Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

বিয়ানীবাজারে এক বছর পর ব্যবসায়ী কামাল হ’ত্যার র’হস্য উদঘা’টন


এক বছর পর বিয়ানীবাজারের ব্যবসায়ী কামাল হ’ত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। উ’দ্ধার করা হয়েছে ব্যবসায়ীর কং’কাল। এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্তার অভিযোগে তিন আসামীকে গ্রে’ফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে এক আসামী ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানব’ন্দি দিয়েছে। বাকি দুই আসামীরও দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।

হ’ত্যার ঘটনায় ধৃত আসামীর হলো, জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামের দোকান কর্মচারী আমির আলী, ব্যবসায়ী হেলাল আহমদ ও ব্যবসায়ী শহিদুর রহমান। গতকাল বুধবার বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ দোকান কর্মচারী আমির আলীসহ ধৃত ৩ জনকে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট জামিন নামঞ্জুর করে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আমির আলী হ’ত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অপর দু’আসামীর দু’দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী (আইও) কর্মকর্তা মো. জাহিদুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত অপর আসামীদের গ্রে’ফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

পুলিশসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ৫ জুলাই শুক্রবার নৃশংস এ হ’ত্যাকান্ড ঘটে বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের আলীনগর খলাগ্রামে। চারখাই বাজারের ‘কামাল স্টোর’ এর স্বত্বাধিকারী ছিলেন কামাল। তিনি একই ইউনিয়নের আদিনাবাদ (গিরদা) গ্রামের মৃত রকিব আলীর পুত্র। তিন ভাইয়ের মধ্যে কামাল আহমদ (৩৬) ছিলেন সবার ছোট এবং অবিবাহিত। দোকান মালিক কামাল ও কর্মচারী আমির আলী দোকানের ভেতরেই রাতযাপন করতেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চারখাই বাজারের কামাল স্টোরে বেচাকেনা খুব ভালো ছিল। কামাল আহমদ একা কুলিয়ে উঠতে না পেরে দোকানে কর্মচারী নিয়োগ করেন। এক পর্যায়ে গত বছরের জুন মাসে মালিকের অগোচরে দোকান কর্মচারী আমির আলী কামাল স্টোর থেকে ৮-১০ লক্ষ টাকার সিগারেট ও দুধ চুরি করে। এরপর এসব মালামাল জকিগঞ্জ উপজেলার আটগ্রামের ফাতেমা স্টোরের জহুরুল, হেলাল স্টোরের হেলাল আহমদ ও শহিদ স্টোরের শহিদুর রহমানের কাছে বিক্রি করে। কিছুদিন পর চুরির বিষয়টি প্রকাশ পেলে কামাল আহমদ ওই টাকার জন্য আমির আলীকে চাপ দেন। আমির আলী টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করেন। এক পর্যায়ে টাকা আত্মসাৎ করতে দোকান কর্মচারী ও তার সহযোগীরা আটগ্রামে বসে কামালকে হ’ত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত বছরের ৫ জুলাই শুক্রবার বেলা ২টা থেকে ৩টার মধ্যে অত্যন্ত সুকৌশলে আমীর আলী ব্যবসায়ী কামাল আহমদকে তার নতুন বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তাকে হ’ত্যা করেন আমির, হেলাল, ছাব্বির, শহিদসহ আরো কয়েকজন। পরে তার লাশ ড্রামভর্তি করে পাশের ডোবায় ফেলে দেয়া হয়। এরপর হ’ত্যাকারীরা নিজ নিজ এলাকায় চলে যায়। কর্মচারি আমীর আলী যথারীতি দোকান খুলে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকে। ঘটনার দিন রাত থেকে কামালের খোঁজ না মেলায় আমির আলী প্রচার করে তিনি ব্যবসায়িক কাজে সিলেট গেছেন।

পরবর্তীতে বলে তিনি ভারতের আজমীর শরিফ জিয়ারতে চলে গেছেন। মাস দেড়েক পর একদিন রাতে হঠাৎ কর্মচারী আমির আলী দোকানের ২০-২৫ লক্ষ টাকার মালামাল ও দোকানে রক্ষিত নতুন বাড়ির দলিল চুরি করে পালিয়ে যায়। ফলে কামালের পরিবারের সন্দেহের তীর যায় আমির আলীর দিকে। গত বছরের ১০ অক্টোবর তার বড় ভাই চারখাই মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডের সভাপতি জালাল আহমদ বিয়ানীবাজার থানায় এ বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এরপর গত জানুয়ারি মাসে স্থানীয় বাঘবাড়ি এলাকার সিএনজি চালক জুবের আহমদের সহযোগিতায় জালাল আহমদ আটগ্রামে নিজ বাড়িতে আমির আলীকে খুঁজে পান। এ সময় তাকে আটক করা হলেও তার চাচা তাজ উদ্দিন তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

পরবর্তীতে ২৩ জানুয়ারি ধৃত ৩ জনসহ আরো কয়েকজনের নামোল্লেখ করে জালাল আহমদ থানায় হ’ত্যা মামলা দায়ের করেন। এভাবে আরো প্রায় ৬ মাস কেটে গেলে পুলিশ ঘটনার কোন রহস্য উদঘাটন কিংবা আসামী গ্রে’ফতার করতে পারেনি। গত সপ্তাহে মামলার বাদী বিয়ানীবাজার থানার ওসি অবনী শংকর করের সাথে সাক্ষাত করেন। ওসি তাকে এক সপ্তাহ ধৈর্য্য ধরার পরামর্শ দেন।

এরপর গত সোমবার রাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল হক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে জকিগঞ্জ থেকে দোকান কর্মচারীসহ এজাহারভূক্ত ৩ আসামীকে গ্রে’ফতার করেন। পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ব্যবসায়ী কামাল হ’ত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এ সময় তারা অপর আসামীদের নাম এবং টাকা আত্মসাৎ করতে এ হ’ত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলেও পুলিশকে জানায়। পরদিন মঙ্গলবার আসামীদের সাথে নিয়ে ব্যবসায়ীর নতুন বাড়ির পাশের ডোবা থেকে পুলিশ তার কং’কাল উদ্ধার করে।

মামলার বাদী পরিবহন শ্রমিক নেতা জালাল আহমদ বলেন, ‘আমার ভাইয়ের খুনিদের চিহ্নিত করতে সিএনজি চালক জুবের আহমদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তিনি না হলে হয়তো এ মামলা অন্ধকারে থেকে যেত। এক বছর পরে হলেও আসামীদের গ্রে’ফতার করায় তিনি পুলিশ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি আত্মস্বীকৃত এসব খুনির বিচার দ্রুত সম্পন্ন করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।’

বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. জাহিদুল হক বলেন, আসামীরা চতুর হওয়াতে অল্প সময়ে তাদের গ্রে’ফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে জকিগঞ্জ সার্কেলের এএসপি সুদীপ্ত রায় ও থানার ওসি অবনী করের নেতৃত্বে বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শেষ পর্যন্ত আমরা সফল হয়েছি। তিনি বলেন, ধৃতদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে এবং জড়িত অপর আসামীদের শিগগির গ্রে’ফতার করা হবে। এ লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান পুলিশ পরিদর্শক জাহিদুল হক।

নতুন বাড়ি কিনলেন বাস করা হয়নি কামালের : নতুন বাড়ি কিনলেও সেখানে বসবাস করা হয়নি ব্যবসায়ী কামাল আহমদের। তার আগেই ঘাতকরা তাকে ঐ বাড়িতে হ’ত্যা করে পাশের ডোবায় ড্রামভর্তি করে লাশ চেপে রাখে। এরপর ব্যবসায়ী নিখোঁজের ঘটনায় থানায় জিডি ও মামলা হয়।

পুত্র শোকে কাতর মা : ব্যবসায়ী কামালের বৃদ্ধ মা আঙ্গুর বিবি পুত্র শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। ছেলের কংকা’ল উ’দ্ধার এবং আসামী গ্রে’ফতারের খবর পেলেও তিনি অনেকটা ভাবলেশহীন অবস্থায় শুধুই চোখের পানি ফেলছেন এবং পুত্র হ’ত্যাকারীদের ফাঁসি চেয়েছেন।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.