Beanibazarview24.com
মেয়ে উচ্চশিক্ষা লাভে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ায় দেশে থাকা পরিবারকে একঘরে করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মসজিদ কমিটির সদস্যরা মেয়ে বিদেশে গিয়ে অন্য ধর্মের ছেলেকে বিয়ে করেছে এবং ছোট কাপড় পরে, এমন অভিযোগ তুলে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়। এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের এক পরিবারের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী পরিবারের নারী সদস্য উচ্চশিক্ষার জন্য ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া ওই নারী শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তাকে বিদেশ পাঠানোয় দেশে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে স্থানীয় মসজিদ কমিটি। এই অভিযোগ লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে ওই শিক্ষার্থীর বাবা ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। তাতে বলা হয়, তার মেয়ে ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। একটি সামাজিক সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কও ছিলেন তিনি। নারী অধিকার নিয়ে তিনি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এ কারণে তার মেয়ে এলাকার কিছু মানুষের বিরাগভাজন হন।
অভিযোগে তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মেয়ের নামে কুৎসা রটায় স্থানীয় কিছু লোক। এ ঘটনায় সিলেট শাহপরাণ থানায় তার মেয়ে জিডিও করেছিলেন। পরে গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষা লাভে আমেরিকা চলে যান তার মেয়ে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আমেরিকায় অবস্থানরত মেয়ের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে এলাকায় নানা অপবাদ প্রচার করে একটি গোষ্ঠি। বলা হয়, তার মেয়ে নাস্তিক হয়ে গেছে। এরপর স্থানীয় মসজিদ কমিটি সভা ডেকে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত করার ঘোষণা দেয়। এ ঘটনায় তিনি সামাজিকভাবে চাপে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া ওই নারী শিক্ষার্থীর ভাষ্য, ‘গত ২৬ ডিসেম্বর আমি উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকায় আসি। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি গোষ্ঠি ফেসবুকে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে। বিদেশ গিয়ে ছোট কাপড় পরছি, নাস্তিক হয়ে গেছি- এই সেই নানা কিছু গল্প তারা তাদের মতো বানাতে থাকে। পরে স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি আমার বাবাকে নিয়ে জুমার নামাজের সময় সালিশ বৈঠক ডাকেন।
গুরুতর অসুস্থ থাকায় বাবা যেতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে আমার পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটি সমাধান হয়ে যাবে। এ বিষয়ে মেয়ের বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে।’
কুলাউড়ার ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, সামাজিকভাবে যেন কোনও ধরনের হয়রানি না করা হয়, সে জন্য অভিযোগ পাওয়ার পর পরেই আমি মসজিদ কমিটিকে সতর্ক করেছি। তারাও বলেছে এ বিষয়ে আর কোনও কথা বলবে না। সেই সঙ্গে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি উভয়পক্ষকে অফিসে আসতে বলেছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানকেও বলেছি বিষয়টি দেখভাল করতে। ওই পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় থানাকেও অবগত করেছি। ওই ছাত্রীর বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে, গৃহীত পদক্ষেপে তিনি আশ্বস্ত হয়েছেন।
-বাংলা ট্রিবিউন
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.