Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

সুফিবাদই পাল্টে দিয়েছে এআর রহমানের জীবন

Sufism has changed the life of AR Rahman


নয় বছরের ছেলে এএস দিলীপ কুমারকে তার স্কুলের শিক্ষিকা বাড়ি চলে যেতে বললেন। কিছু না বুঝেই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরল সে। তার পর যা করতে হলো¬ তারও অর্থ সেই সময় অধরা ছিল তার কাছে। শুনল– তার বাবা মারা গেছেন। তাকে এবার মুখাগ্নি করতে হবে! খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

কিছু না বুঝেই সব নিয়ম পালন করেছিল ছেলেটি। এর পর শুরু হলো অভাবের সঙ্গে দিলীপের যুদ্ধ। ঘরে ছোট ছোট ভাইবোন, আর অসহায় মা কস্তুরী। সঞ্চয়ের প্রায় সবই শেষ হয়ে গিয়েছিল অসুস্থ বাবার চিকিৎসায়।

দিলীপের বাবা আরকে শেখর মালয়লম ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে সুরকার ছিলেন। বেশ কিছু ছবিতে কাজ করেছিলেন মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও। বাবার সঙ্গে কিছু সময় কি বোর্ড বাজাত ছোট্ট দিলীপ। মাত্র ৪৩ বছর বয়সে মারা যান আরকে শেখর।

এর পর আরও দুটি স্কুলে ভর্তি হয় দিলীপ। কিন্তু একদিকে সংসার, অন্যদিকে পড়াশোনা– দুই নৌকায় পা রেখে চলা সম্ভব হলো না। মায়ের সঙ্গে কথা বলে পড়াশোনায় ইতি টানল কিশোর দিলীপ। স্কুল ছেড়ে নিজেকে উৎসর্গ করল সংগীতের পায়ে।

দিলীপের আগ্রহ ছিল বাদ্যযন্ত্রে। ১১ বছর বয়স থেকে শুরু করে তিনি দীর্ঘদিন তালিম নেন প্রখ্যাত শিল্পী মাস্টার ধনরাজের কাছে। বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন ধনরাজ। তার কাছে তালিম নিয়ে নিজস্ব গানের দলও করেছিলেন দিলীপ। এ ছাড়া নিজের শহর চেন্নাইয়ের (তখনকার মাদ্রাজ) বিভিন্ন ব্যান্ডেও কিবোর্ড বাজাতেন। কিন্তু সংসারে অনটন থেকেই গিয়েছিল।

সমস্যার সুরাহার খোঁজে দিলীপের ধর্মপ্রাণ মা বিভিন্ন ধর্মস্থানে ছুটতেন। যদি কোথাও মনের শান্তি পাওয়া যায়। প্রথম থেকেই তাদের পরিবারে সব ধর্মের প্রতি সম্মান ও উদারতা বজায় ছিল।

জীবনের এমনই এক কঠিন সময়ে তারা সুফিবাদের সংস্পর্শে আসেন। পূর্ব পরিচিত এক সুফিসাধক তাদের পাশে দাঁড়ান। তিনি নিজেও সেই সময় বৃদ্ধ ও অসুস্থ। দিলীপের মা কস্তুরী ছিলেন তার মেয়ের মতো। এই সুফিসাধকের প্রভাবে সমস্যা জর্জরিত পরিবারটি শান্তি খুঁজে পায়।

১৯৮৬ সালে কস্তুরী তার সন্তানদের নিয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হন। তার নতুন নাম হয় করিমা। নতুন নাম নিজে ঠিক করতে না পেরে দিলীপ গেলেন এক জ্যোতিষীর কাছে।

তিনি গণনা করে বললেন, ‘আবদুল রহমান’ বা ‘আবদুল রহিম’ এর মধ্যে যে কোনো একটি নাম তার জন্য শুভ হবে।

১৯ বছরের তরুণের পছন্দ হলো ‘রহমান’ শব্দটি। তিনি ওটাই বেছে নিলেন। মা বললেন, তার আগে ‘আল্লারাখা’ কথাটা রাখতে। অর্থাৎ আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই তরুণ দিকপাল হয়ে উঠলেন। তার নামটি সংক্ষিপ্ত হলো ‘এআর রহমান’-এ। আজ নামটি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান।

সব ধর্মবিশ্বাসের প্রতি সম্মান এখনও তার জীবনের মূলমন্ত্র। তার সুরে বারবার ফিরে এসেছে সুফিগানের প্রভাব। খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেও এআর রহমান নিজের কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেন তার মাকেই।

জীবনসঙ্গিনী খোঁজার সময়েও মায়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন রহমান। জানিয়ে দিয়েছিলেন নিজের পছন্দ। বলেছিলেন তার স্ত্রী যেন উচ্চশিক্ষিত হন। পরিস্থিতির চাপে নিজের স্কুলজীবন অসমাপ্ত থেকে গিয়েছিল। সেই আক্ষেপ রয়ে গিয়েছিল রহমানের।

তাই তিনি চেয়েছিলেন তার স্ত্রী যেন শিক্ষিত হন। তবে একই সঙ্গে তাকে হতে হবে যথেষ্ট বিনয়ী। সে রকমই জানিয়েছিলেন রহমান। ছেলের পছন্দ অনুযায়ী পাত্রী খুঁজতে লাগলেন রহমানের মা।

দুই মেয়ে খাতিজা, রহিমা এবং ছেলে আমিনকে ঘিরে আবর্তিত হয় তাদের আনন্দ।
দুই মেয়ে খাতিজা, রহিমা এবং ছেলে আমিনকে ঘিরে আবর্তিত হয় তাদের আনন্দ।

একদিন ধর্মস্থানে এক তরুণীকে দেখে বেশ ভালো লাগল রহমানের মায়ের। তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন তরুণীর নাম মেহের। তার বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন করিমা। মেহেরের বাবা ছিলেন চেন্নাইয়ের ব্যবসায়ী।
কিন্তু তিনি এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না। বললেন, মেহেরের বড়বোন সায়রা বানুর এখনও বিয়ে হয়নি। আগে সায়রার বিয়ে হবে। তার পর মেহেরের পালা। শুনে প্রথমে কিছুটা হতোদ্যম হয়ে পড়লেও সায়রার সঙ্গে একবার কথা বলতে চাইলেন করিমা।

সায়রা বানুকে দেখার পর করিমা বুঝলেন, তার ছেলের পাশে এই তরুণী মেহেরের থেকেও বেশি মানানসই। দুই বাড়ির সম্মতিতে ঠিক হলো বিয়ে। বিয়ের আগে দেখা হলো আল্লারাখা ও সায়রার।

হবু স্ত্রীকে আল্লারাখা বললেন, এমনও হতে পারে রেস্তোরাঁয় নৈশভোজে গিয়ে হঠাৎ তার মাথায় কোনো গানের সুর এলো। তিনি কিন্তু ডিনার ফেলে বাড়ি ফিরে বসে যাবেন গান নিয়ে। সায়রা কি রাজি আছেন তাকে বিয়ে করতে? সলজ্জ হেসে সম্মতি জানিয়েছিলেন সায়রা বানু।

১৯৯৫ সালের মার্চে বিয়ে হয় তাদের। তখন রহমানের বয়স ২৭ বছর। সায়রা ২১ বছরের তরুণী। গত আড়াই দশক ধরে তারকা স্বামীর পাশে সায়রা বানু থেকেছেন তাদের যাত্রাপথের নৌকার হাল ধরে থেকে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.