Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের আবিষ্কারক সারাহ গিলবার্ট যা বললেন


ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন চ্যাডক্স১এনকোভ-১৯ সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীদের দেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রথম ফল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রথম ক্লিনিকাল ট্রায়ালে ভ্যাকসিনটি ‘নিরাপদ’ এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা ‘উজ্জীবিত’ করতে পারে বলে প্রমাণ পাওয়ার দাবি করেছেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা।

সোমবার বিখ্যাত আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যারা এই ভ্যাকসিনটির দু’টি ডোজ গ্রহণ করেছিলেন তাদের শরীরে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধপ্রস্ততকারক জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা যৌথভাবে এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ৭৭ জনের দেহে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়েছিল। পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবীদের দেহে বড় ধরনের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

তারা বলেছেন, ভ্যাকসিনটি যাদের প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি এবং শ্বেত রক্তকণিকা (হোয়াইট ব্লাড সেল) তৈরি হয়; যা শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম হয়েছে।

অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কারক দলের প্রধান সারাহ গিলবার্ট বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণে আমাদের ভ্যাকসিন কাজ করবে কিনা, সেটি নিশ্চিত হতে এখনও আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। তবে প্রাথমিক এই ফল বেশ আশাব্যাঞ্জক।

তিনি বলেন, সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষার জন্য শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা বাড়ানো দরকার সেটি এখনও আমরা জানি না। গিলবার্ট বলেন, কোভিড-১৯ সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানা দরকার গবেষকদের। এছাড়া শেষ ধাপের পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া দরকার; যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। অক্সফোর্ড ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন শেষ ও মধ্য-ধাপের পরীক্ষায় পৌঁছেছে।

অক্সফোর্ড ছাড়াও চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক ও সিনোফার্মের দুটি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক মডার্নার একটি ভ্যাকসিন শেষ ধাপের পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে।

‘কার্যকর এবং নিরাপদ’ প্রমাণিত হলে নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন এবং ভ্যাকসিন দ্রুত পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে অক্সফোর্ড এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করেছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, মহামারির এই সময়ে তারা ভ্যাকসিনটি থেকে কোনও ধরনের মুনাফা লাভের চেষ্টা করবে না। গবেষকরা বলেছেন, কন্ট্রোল গ্রুপের তুলনায় ভ্যাকসিন যাদের প্রয়োগ করা হয়েছিল তাদের শরীরে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তবে প্যারাসিটামল সেবনের মাধ্যমে তা কমানো যেতে পারে। একই সঙ্গে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের ফলে তীব্র কোনও কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয়নি।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার বায়োফার্মাসিউটিক্যালস রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মেনে প্যাঙ্গালস বলেছেন, আজকের ফল আমাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেছে যে ভ্যাকসিনটি কাজ করবে। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে বৃহৎ পরিসরে ভ্যাকসিনটির উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীদের এই ভ্যাকসিনকে বড় ধরনের প্রতিশ্রুতিশীল উদ্ভাবন হিসেবে মনে করা হচ্ছে। তবে এই ভ্যাকসিন করোনার বিরুদ্ধে যথেষ্ট সুরক্ষা দেবে কিনা; সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না। ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ও সুরক্ষার ব্যাপারে জানতে বৃহৎ পরিসরে দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল এবং যুক্তরাষ্ট্রে পরীক্ষা চলমান রয়েছে।

যুক্তরাজ্য অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনের ১০ কোটি ডোজপ্রাপ্তি নিশ্চিতে চুক্তি করেছে।

আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে দেয়ার জন্য ভ্যাকসিনটি যথেষ্ট নিরাপদ কিনা সেটি জানাই ছিল প্রথম ধাপের পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য। ভ্যাকসিনটি প্রয়োগে শরীরে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে পারে বলে প্রথম ধাপের পরীক্ষার ফলে জানানো হয়েছে।

প্রথম ধাপের ফল আজ প্রকাশিত হলেও অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনটির তৃতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলে ৪২ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে পরীক্ষার ফল পেতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। ভ্যাকসিনটির তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার মানুষের দেহে তা প্রয়োগ করবে অক্সফোর্ড। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার ও ব্রাজিলে ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে ভ্যাকসিনটি দেয়া হবে।

চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ নামের এই ভ্যাকসিনটি নজিরবিহীন গতিতে তৈরি করেছেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা।

নভেল করোনাভাইরাসের দুর্বল প্রজাতির একটি অংশ (যা মূলত সাধারণ সর্দিকাশির দুর্বল ভাইরাস বা অ্যাডেনোভাইরাস হিসেবে পরিচিত) ও জিন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এই ভ্যাকসিন। ভাইরাসের দুর্বল সংস্করণটি শিম্পাঞ্জিকে সংক্রমিত করে। অক্সফোর্ডের গবেষকরা ভাইরাসটির জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি শনাক্ত হয়। এর পর বিশ্বের দুই শতাধিক দেশে ছড়িয়ে প্রায় দেড় কোটি মানুষকে আক্রান্ত এবং ৬ লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কাড়লেও এখন পর্যন্ত এর কোনও ভ্যাকসিন কিংবা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। তবে বিশ্ববাসীকে সবার আগে এই মহামারি মোকাবিলায় সুখবর দিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.