Beanibazarview24.com
ঘুষ দাবি করে তা না পেয়েই পুলিশ রায়হান আহমদকে মেরে ফেলেছে বলে দাবি করেছেন তার মা সালমা বেগম। রায়হান কোনো অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত নয় বলেও দাবি তার।
রোববার (১১ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকায় রায়হান আহমদের বাসায় গেলে তার মা আর্তনাদ করে এমনটি বলেন।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সালমা বেগম বলেন, ‘ঘুষের টেকা না পেয়ে পুলিশে আমার ফুয়ারে নিয়া মারিলাইছে। আমার ফুয়ায় কোনো অপরাধ করছে না। পুলিশ আমার বুক খালি করিলাইছে।’
ছেলের লাশের সামনে বসে এমন বিলাপ করছিলেন সালমা বেগম। এসময় বারবার মূর্ছাও যাচ্ছিলেন তিনি।
রায়হানের মা আহাজারি করে বলেন, যদি আমার ছেলে জনতার হাতে মার খেতো তবে তার চেহারা বা বুকে-পিঠে মারের দাগ থাকতো। কিন্তু আমার ছেলের বুক-পিঠ এবং চেহারা সম্পূর্ণ অক্ষত। শুধু হাটুর নিচের প্রহারের দাগ এবং হাতের আঙ্গুল ও নখে আঘাতের চিহ্ন। শুনেছি, পুলিশ নির্যাতন করলে নাকি এসব স্থানেই আঘাত করে।
রোববার (১১ অক্টোবর) ভোরে রায়হান উদ্দিন (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে দাবি করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। পরে বলা হয় ছিনতাইকারীদের মারধরে রায়হান নিহত হন। যদিও ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজে গণপিটুনি বা মারধরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় নি।
রায়হানের পরিবারের সদস্যরা জানান, নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ার গুলতেরা মঞ্জিলের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। নগরের মিরের ময়দান এলাকায় শাহজালাল ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে এক চিকিৎসকের সহকারি হিসেবে কাজ করতেন রায়হান। তার দুই মাস বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।
পুলিশই রায়হানকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন রায়হানের চাচা (সৎ বাবা) হাবিবুল্লাহও। ঘটনার বর্ণণা দিয়ে তিনি বলেন, রোববার ভোর ৪টার দিকে একটি অপরিচিত নাম্বার (০১৭৮৩৫৬১১১১) থেকে আমাকে ফোন দেওয়া হয়। ফোন ধরার পর কথা বলে রায়হান। সে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকে ‘আমারে বাঁচাওরেবা। আমারে বাঁচাও।’ এরপর আমি তার অবস্থান জানতে চাইলে সে জানায়, বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছে। এসময় ফাঁড়িতে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে বলে রায়হান।
হাবিবুল্লাহ বলেন, ফোন পেয়ে সাথেসাথেই আমি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যাই। তখন সেখানে অবস্থানরত একজন বলেন, সে (রায়হান) ঘুমিয়ে পড়েছে। এখন দেখা করা যাবে না।
এরপর পাশ্ববর্তী কুদরতউল্লাহ মসজিদে নামাজ আদায় করে সকালে আবার পুলিশ ফাঁড়িতে যান উল্লেখ করে হাবিবুল্লাহ বলেন, ফাঁড়িতে যাওয়ার পর একজন লোক আমাকে বলেন, ‘আপনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথাছিলো। টাকা এনেছেন?’ কিছু টাকা এনেছি জানানোর পর তারা আমাকে বসিয়ে রাখেন। এরপর ১০টার দিকে বলেন, ‘আপনার ছেলের শরীর খারাপ করেছিলো। তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওসমানী হাসপাতাল গিয়ে তাকে দেখতে পারবেন।’
হাবিবুল্লাহ বলেন, এরপর আমি ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পারি হিমঘরে রায়হানের লাশ পড়ে আছে। পুলিশই নির্যাতন করে রায়হানকে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ তার।
সিলেট মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, কিভাবে রায়হান উদ্দিন মারা গেলেন তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। তবে এখন পর্যন্ত কিছু পাইনি।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.