তাঁর দেখা মেলে। কিন্তু পরিচয় মেলে না। হাজারো প্রশ্ন এবং ভুল উত্তর ভেসে বেড়ায় ফেসবুকে। সবাই জানতে চান, লোকটা কে?

লোকটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের অতি আপন জন। আশির দশক থেকে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের, আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের এক নীরব স্বাক্ষী। লোকটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক চলন্ত ইতিহাস। লোকটা শত শত ক্রিকেট ও বিনোদন তারকার নিভৃত সঙ্গী। লোকটা একজন শখের অভিনেতা।

এই লোকটা ওয়াসিম খান। মোহামেডানের ওয়াসিম খান এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) ওয়াসিম খান।

ওয়াসিম খানের আদি বাড়ি সিলেট। তবে তার জন্ম ও বড় হয়ে ওঠা ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন বিএএফ শাহীন স্কুলে। এখানে পড়াশোনা করার সুবাদে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অনেক রথীমহারথীর সাথে বেড়ে উঠেছেন। এই স্কুলের পরিবেশও ক্রীড়ামুখী থাকায় একাধারে বাস্কেটবল, ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মধ্যে বড় হয়ে উঠেছেন।

এই গুনের জন্যই ১৯৮৪ সালে, বয়স বিশ পার হওয়ার কিছুদিন পরই মোহামেডানের ম্যানেজার হয়ে গেলেন। এরকমই মাত্রই কৈশোর পার হয়ে আবাহনীর ম্যানেজার হয়েছিলেন আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি। ফলে আবাহনী-মোহামেডান, দু জায়গাতেই তরুণ ম্যানেজারের যুগ।

এর মধ্যে একটা ঘটনা ঘটলো। বাংলাদেশ সফরে এলো পশ্চিম বাংলা দল। এই দল থেকে কয়েক জন খেলোয়াড়কে মোহামেডানে ভিড়িয়ে ফেললেন ওয়াসিম খান। শুরু হলো তাঁর বিদেশি খেলোয়াড় সংগ্রহ। ১৯৮৮ সালে ঢাকায় বসলো এশিয়া কাপের আসর।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) খেলোয়াড়দের আপ্যায়ন ও বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানোর কমিটিতে জায়গা হলো ওয়াসিম খানের। সেই শুরু থেকে গত ৩৩ বছর ধরে এই স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হয়ে আছেন ওয়াসিম খান।

ফলে বাংলাদেশে যত বিদেশি দল খেলতে আসে, বিপিএল উপলক্ষে যত বড় বড় তারকা আসেন; সবারই আসলে দেশে রিসিভ করার কাজটা করেন ওয়াসিম খান। বিমানবন্দরটা এই করতে করতে হয়ে গেছে তার হাতের তালুর মতো। আর তার এই দক্ষতার কারণে বাংলাদেশের তারকারা যারা ব্যক্তিগত কারণে দেশের বাইরে যাতায়াত করেন, তারাও বিমানবন্দরে সহায়তা নেন ওয়াসিম খানের।

আর এই গুনের কারণে ওয়াসিম খান বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এজেন্সির সাথেও কাজ করেছেন। ফলে ইরফান খান, সালমান খান, জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ, সুস্মিতা সেন থেকে শুরু করে এআর রহমানেরও তিনি ঘনিষ্ঠ মানুষ হয়ে ওঠেন।

এদিকে ক্রিকেট সংগঠক হিসেবে মোহামেডানে তিনি শুরু করেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারদের আনা। অতুল সামারাসেকেরা থেকে শুরু। এরপর অর্জুনা রানাতুঙ্গা, ল্যাব্রয়, রুমেশ রত্নায়েকে, সনাথ জয়াসুরিয়া এবং অসংখ্য লঙ্কান ক্রিকেটার তার সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।

বাংলাদেশ নারী দলের সাথে শুরু থেকে ছিলেন তিনি। নারী দলের ম্যানেজার হিসেবেও কাজ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন মোহামেডান নারী দলের ম্যানেজার হিসেবেও।

তাঁর বাসায় সপরিবারে এসেছেন, থেকেছেন। এর মাঝে কিছু দিন ব্রাদার্স ইউনিয়নেও ছিলেন কর্মকর্তা হিসেবে। সেখানেও ভারত ও শ্রীলঙ্কান তারকাদের এনেছেন। হ্যান্ডবল কর্মকর্তা হিসেবেও কাজ করেছেন।

ব্রাদার্সের দায়িত্বে যে চার বছর ছিলেন, সেটা ছিলো ঢাকার ক্রিকেটের একটা পালা বদলের সময়। মূলত ওয়াসিম খানের হাত ধরেই ঢাকার ক্রিকেটে টাকার রমরমা শুরু হয় এই সময়ে। এই চার বছরে ব্রাদার্স লিগ জিতেছে। একটি টুর্নামেন্ট জিতেছে এবং একটিতে রানার্সআপ হয়েছে। যেটা ব্রাদার্সের ইতিহাসে আগে পরে আর ঘটেনি।

বাংলাদেশ হ্যান্ডবল যুব ও সিনিয়র দলের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেছেন। ছিলেন এই ফেডারেশনের কর্মকর্তাও। সে জন্য আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন।

বিপিএলে কাজ শুরু করেছিলেন সিলেট দলের সাথে। এরপর রংপুর, চিটাগং হয়ে সর্বশেষ ঢাকার প্রধাণ প্রটোকল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে অকৃতদার এই মানুষটি থাকেন উত্তরায়। ফলে অনেক অভিনেতা ও পরিচালকের সাথেও তার ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়েছে। অভিনয় ব্যাপারটা সম্পর্কে তার ধারণা ছিলো, এটা যে কেউ পারে। সেই ধারণা থেকে কয়েকটা বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে ফেললেন। কিন্তু বড় চরিত্রে অভিনয় করা হচ্ছিলো না।

আফসানা মিমি তাকে ‘ডলস হাউজ’ বলে একটা বড় ধারাবাহিকে নিয়ে নিলেন। মনোরোগ চিকিৎসকের সেই চরিত্র করতে গিয়ে ওয়াসিম খানের ধারণা বদলেছে, ‘অভিনয় আসলে কঠিন ব্যাপার। আমরা ভাবি সহজ। আসলে এটাও ক্রিকেটের মত অনুশীলনের দরকার আছে।’

অভিনয়, ক্রিকেট থেকে পেয়েছেন অনেক কিছু। রানাতুঙ্গা, শেবাগের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। সুস্মিতার সাথে তিনি বাংলা ভাষায় আড্ডা দেন। টেন্ডুলকার শততম সেঞ্চুরি করে তাকে ধন্যবাদ জানান। ভারতে তার ঘনিষ্ঠদের মধ্যে আছেন সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে গৌতম গম্ভীররা।

পাকিস্তানের এখনকার প্রধাণমন্ত্রী ইমরান খানকেও রিসিভ করেছেন তিনি। জাভেদ মিয়াদাদ থেকে শুরু করে শহীদ আফ্রিদি, বাবর আজমরা তার ঘনিষ্ঠ। দারুন ঘনিষ্ঠতা ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুসের সাথে। শ্রীলঙ্কায় সেই রানাতুঙ্গা থেকে থারাঙ্গা বা দিলশান। আফগানিস্তানের মোহাম্মদ নবী বা রশীদ খান তার ঘনিষ্ঠ মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লির সাথে দারুন সম্পর্ক তার। অনেক অনেক প্রাপ্তি। তবে সেরা স্মৃতিটা ক্রিকেট মাঠেই।

ওয়াসিম খান বলছিলেন, ‘আমি তখন মোহামেডান ম্যানেজার। একদিন অনুশীলনে মাথায় বল লেগে হাসপাতালে ছিলাম। পরদিন খেলা। আমি আর থাকতে না পেরে দুপুরে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে মাঠে চলে এলাম। ড্রেসিংরুমের সামনে দাড়াতেই দেখি অনেকে হাততালি দিচ্ছে। অবাক হয়ে দেখছি, কেউ ফিফটি করলো কি না। বুঝতে পারছি না। তখনই ব্যাট করতে থাকা বোলার রত্নায়েকে আমাকে ব্যাট দেখিয়ে বললো-এটা তোমার জন্য। আজও আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি এটা।’

ওয়াসিম খানের চোখে তখন প্রাপ্তির অশ্রু। এই আবেগ দিয়েই ওয়াসিম খানরা আগলে রাখেন আমাদের ক্রিকেট।
সূত্র: খেলা৭১

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.