Beanibazarview24.com
হাতের চাপ ছাড়াই নলকূপ থেকে উঠছে পানি। এমনকি কোনো মোটরও নেই। আর এ নলকূপের পানি পান করলেই মিলবে রোগ থেকে মুক্তি। সারবে ক্যান্সারসহ নানা ধরনের জটিল ও গোপন রোগ। এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে।
গত চারদিন ধরে ওই গ্রামের আনারুল ফকিরের বাড়ির নলকূপে হাতের চাপ বা মোটর ছাড়াই পানি উঠছে। এ গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরই পানি নিতে তার বাড়িতে ভিড় করছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা শত শত মানুষ। তবে পানি পান করে কেউ রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন কি না তা কেউ বলতে পারেননি।
জানা গেছে, ভবানীপুর গ্রামের আনারুলের বাড়ির নলকূপ দিয়ে হঠাৎ পানি উঠতে থাকে। এটিকে আল্লাহর নিয়ামত ভেবে এর পানি পান করলে রোগমুক্তি হবে ভেবে পানি নেয়া শুরু করেন এলাকার লোকজন। অনেকেই রোগমুক্তির প্রচারণা চালানোর পর ভবানীপুর ও আশপাশের এলাকার লোকজন পানি নিতে ভিড় জমাচ্ছেন ওই বাড়িতে। কেউ আসছেন গোপন রোগ সারাতে। আবার অনেকেই আসছেন ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি পেতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের ভিড়। কেউ পানি নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ সেখানেই নিয়ত করে পানি পান করছেন।
পানি নিতে আসা কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের গরুড়া গ্রামের মহিদুল জানান, তার ও তার ছোট ভাইয়ের গোপন রোগ মুক্তির জন্য পানি নিতে এসেছেন। বিভিন্ন ডাক্তার-কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিয়েও তা ভালো হয়নি।
ভবানীপুরের হাবিবুর রহমান জানান, চোখে কম দেখেন তিনি। ওই পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করলে ভালো হবে মনে করে খাস নিয়তে তিনি পানি নিয়ে যাচ্ছেন। তবে কাউকে কোনো টাকা দিতে হচ্ছে না।
গোয়াল গ্রামের বৃদ্ধা চম্পা এসেছেন তার মেয়ের বন্ধ্যাত্ব দূর করতে। বিয়ের ১০ বছর পার হলেও তার মেয়ের কোনো সন্তান নেই।
এদিকে একটি চক্র ওই টিউবওয়েলটিকে ঘিরে ব্যবসার ফন্দি আঁটছেন। অনেকেই এটিকে অলৌকিক বলে দাবি করে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছেন। এ পানি পান করলে রোগ ভালো হবে বলে তাদের দাবি। পানির অপর নাম জীবন। অনেকের রোগ ভালো হয়েছে বলে দাবি করলেও কোনো লোককে তারা দেখাতে পারেননি।
মেহেরপুর হোটেল বাজার জামে মসজিদের ইমাম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এসব কুসংস্কার। রোগব্যাধি ভালো করার জন্য মানুষ ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেবে। পানি পান করলে কোনো রোগ ভালো হয় কি না সেটি জানা নেই।
মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা ঘটনাটি জেনেছি। এর সঙ্গে বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। নলকূপের পানিতে রোগমুক্তি হয় এমন তথ্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে নেই। যারা পানি নিচ্ছে বা পান করছে তারা গুজবে কান দিয়ে সেখানে ভিড় করছে।
গাংনী থানার ওসি ওবাইদুর রহমান বলেন, ওই স্থানে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পুলিশ ক্যাম্পে জানানো হয়েছে ও সতর্ক করা হয়েছে।
গাংনীর ইউএনও সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, ওই নলকূপের পানিতে রোগ সারবে কীভাবে তা বোধগম্য নয়। এটি প্রতারণার ফাঁদ মাত্র। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীকে জানিয়ে নলকূপটি বন্ধ করে দেয়া হবে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.