Beanibazarview24.com
সিলেটে এবার চার হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে কোটিপতির মৃ’ত্যু
The millionaire died without getting treatment after visiting four hospitals in Sylhet
আবারও হৃ’দয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হলো সিলেট। সরকারি-বেসরকারি চার হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে ‘মারা গেলেন সিলেটের এক কোটিপতি ব্যবসায়ী।
বিনা চিকিৎসায় তার মৃ’ত্যুতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষো’ভ ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, বিনা চিকিৎসায় আর যেন কেউ মা’রা না যান।
শুক্রবার (০৫ জুন) ভোরে বিনা চিকিৎসায় মা’রা’ যাওয়া ওই ব্যক্তি বন্দরবাজারের ব্যবসায়ী আরএল ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী সিলেট নগরের কুমারপাড়ার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন খোকা (৫৪)।
এর আগে গত ১ জুন সিলেট নগরের ছয় হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে মা’রা যান নগরের কাজিরবাজার মোগলটুলা এলাকার (বাসা এ/৫) লেচু মিয়ার স্ত্রী মনোয়ার বেগম (৬৩)। মা’রা যাওয়া ওই নারী অ্যাজমাজনিত রোগের কারণে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ওই হৃ’দয়বিদারক ঘটনার চারদিনের মাথায় একই ধরনের নির্মম মৃ’ত্যুর ঘটনা ঘটলো।
প্রথম মৃ’ত্যুর ঘটনার পর স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করে চিঠি দেয়া হলেও আবারও ঘটলো প্রায় একই ঘটনা।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মৃত ইকবাল হোসেনের ছেলে তিহাম হোসেন বলেন, আমার মতো অন্য কেউ যেন তার বাবাকে বিনা চিকিৎসায় না হারান।
তিহাম হোসেন বলেন, কোটি টাকা খরচ দেব বলেছি; বাবার চিকিৎসা করতে চিকিৎসকদের কাছে মিনতি করেছি। বলেছি; আমার বাবা শ্বাস নিতে পারছেন না। তাকে দয়া করে একটু অক্সিজেন দেন। কোনো হাসপাতাল চিকিৎসা দেয়নি। এমনকি এক বোতল অক্সিজেনও দেয়নি। এরকম ঘটনা যেন আর কারও সঙ্গে না ঘটে বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিহাম।
কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে তিনি বলেন, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বাবার বুকব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন সোবাহানীঘাট এলাকার একটি হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্সের জন্য কল করি। অ্যাম্বুলেন্স বাসায় আসার পর দেখি, অক্সিজেন সিস্টেম ভাঙা। এ অবস্থায় রোগীকে সোবাহানীঘাটের ওই বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে বার বার তাদের অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করলেও রোগীকে রেখে নিয়মকানুন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান তারা। একপর্যায়ে জানান তারা রোগীকে রাখবেন না, নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। অনেক অনুরোধের পরও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দেননি তারা।
তিহাম বলেন, এরপর বাবাকে নিয়ে দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট হাসপাতালে যাই। সেখানে গেলে কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের হাসপাতালে সিট নেই, রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। তখন পরিচিত এক চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি পরামর্শ দেন শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে যাওয়ার জন্য।
শামসুদ্দিন হাসপাতালে গিয়ে সবকিছু বন্ধ দেখতে পাই। ১০-১৫ মিনিট পর এক নিরাপত্তাকর্মী গেটে এসে জানান হাসপাতালের সবাই ঘুমে। অন্য কোথাও রোগীকে নিয়ে যান। তখন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা হই। সেখানে জরুরি বিভাগে যাওয়ার পর রোগীকে সিসিইউতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তারা। সেখানে ওয়ার্ডের ভেতরে না নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় একটি ইসিজি করা হয়। এরপরই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার বাবাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও রোগী ভর্তি করছে না সিলেটের কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল। এ নিয়ে ক্ষো’ভ জানিয়েছেন মা’রা যাওয়া রোগীর পরিবারের স্বজনসহ সিলেটের সচেতন নাগরিকরা।
বিনা চিকিৎসায় ব্যবসায়ীর মৃ’ত্যু নিয়ে ক্ষো’ভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল।
নিজের ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, সিলেটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, আরএল ইলেকট্রনিকসের মালিক ইকবাল হোসেন খোকা ভাই শুক্রবার ভোরে মা’রা গেছেন। দুদিন আগে ইকবাল ভাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে, তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন। ইকবাল ভাই এভাবে চলে গেলেন। সিলেট শহরে তার চিকিৎসা দেয়া গেল না। আমাদের ক্ষমা করবেন ইকবাল ভাই।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.