Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

বিনা খরচে ম’রদে’হ আনা বন্ধ বিমানের, ‘মুখে কুলুপ’ প্রবাসীকল্যাণের


আগে প্রবাসে বাংলাদেশি কেউ মা’রা গেলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিনা খরচে ম’রদে’হ পরিবহন করে দেশে নিয়ে আসত। কিন্তু সম্প্রতি তা বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বেশি টাকা দিয়ে পরিবারের খরচেই দেশে আনতে হচ্ছে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ম’রদে’হ। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা। যদিও বিষয়টি নিয়ে ‘মুখে কুলুপ এঁটেছে’ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান প্রবাসীদের ম’রদে’হ বিনা খরচে দেশে আনলেও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আপত্তি জানায়। চলতি বছরের শুরুতে এ নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও দেয় বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়টির কোনো সুরাহা করেনি, চিঠির জবাবও দেয়নি। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিনামূল্যে ম’রদে’হ বহন তাদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত বিনা খরচে ম’রদে’হ পরিবহন বন্ধ করে দেয় বিমান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তবু মানবিক বিষয়গুলোতে সবসময়ই অগ্রাধিকার দিয়ে বিমান প্রতি বছর শত শত প্রবাসী বাংলাদেশির ম’রদে’হ বিনা ভাড়ায় পরিবহন করে থাকে। কিন্তু আর কতদিন বিমান এভাবে করবে? তাদের তো একটা খরচ আছে। ন্যূনতম খরচটা তো তাদের পেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা যখন দেশের বাইরে যান, তখন তারা ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ডে টাকা জমা দিয়ে যান। তাই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় চাইলেই সেই ফান্ড থেকে বিমানকে ম’রদে’হ বহনের টাকাগুলো পরিশোধ করে দিতে পারে। আমরা এ বিষয়ে চিঠি দিলেও ওই মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের এখনও কোনো ফিডব্যাক জানানো হয়নি।’

বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিনামূল্যে ৭৫০-৯০০ প্রবাসীর ম’রদে’হ দেশে আনছে। এর মধ্যে অধিকাংশই সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী।

বিমানের একজন কর্মকর্তা জানান, সারাবছরই বিশ্বে বিভিন্ন সংকট লেগে থাকে। নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় প্রবাসী শ্রমিকরা মা’রা যান। গোটা বিশ্বের এভিয়েশন খাতে বিপর্যয়ের পরও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মা’রা যাওয়া প্রবাসীদের ম’রদে’হ ফিরিয়ে আনে বিমান। যেহেতু প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ভাড়া পরিশোধের সুযোগ রয়েছে, তাই বিমান আর বিনামূল্যে ‘ম’রদে’হ বহন করছে না।

মধ্যপ্রাচ্য হয়ে বাংলাদেশে আসে এমন তিনটি বিদেশি এয়ারলাইন্সের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ থেকে একজন ব্যক্তির ম’রদে’হের কফিন বহনের জন্য প্রতি কেজি ১৮ ডলার বা বাংলাদেশি ১৫৩০ টাকা নেয়। সেক্ষেত্রে ম’রদে’হ ও কফিনের ওজন মিলে প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো ভাড়া নেয়া হয়।

তবে দীর্ঘদিন ধরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বিনা খরচেই প্রবাসীদের ম’রদে’হ বহন করে আসছিল। সংস্থার সংশ্লিষ্টরা জানান, কোভিড-১৯-এর কারণে বিমানের আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় তারা বিনামূল্যে ম’রদে’হ পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের চাওয়া, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল থেকে বিমানের ভাড়াগুলো পরিশোধ করা হোক। যদিও দীর্ঘদিন ধরে বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়কে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কোনো জবাবই দিচ্ছে না ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।

এ বোর্ডের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী কর্মীদের অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে তাদের এবং দেশ-বিদেশে কর্মীদের পরিবার-পরিজনকে সাহায্য-সহযোগিতা, তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য এবং তাদের সার্বিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার ‘ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিল’ গঠন করে। এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত পরিচালনা বোর্ডের মাধ্যমে তহবিলটি পরিচালিত হয়।

তবে প্রবাসীদের স্বার্থে এই তহবিল গঠন করা হলেও ম’রদে’হ নিয়ে টানাহেঁচড়া করতে হচ্ছে তাদের। ম’রদে’হ বহনের বিষয়ে গত বুধবার ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের বক্তব্য জানতে চাইলে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। এমনকি বিনামূল্যে প্রবাসীদের ম’রদে’হ বহন বন্ধের বিষয়টিও তাদের অনেকে অবগত নন বলে জানান।

এ বিষয়ে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) হামিদুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বোর্ডের একজন প্রতিনিধি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ম’রদে’হ বহনের ভাড়ার বিষয়ে বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কোনো চিঠি আমাদের হাতে আসেনি। সম্ভবত চিঠিটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে থাকতে পারে। আমাদের কাছে এলে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত জানাব।’

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন নিজেই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের চেয়ারম্যান। গত ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রণালয় ও বোর্ডের অবস্থান জানতে চেয়ে তাকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন কেটে এসএমএস দিতে বলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর এসএমএসে প্রতিবেদকের নাম-পরিচয়সহ বক্তব্য চাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি ‘বিজি (ব্যস্ত)’ বলে ফিরতি এসএমএস পাঠান। পরবর্তী এসএমএসে প্রতিবেদক তাকে ‘ফ্রি হয়ে কল করার অনুরোধ’ জানালেও প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত তিনি কোনো উত্তর দেননি।

তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা নিয়ে বেশ কয়েকটি চিঠি চালাচালি হয়েছে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা
এদিকে ম’রদে’হ পরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্তে বিমানের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেক প্রবাসী। অনেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বয়কটের ঘোষণাও দিয়েছেন। তবে বিমান বলছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় চাইলেই দ্রুত সমস্যার সমাধান সম্ভব।

ওমানে অবস্থানরত বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের এক সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, আমরা রোদে পুড়ে, জ্বলে ভিজে কাজ করে দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখি। অথচ দেশে আমাদের জন্য অতিরিক্ত কোনো সুবিধা নেই। বরং আমরা প্রবাসে মা’রা গেলেও পরিবারের ওপর খরচের দায়ভার পড়ে। মন্ত্রণালয় চাইলে খুব সহজেই অল্প সময়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব, তবে আমরা শ্রমিক শ্রেণির বলে আমাদের বিষয়গুলো সবসময় উপেক্ষিত থাকে। আমাদের মতো প্রবাসীদের অবস্থান বাংলাদেশে বসবাসরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চেয়েও নিচে।

প্রবাসীদের ম’রদে’হ সরকারি খরচে আনার ব্যবস্থা চেয়ে নোটিশ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত শ্রমিকদের কেউ মা’রা গেলে তার ম’রদে’হ সরকারি খরচে দেশে আনার ব্যবস্থা চেয়ে সম্প্রতি সরকারকে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান লিংকন জনস্বার্থে এ নোটিশ পাঠান। রেজিস্ট্রি ডাকযোগে নোটিশ পাঠানো হয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে।

নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে সরকারি খরচে বিদেশে মৃত শ্রমিকদের ম’রদে’হ দেশে আনার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
-জাগোনিউজ২৪.কম

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.