Beanibazarview24.com
আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বের হওয়া ড্রপলেট থেকে করোনা ছড়ায়। সেই ব্যক্তি যদি ধূমপায়ী হয়-তাহলে তার ত্যাগ করা ধূমপানের ধোঁয়া থেকেও করোনা ছড়াতে পারে।
এমন শঙ্কা থেকে গেলো মাসে স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধূমপানের বিষয়ে সতর্ক করেন বিশেষজ্ঞরা। সতর্কতা আমলে নিয়ে বুধবার (১২ আগস্ট) স্পেনের গ্যালিসিয়ায় ধূমপান কার্যকরভাবে নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
গণজমায়েত, রেস্তোরাঁ এবং পানশালা, যেখানে সামাজিক দুরত্ব মানা সম্ভব নয়- সেসব জায়গায় ধূমপানে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলটিতে প্রথমবারের মতো এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যান্য অঞ্চলও এ নীতি গ্রহণের চিন্তাভাবনা করছে।
পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে স্পেনে ভয়াবহভাবে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে আঞ্চলিক প্রশাসন ধূমপান বন্ধের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।
জুনে দেশটিতে গড়ে প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে দেড়শ’ জন করে। আগস্টে এ সংখ্যা বেড়ে দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। বুধবার রেকর্ড ১ হাজার ৬৯০ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। দেশটির মোট আক্রান্ত সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার।
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ধূমপান নিষিদ্ধের ঘোষণা দেয় গ্যালিসিয়া কর্তৃপক্ষ। এর আগে ধূমপানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেন বিশেষজ্ঞরা।
কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গেলো মাসে করোনা মোকাবিলায় তৈরি রূপরেখায় ধূমপানের কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
বলা হয়, মানুষের ড্রপলেটের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। ধূমপায়ীর ত্যাগ করা ধোঁয়ায়ও সে শঙ্কা রয়েছে। ধূমপায়ী ব্যক্তি ধোঁয়া ত্যাগের মাধ্যম ছাড়াও বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হচ্ছে বা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। যেমন, সিগারেট মুখে দেয়ার আগে হাত দিয়ে স্পর্শ করা। হাত জীবানুমুক্তি কী না তা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক শঙ্কা। এভাবে হাত থেকে সিগারেটে, সিগারেট থেকে মুখের মাধ্যমে শরীরে করোনা ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
এছাড়া, ধূমপায়ী মাস্ক খুলে ধূমপান করার কারণে নিজে যেমন সংক্রমণ ছড়ায়, তেমনি অন্য কারো মাধ্যমে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
গবেষকরা ব্যাপকভাবে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছেন। তারা বলেন, যে কোনো উপায়ে তামাক গ্রহণ-শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে যে উপসর্গগুলো দেখা দেয়, ধূমপান সেসব উপসর্গকে আরো বেশি সক্রিয় করে তুলে। পরবর্তীতে ধূমপায়ীর জন্য করোনা মোকাবিলা কঠিনতর হয়ে যায় বলে গবেষণায় বলা হয়।
গ্যালিসিয়ার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো নুনেজ ফেইজো বলেন, ধূমপায়ীদের ত্যাগ করা ধোঁয়া কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাব্ধ থাকে না। ওই ধোঁয়া একজন থেকে অন্যজন শ্বাস-প্রশ্বাসে গ্রহণ করেছ। যার কোনো সামাজিক দুরত্ব নেই।
আমরা জানি ধূমপান নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত ধূমপায়ীরা ভালোভাবে গ্রহণ করবে না। জীবন রক্ষায় এমন একটি পদেক্ষেপ নেয়া ছাড়া উপায় ছিল না। বলেন, স্থানীয় সরকারের স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা আলবার্তো ফার্নান্দেজ ভিলার।
এমন পদক্ষেপ দক্ষিণ আফ্রিকায় নেয়া হয়েছিল। মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধ ছিল। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং দেশটির জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেপটাউন।
এক জরিপে দেখা গেছে ব্রিটেনে করোনা সময়ে ১০ লাখের বেশি মানুষ ধূমপান ছেড়ে দিয়েছে। ব্রিটিশ সরকার সতর্ক করেছিল- করোনায় আক্রান্ত ধূমপায়ীরা মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। তারপরই যুক্তরাজ্যে ধূমপান উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে যায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, ধূমপায়ীরা শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমসায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত ধূমপায়ীদের শরীরে ধূমপানের কারণে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিউমোনিয়ার মতো জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.