Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

রাশিয়াকে চাপে রাখতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই বিপাকে


রাশিয়াকে সহায়তার বিষয়ে চীনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি বেইজিংকে এ বিষয়ে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান। তিনি বলেন, ইউক্রেনে সংঘাতের কারণে রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা এড়াতে মস্কোকে যদি তারা সহায়তা করে তবে অবশ্যই এর ‘পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। জ্যাক সুলিভান বলেন, এই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে রাশিয়াকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের কোথাও, কোনো দেশকে ‘লাইফলাইন’ হতে দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

তার এমন বক্তব্যের পরের দিনই রয়টার্স দুই ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুপি-রুবল (ভারতী মুদ্রা রুপি, রাশিয়ার মুদ্রা রুবল) লেনদেনের মাধ্যমে রাশিয়ার কাছ থেকে ডিসকাউন্ট বা বাজারদরের চেয়ে কম দামে অপরিশোধিত তেল ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ভারতকে। আর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এই প্রস্তাব বিবেচনা করছে মোদী সরকার।

রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে এবং এর কিছু সমর্থকও রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই সমর্থকদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম দ্বারা প্রভাবিত।

গত সপ্তাহে রাশিয়া থেকে সব ধরনের জ্বালানি আমদানি বন্ধ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইউরোপীয় দেশগুলো এ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেছে। রাশিয়া থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া কঠিন হবে বলেই মনে করছে তারা।

গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার ওপর থেকে জ্বালানি নির্ভরশীলতা কমাতে ২০২৭ সালকে শেষ সময় হিসেবে প্রস্তাব করেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেয়েন। অর্থাৎ এ থেকে বোঝাই যায় যে, রাশিয়ার ওপর থেকে নির্ভরশীলতা কমাতে তাদের আরও সময় প্রয়োজন। আর সে কারণেই তারা রাশিয়ার জ্বালানিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করতে ইচ্ছুক নয়।

ভন দের লেয়ের ইউরোপের একজন মার্কিনপন্থি রাজনীতিবিদ। রাশিয়ার জ্বালানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার বিরুদ্ধে জার্মানির ভেতরেই প্রবল বিরোধিতা রয়েছে। কিন্তু এখন এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে এ বিষয়ে বিরোধিতা থাকলেও কথা বলার কোন সুযোগ নেই। প্রকৃতপক্ষে ‘রাজনৈতিক শুদ্ধাচার’ প্রচারের ভান ধরে এক ধরনের বিভ্রম তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর বাধ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো তা অনুসরণ করে যাচ্ছে।

ভন দের লেয়েন এই প্রস্তাব দেওয়ার আগে, বিশ্ববাজারে তেলের দামের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের নেতাদের মধ্যে বৈঠক দিনক্ষণ ঠিক করার চেষ্টা করেছিল হোয়াইট হাউজ। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়।

রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে পাশে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশ দুটির শীর্ষ নেতারা নাকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ফোনই ধরেননি। এক্ষেত্রে আসলে সবাই নিজ নিজ স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত।

মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও আমিরাতের যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ-আল-নাহিয়ান উভয়ই বাইডেনের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

সৌদি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইয়েমেন যুদ্ধে হস্তক্ষেপের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও সমর্থন চায় সৌদি আরব। এছাড়া ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট ও সৌদির কট্টর সমালোচক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর যুক্তরাষ্ট্রে যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার চায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। বাইডেন তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় সৌদি আরবকে একটি ‘নির্বাসিত’ দেশ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দেশটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অবশ্যই দাম দিতে হবে। সে কারণেই এখন সুযোগ পেয়ে সৌদি আরবও বাইডেনকে পাত্তা দিচ্ছে না।

এছাড়া চলতি মাসের শুরুতে রাশিয়ার সঙ্গে ওপেক প্লাস চুক্তিতে দেওয়া একটি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে যাওয়ার প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছে সৌদি। ওপেকভুক্ত দেশগুলো জ্বালানি ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে বা তেল উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে এবং এই সংকটের মধ্যে রাশিয়ার পিঠে ছুরি চালাতে একেবারেই রাজি নয়। এই সংকটে তা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই যেন বিপাকে পড়ে গেছে। এখন তাদের চির শত্রু দেশ ইরানের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। পরমাণু সমঝোতায় পৌঁছানোর পর ইরান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তেল আমদানি করবে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে এবং এখন তারা ইরানের সহায়তা চাচ্ছে।

শত্রু দেশ হিসেবে খ্যাত অপর দেশ ভেনেজুয়েলার দিকেও ঝুঁকছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যেই দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর সঙ্গে কারাকাসে দেখা করেছেন বেশ কয়েকজন শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা। সে সময় ভেনেজুয়েলাকে প্রলোভন দেখানো হয় যে, মার্কিন কোম্পানিগুলো যেন তাদের তেল খাতে আবারও বিনিয়োগ করতে পারে। এছাড়া তাদের তেল উৎপাদন বাড়াতে সহায়তার জন্য মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করার কথাও ভাবছে তারা। ১৯৯৯ সালের পর ভেনেজুয়েলায় হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তাদের এটাই প্রথম সফর।

চলতি বছর বাইডেনের রাজনৈতিক জীবনের ৫২ বছর পূর্ণ হচ্ছে। কিন্তু তার মতো একজন ঝানু রাজনীতিক আফগানিস্তান এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ঘটনায় একেবারেই নির্বুদ্ধিতা ও আনাড়িপনার পরিচয় দিয়েছেন। তবে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় তিনি নিজের জালে নিজেই যেন আটকা পড়েছেন।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনাতেই ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা। তারা রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাতকে উস্কে দেওয়ার ফলেই এমন যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যদিও এখনও অনেক দেশ অন্ধভাবে যুক্তরাষ্ট্রকেই সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব বিস্তৃত হবে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: গ্লোবাল টাইমস

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.