Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হ.ত্যা: আ.হ.তদের ফেলে রাখা হয় ডা.স্টবি.নে


চাকরিতে ভালো বেতনের আশ্বা’সে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বাংলাদেশিদের পাচার করা হতো লিবিয়ায়। সেখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্র’রোচনায় তাদের ‘ভাগ্য পরিবর্তনের’ প্রলো’ভন দেখিয়ে নেওয়া হতো আরও টাকা। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে পরের বছরের মে মাস পর্যন্ত অনেক বাংলাদেশিকে এভাবে লিবিয়ায় পাচার করে একটি চক্র।

২০২০ সালের ২৭ মে লিবিয়ায় পাচার হওয়া ২৬ বাংলাদেশিকে সাহারা ম’রুভূমি অঞ্চলের মিজদায় একসঙ্গে বৃষ্টির মতো গু’লি করে নির্বিচারে হ’ত্যা করে লিবিয়ার মাফিয়ারা। এতে আ’হত হন আরও ১২ বাংলাদেশি।

ওই ঘটনায় রাজধানীর পল্টন থা’নার মা’মলায় সম্প্রতি ৪১ জনকে অ’ভিযু’ক্ত করে মানবপাচার আইনের ৬/৭/৮/১০ এবং পেনাল কোডের ৩০২/৩২৬/২৬ ধারায় আ’দালতে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। চার্জশিটে এসব কথা উল্লেখ করেছেন মা’মলার ত’দন্ত কর্মক’র্তা সিআইডির পু’লিশ পরিদর্শক আছলাম আলী।

চার্জশিট আমলে নিয়ে পাঁচজনকে অব্যাহতি দিয়েছেন ঢাকার মানবপাচার অ’প’রাধ দমন ট্রাইব্যুনাল। মা’মলা’টি এখন বিচার শুরুর অ’পেক্ষায় রয়েছে।

ভাগ্য পরিবর্তনের প্রলো’ভনে নেওয়া হতো মোটা অংকের টাকা

মা’মলার ত’দন্তকালে পাওয়া সাক্ষ্য-প্রমাণ ও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় জানা যায়, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে পরের বছরের মে মাস পর্যন্ত আ’সামিরা লিবিয়ায় ভালো বেতনের চাকরির প্রলো’ভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে আন্তর্জাতিক রুট ব্যবহার করে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ভিকটিম’দের লিবিয়ায় পাচার করেন। মা’মলার ভিকটিম সাইদুল, তরিকুল ও আ’সামিদের স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দি এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পাচারের পর নি’হতদের পরিবারের কাছ থেকে নেওয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা না দিলে তাদের করা হতো অমানবিক নি’র্যা’তন।

যেভাবে পাঠানো হতো লিবিয়ায়
মা’মলার চার্জশিটে ত’দন্তকারী কর্মক’র্তা উল্লেখ করেন, নি’হত বিজয়ের পরিবারের কাছ থেকে আ’সামি জাফর চার লাখ ২০ হাজার টাকা আদায় করেন। এরপর আ’সামি তানজিম, নাজমুল, জোবর আলী, হেলাল মিয়া, হাজি কা’মাল, আলী হোসেন, শাহাদত, শহীদ মিয়া, খবির উদ্দিনের মাধ্যমে আ’সামি জৌতি নুর শাওন ভা’রতের ওয়ানওয়ে ট্যুরিস্ট ভিসা দিয়ে বাসে করে ঢাকা থেকে কলকাতায় ভিকটিমকে পাঠান। সেখান থেকে প্লেনে মুম্বাই হয়ে দুবাই পাঠানো হয়। মুম্বাই থেকে মিসর হয়ে নেওয়া হয় লিবিয়ার বেনগাজীতে।

আ’হত সাইদুলের পরিবারের কাছ থেকে আ’সামি সজিব ও রবিউল চার লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন। এরপর আ’সামি নজরুল মোল্লা, জাহিদুল শেখ, জাকির মাতুব্বর, আমির হোসেন, জুলহাস সরদার, বুবু বেগম, নুর হোসেন শেখ, ই’মাম হোসেন শেখ, আকবর হোসেন, নাসির বয়াতি, রেজাউল বয়াতি ও রব মোড়লের সহায়তায় একইভাবে বেনগাজীতে পাঠানো হয়।

ভিকটিম তরিকুলের পরিবার থেকে আ’সামি হাজি কা’মাল সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়ে তাকে লিবিয়ায় পাঠান। এরপর লিবিয়ায় থাকা বাংলাদেশি দালাল জাফর, স্বপন, মিন্টু, আমির, নজরুল, ইস’লাম মোল্লা, তানজিলুর ও শাহাদত হোসেনরা লিবিয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যাম্পে ভিকটিম’দের আ’ট’ক রাখেন। সেখান থেকে ১০-১৫ দিন পার হওয়ার পরও ভিকটিম’দের কোনো কাজ না দিয়ে তাদের নি’র্যা’তন করতে থাকেন।

মিজদায় সেদিন যা ঘটেছিল
মা’মলার চার্জশিটে ত’দন্ত কর্মক’র্তা উল্লেখ করেন, ভিকটিম’রা দীর্ঘ চার মাস লিবিয়ার ওই ক্যাম্পে মানবেতর জীবনযাপন করেন। এরপর উন্নত জীবনযাপনের আশ্বা’সে ২০২০ সালের ১৬ মে ইতালিতে পাঠানোর জন্য তিনটি মাইক্রোবাসে করে বিজয়, সাইদুল ও তরিকুলসহ ৩০ জন বাঙালিকে ত্রিপলির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করানো হয়। মাগরিবের নামাজের আগে বিস্তীর্ণ ম’রুভূমির ফাঁকা রাস্তায় পৌঁছালে লিবিয়ার অ’স্ত্রধারী স’ন্ত্রাসীরা ভিকটিম’দের মাইক্রোবাসকে লক্ষ্য করে গু’লি চালায়। এরপর রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে তাদের পিকআপ ভ্যানে উঠিয়ে গো’পন আস্তানায় নিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে।

সেখানে তিনদিন আ’ট’কে রাখার পর ২৯ জন বাংলাদেশিকে মিজদার আরেক মাফিয়ার কাছে বিক্রি করে দেয়। মিজদার মাফিয়ারা পরের দিন ম’রুভূমির ভেতর একটি গো’পন ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে ৩৮ জন বাংলাদেশি এবং প্রায় ১৫০ জন আফ্রিকান (ঘানা, নাইজেরিয়া ও সুদানের নাগরিক) আ’ট’ক ছিল। মাফিয়ারা বাংলাদেশিসহ আ’ট’কদের প্লাস্টিকের পাইপ, লোহার শিকল ও ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে নি’র্যা’তন করতে থাকে। ভিকটিম’দের নি’র্যা’তনের চি’ৎকার ইমোতে ভ’য়েস কলের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে ১২ হাজার ইউএস ডলার মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের জন্য মাফিয়াদের নি’র্যা’তনের মাত্রা দিনের পর দিন বাড়তে থাকে। আ’ট’ক আফ্রিকানদের নির্বিচারে গু’লি করে হ’ত্যা করে মুক্তিপণের জন্য ভীতি ও ত্রাসের সৃষ্টি করে।

এ অবস্থায় ২৭ মে সকাল ৯টায় মাফিয়ারা ক্যাম্পে ঢুকে মুক্তিপণের জন্য পুনরায় আফ্রিকানদের ওপর নি’র্যা’তন করতে থাকে। আফ্রিকানরা মাফিয়াদের উপর পাল্টা আক্রমণ করলে মাফিয়ারা তাদের পি’স্তল দিয়ে গু’লি করে ২/৩ জন আফ্রিকান ও বাঙালিকে হ’ত্যা করে। দুপুর ১২টার দিকে ক্যাম্পে আ’ট’ক আফ্রিকানরা প্রতিশোধের জন্য মাফিয়াদের লিডারকে পি’টিয়ে হ’ত্যা করে। এর জেরে মাফিয়ারা তাদের লিডার হ’ত্যার বিষয়টি তাদের সহযোগী অন্যান্য অ’জ্ঞাতপরিচয় মাফিয়াদের মোবাইল ফোনে জানায়।

দুপুর ২টার দিকে অ’স্ত্রধারী মাফিয়ারা ট্যাংক ও গাড়িসহ ক্যাম্পে ঢুকে প্রতিশোধ হিসেবে একযোগে বৃষ্টির মতো আফ্রিকান ও বাঙালিদের উপর নির্বিচারে গু’লি চালাতে থাকে। এতে ভিকটিম বিজয়সহ ২৬ বাংলাদেশি নি’হত হন এবং ভিকটিম সাইদুল ও তরিকুলসহ ১২ জন গুরুতর আ’হত হন।

স’ন্ত্রাসীরা আ’হতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতা’লে নিয়ে যায়। হাসপাতা’লে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আ’হতদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় রাতে তাদের ম’রুভূমির ভেতরে একটি ডাস্টবিনের কাছে ফেলে রেখে চলে যায়। সকালে ম’রুভূমির পথ ধরে দেড় কিলোমিটার হেঁটে যাওয়ার পথে দুজন লোকের সঙ্গে দেখা হওয়ায় ভিকটিম’রা তাদের ঘটনার বিষয়ে সব জানানোর কিছু পর লিবিয়ান সে’নাবাহিনী এসে ১২ জনকে উ’দ্ধার করে ত্রিপলীর ইউনিভা’র্সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতা’লে নিয়ে যায়। পরে লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতবাসের সহায়তায় ভিকটিম’দের হাসপাতলে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ হলে দেশে ফেরত পাঠায়।

এ ঘটনায় ২০২০ সালের ২ জুন ৩৮ জনকে আ’সামি করে রাজধানীর পল্টন থা’নায় মা’মলা করেন পু’লিশের অ’প’রাধ ত’দন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) এইচ এম রাশেদ ফজল। মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে এবং হ’ত্যার অ’ভিযোগে মা’মলা’টি দায়ের করা হয়। মা’মলা নম্বর- ১(৬)২০। মা’মলার এজাহারে আ’সামি হিসেবে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অ’জ্ঞাতপরিচয় আ’সামি করা হয়েছে ৩০-৩৫ জনকে।

মা’মলার অ’ভিযু’ক্তরা হলেন- তানজিদ ওরফে তানজিমূল ওরফে তানজিরুল (৩৬), জোবর আলী (৬২), জাফর মিয়া (৩৮), স্বপন মিয়া (২৯), মিন্টু মিয়া (৪১), শাহিন বাবু (৪৫), আলী হোসেন (৩৭), আমির হোসেন (৫৫), নজরুল মোল্লা (৪৩), আ. রব মোড়ল (৪০), সজীব মিয়া (২৫), মুন্নী আক্তার রূপসী (২০), রবিউল মিয়া (৪২), রুবেল শেখ (৩৬), আসুদুল জামান (৩৪), বাহারুল আলম (৬৭), নাজমুল হাসান (২৫), হেলাল মিয়া (৪২), কা’মালউদ্দিন (৫২), কা’মাল হোসেন (৪০), রাশিদা বেগম (৪২), নুর হোসেন শেখ (৫৫), ই’মাম হোসেন শেখ (৩৫), আকবর হোসেন শেখ (৩২), বুলু বেগম (৩৮), জুলহাস সরদার (৪৫), দিনা বেগম (২৫), শাহাদাত হোসাইন (৩০), জাহিদুল আলম (৪২), জাকির মাতুব্বর (৬০), লিয়াকত আলী শেখ (৫০), নাসির বয়াতী (২৫), রেজাউল বয়াতী (৩৮), হাজী শহীদ মিয়া (৬৩), খবির উদ্দিন (৪৭), পারভেজ হাসান, কা’মছার মুন্সি (৩৫), মাহাবুব মুন্সি (৫৩), পারভেজ আহমেদ (৩৩), নজরুল ইস’লাম সুমন (৩৮) ও কাউসার (৪০)।

অন্যদিকে শেখ মো. মাহাবুবুর রহমান (৪৯) ও শেখ সাহিদুর রহমানের (৪০) বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির আবেদন করেন মা’মলার ত’দন্ত কর্মক’র্তা। এছাড়া সাদ্দাম (২৬), কুদ্দুস বয়াতি (২৭) ও লালনের নাম ঠিকানা সঠিক না থাকায় তাদের মা’মলার দায় থেকে অব্যাহতি দিতে আবেদন করেন ত’দন্ত কর্মক’র্তা।

ঢাকার মানবপাচার অ’প’রাধ দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌশুলি সাজ্জাদুল হক শিহাব জাগো নিউজকে বলেন, লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে নির্বিচারে গু’লি করে হ’ত্যার ঘটনায় ৪১ জনকে অ’ভিযু’ক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি। চার্জশিটে পাঁচজনকে অব্যাহতির আবেদন করেছেন মা’মলার ত’দন্ত কর্মক’র্তা। আ’দালত চার্জশিটটি আমলে নিয়ে পাঁচজনকে মা’মলার দায় থেকে অব্যাহতি দেন। মা’মলা’টি এখন বিচার শুরুর অ’পেক্ষায় রয়েছে।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.