Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

লন্ডনের ক্রয়ডন কাউন্সিলের মেয়র হলেন সিলেটের শেরওয়ান চৌধুরী


যুক্তরাজ্যে লন্ডনের ক্রয়ডন কাউন্সিলের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কৃতিসন্তান শেরওয়ান চৌধুরী। মেয়র হিসেবে মঙ্গলবার (৪ মে) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি।

লন্ডনের ৩২টি বারার মধ্যে সবচেয়ে বড় বারা ক্রয়ডনের মেয়র হিসেবে আগামী এক বছর দায়িত্ব পালন করবেন সিলেটের শেরওয়ান চৌধুরী।

মঙ্গলাবার তাঁর কাঁধে দায়িত্ব তুলে দেন সদ্য বিদায়ী মেয়র মেডি হেন্ডসন। এসময় তাঁর (শেরওয়ান) গলায় ৫ কেজি ওজনের গোল্ড মেডেল পরিয়ে নতুন মেয়র হিসেবে বরণ করে নেয়া হয়। এই আনন্দঘন মুহূর্তে নবনির্বাচিত মেয়রের স্ত্রী রহিমা চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।

করোনা মহামারির কারণে মেয়র শেরওয়ান চৌধুরীকে বরণ করে নিতে মঙ্গলবার বিকেলে ক্রয়ডনের টাউন হলে লন্ডন সময় বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা) সীমিত পরিসরে সরাসরি এক অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্টানের মাধ্যমেই হস্তান্তর হয় দায়িত্বভার। এ সময় কাউন্সিলের ৭০ জন কাউন্সিলর ছাড়াও কমিউনিটির কর্তাব্যক্তিরা ভার্চুয়ালি অনুষ্টানে যোগ দেন। এতে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়।

সরাসরি ও ভার্চুয়াল অনুষ্টানে নতুন মেয়র শেরওয়ান চৌধুরীকে করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান আগত অতিথিরা। ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জকিগঞ্জ কমিউনিটির বেশ কয়েকজন ব্যক্তিও উপস্থিত ছিলেন। ভিডিওর মাধ্যমে তাঁদের অনেকের মুখেই এ সময় দেখা যায় হাসিমাখা মুখ।

অনুষ্ঠানের পরপরই এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ হয় যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জকিগঞ্জের মানুষের বৃহত্তম সংগঠন ’জকিগঞ্জ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকে’র সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেইনের। তিনি সিলেটভিউকে বলেন, তিনি (শেরওয়ান) আমাদের গর্বিত সন্তান। তিনিই যুক্তরাজ্যে জকিগঞ্জের একমাত্র ব্যক্তি- যিনি মেইন স্টিম রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

জানা গেছে, সিলেটের জকিগঞ্জের আটগ্রাম এলাকার চারিগ্রামের আব্দুর রকিব চৌধুরীর ছেলে শেরওয়ান চৌধুরী ১৯৭৬ সালের দিকে পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে। বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়ে সিলেট সরকারি কলেজে ছাত্র রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকার কারণে সেখানে গিয়েও যুক্ত হন রাজনীতির অঙ্গনে। তবে সেখানে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের কোন শাখার সাথে যুক্ত না হয়ে সরাসরি ব্রিটিশ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৯০ সালের দিকে ব্রিটিশ লেবার পার্টিতে যোগ দেন তিনি।

মাত্র চার বছরের মধ্যে তিনি নিজেকে রাজনীতির অঙ্গনে পাকাপোক্ত করে নিতে সক্ষম হন। ১৯৯৪ সালে সেন্ট্রাল লন্ডনের ক্রয়ডনের বেউলা ওয়ার্ড থেকে লেবার পার্টির মনোনয়ন নিয়ে জয়লাভ করেন। স্থানীয়ভাবে একজন সফল কাউন্সিলর হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন শেরওয়ান চৌধুরী। এরপর আর পেছনের দিকে থাকাতে হয়নি তাঁকে।

২০০৬ সালে নরবারি ওয়ার্ড থেকে পুণরায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১০,২০১৪ ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে নির্বাচিত হন কাউন্সিলর। এভাবেই মোট ৫ বার লেবার পার্টি থেকে নির্বাচন করে কাউন্সিলর হিসেবে বিজয়ের মালা বরণ করে নেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্রয়ডন কাউন্সিলে মোট ৭০ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। একজন মেয়রের পাশাপাশি কাউন্সিলরদের মধ্যে থেকে একজন ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর দল অর্থাৎ লেবার পার্টি থেকে তিনি ডেপুটি মেয়রের জন্য সিলেক্ট হন শেরওয়ান চৌধুরী। এরপর কাউন্সিল অধিবেশনে তাঁকে ডেপুটি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। একই পদ্ধতিতে এবার তিনি ক্রয়ডন বারার সর্বোচ্চ মেয়র পদে আসীন হলেন। এই বারার মোট ৩ লাখ ৮৪ হাজার ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে শেরওয়ান এক কন্যা ও দুই পুত্রের জনক। তাঁর স্ত্রী রহিমা চৌধুরী ক্রয়ডনের স্থানীয় একটি স্কুলে দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন।

তিনিই যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জকিগঞ্জের বাসিন্দাদের মধ্যে একমাত্র ব্যক্তি যিনি একাধারে কাউন্সিলর, পরবর্তীতে ডেপুটি মেয়র ও এবার সরাসরি মেয়রের পদ অলংকৃত করলেন। তাঁর এমন সাফল্যে যুক্তরাজ্যে শুধু জকিগঞ্জের কমিউনিটিতে নয় গোটা বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিরাজ করছে এক মহানন্দ। ফেসবুকের টাইম লাইনে গত কয়েকদিন থেকে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। ফেসবুকে অনেকেই শেরওয়ান চৌধুরীর ছবি দিয়ে পাঠাচ্ছেন অভিনন্দন বার্তা।

শেরওয়ান চৌধুরী সেখানে রাজনীতির পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজাসেবা মূলক কার্যক্রমও। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত জকিগঞ্জের মানুষের বৃহত্তম সংগঠন ’জকিগঞ্জ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকে’র সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। পাশাপাশি জকিগঞ্জের শিক্ষাখাতে উন্নয়নের জন্য জকিগঞ্জ এডুকেশন ট্রাষ্ট ইউকে’র সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ক্রয়ডনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় তাৎক্ষনিক এক প্রতিক্রিয়ায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আলাপকালে শেরওয়ান চৌধুরী ক্রয়ডন বারা, লেবার পার্টি ও কমিউনিটির সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। সিলেটভিউয়ের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানুষের ভালোবাসায় আজ এ পর্যন্ত এসেছি। বাকি জীবনটুক মানুষের জন্য কাজ করে মরতে পারলে সার্থক জীবন হবে বলে মন্তব্য করেন নবনির্বাচিত মেয়র শেরওয়ান চৌধুরী।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.