Beanibazarview24.com






পৌষ মাসের শীতের সকাল। হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় জাতীয় সড়কের পার ধরে একটি শবদেহ চাদরে পেঁচিয়ে কাঁধে নিয়ে জোরে জোরে হেঁটে চলেছেন বছর চল্লিশের এক যুবক। পেছনের সেই দেহকেই কাঁধ দিয়েছেন ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ। আশপাশের বাসিন্দারা দাঁড়িয়ে দেখছেন। কিছুটা গিয়ে হাঁপিয়ে পড়ছেন তারা।




দেহ রাস্তায় নামাচ্ছেন। কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ফের কাঁধে তুলে হাঁটতে শুরু করছেন। এমন অমানবিক দৃশ্য দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না অনেকেই এটা বিহার, উত্তরপ্রদেশ না পশ্চিমবঙ্গ!
প্রশ্ন করতেই জানা যায়, হাসপাতালের দালাল চক্র মৃ.তদে.হ বইতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া চেয়েছিল তিন হাজার রুপি। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া সংসারে সেই টাকা দিতে অপারগ ছেলে। সেই কারণে মায়ের মৃ.তদে.হ চাদরে জড়িয়ে কাঁধে তুলেই ৩৫ কিলোমিটার দূরের শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন ছেলে। পেছনে সঙ্গ দিয়েছেন বৃদ্ধ
জলপাইগুড়ি জেলার মাল মহকুমার ক্রান্তি ব্লকের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর রামপ্রসাদ দেওয়ান তার মা লক্ষ্মীরানি দেওয়ানকে বুধবার (৪ জানুয়ারি) রাতে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেন প্রবল শ্বাসকষ্টের জন্য। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই মারা যান লক্ষ্মীরানি দেওয়ান৷
বৃহস্পতিবার সকালে মায়ের মৃ.তদে.হ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে গেলে হাসপাতালের দালাল চক্র এক হাজার রুপি ভাড়ার পরিবর্তে ৩ হাজার রুপি দাবি করে বসে। হাজারো আকুতি মিনতিতেও কাজ না হওয়ায় শেষমেশ মায়ের মৃ.তদে.হ কাঁধে নিয়েই হেঁটে ৩৫ কিমি দূরে ক্রা.ন্তির উদ্দেশে রওনা দেন রামপ্রসাদ দেওয়ান৷
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মৃ.তদে.হ কাঁধে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ এভাবেই পাড়ি ফেলার মধ্যেই স্থানীয়দের মারফত খবর পৌঁছে স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে। গ্রীন জলপাইগুড়ি নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা দ্রুত তাদের শববাহী গাড়িতে মৃ.তদে.হ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে নিজস্ব সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে মৃ.তদে.হ পরিবহনের ব্যবস্থা আছে। তবে অভিযোগ হাসপাতালের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স দালাল চক্র হাসপাতাল চত্বরে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার গাড়ি ঢুকতে বরাবর বাধা দিয়ে আসছে।
এমন অবস্থায় রোগী ও রোগীর আত্মীয়-স্বজন বিপাকে পড়লেও আশ্চর্যজনকভাবে চুপ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে যাতায়াত করেন হাসপাতাল কর্মীরা। এই বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও দুপুর পর্যন্ত এ বিষয়ে হাসপাতালের সুপারের কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এর আগে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে শববাহী গাড়ি না পেয়ে মৃ.তদে.হ নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা গেছে। যে মর্মান্তিক ছবি দেশজুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। এরপরই পশ্চিমবঙ্গে এমন দৃশ্য এড়াতে মৃ.ত্যুর পর সরকারি খরচে সৎকার করার জন্য এককালীন অর্থ সাহায্য ছাড়াও নানা ব্যবস্থা নেয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তারপরও দালাল চক্রের যাঁতাকলে এমন অমানবিক দৃশ্য এবার এই রাজ্যেও নজরে পড়ল।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.