Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

যেভাবে হাফেজ হলেন ইংলিশ মিডিয়ামের ৫০ শিক্ষার্থী


রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ৫০ জন শিক্ষার্থী পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষকদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এসব শিক্ষার্থী কোরআনের হাফেজ হয়েছেন বলে জানিয়েছে ওই স্কুলের কর্তৃপক্ষ। হাফেজ হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৩ জন মেয়ে শিক্ষার্থীও রয়েছেন।

হিফজ সম্পন্নকারীরা রাজধানীর লালমাটিয়ার ওয়েটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী। তাদের ২৫ জনই করোনা মহামারির গত দুই বছরে হিফজ সম্পন্ন করেছেন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী কোরআন হিফজ সম্পন্ন করতে দুই বছর সময় ব্যয় করলেও মাত্র ১০ মাস থেকে ১২ মাসেও হিফজ সম্পন্ন করেছে কেউ কেউ। হিফজ বিভাগের সফলতার পাশাপাশি ও লেভেল পরীক্ষাতেও সব শিক্ষার্থী ‘এ প্লাস’ পেয়ে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে।

স্কুলটিতে প্রতি সেকশনে সর্বোচ্চ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ জন এবং হিফজ ক্লাসে শিক্ষক ও ছাত্রের অনুপাত সংখ্যা ১:৪ ৷

ওয়েটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সৈয়দা বদরুন্নেছা ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃটিশ কারিকুলামে ইংরেজি ভাষা শেখার পাশাপাশি বিদেশি যে কোন একটি ভাষা শেখার সুযোগ রয়েছে। গতানুগতিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলোতে স্প্যানিশ, জাপানিজ, চাইনিজসহ অন্যান্যে ভাষা শেখালেও ওয়েটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অন্য বিদেশি ভাষার পাশা-পাশি আরবি ভাষা শেখার সুযোগ করে দিয়েছে। স্কুলের বেশিরভাগ অবিভাবক আরবি ভাষা শেখার সুযোগ থাকায়, বিদেশী ভাষা হিসেবে আরবিকেই তাদের সন্তাদের জন্য পছন্দ করেছেন।

ফলে আরবী ভাষা শিখতে গিয়েই অধিকাংশ শিক্ষার্থী পবিত্র কোরআন মুখস্ত করে ফেলেছে। এছাড়া যেসব ছাত্র/ছাত্রী নিয়মিত হিফজ ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন না তারাও “ও লেভেল” এবং “এ লেভেল” পড়া শেষ করার পর ৮ থেকে ১০ পাড়া কোরআনের হাফেজ হয়ে যান।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে মসজিদভিত্তিক মক্তবব্যবস্থা একসময় খুবই জনপ্রিয় ছিল। ছেলে-মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষা এসব মক্তব থেকেই দেওয়া হতো, কিন্তু কালের পরিক্রমায় গ্রামে যেমন এই ব্যবস্থার প্রচলন কমে গেছে তেমনি শহরে একেবারে নেই বললেই চলে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষিত পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের মক্তবে আরবি ও ইসলাম শিক্ষা দিতে নারাজ। তবে সচেতন মুসলিম মা-বাবারা তাদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর পাশা-পাশি পবিত্র কোরআন ও ধর্মীয় মূল্যবোধ শেখাতে চান।

কিন্তু আমাদের দেশে আরবি, বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার জন্য আলাদা আলাদা স্কুল ও মাদ্রাসা থাকলে একটি স্কুলে গিয়ে বাংলা, ইংরেজি ও আরবি শিখতে পারবে এরকম প্রতিষ্ঠান নাই বললেই চলে। তাই আমাদের স্কুলের সিলেবাসে ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে আরবী ভাষাকে যুক্ত করা ও মডাল স্টাডিজে আল-কোরআন শেখার সুযোগ থাকায় অনেক উচ্চ শিক্ষিত পরিবার তাদের সন্তানদের জন্য আমাদের স্কুলটি বেছে নিয়েছেন।

ওয়েটন ইন্টারন্যশনাল স্কুলের আরবি বিভাগের প্রধান মাসুম বিল্লাল জানান, ‘হিফজ করতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে আরবি ভাষার ক্লাস করার পাশা-পাশি প্রতিদিন সকালে ক্লাস শুরু হওয়া আড়াই ঘন্টা আগে স্কুলে উপস্থিত হতে হয় হিফজ ক্লাস করার জন্য। সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত টানা দুই ঘন্টা হিফজ করানোর পরে আধা ঘন্টা বিরতি দিয়ে মূল কারিকুলামের ক্লাস শুরু করা হয়, ফলে হিফজ শেখার কারনে মূল কারিকুলামের ক্লাস সম্পন্ন করতে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না।’

কথা বলে আরো জানা যায় যে, বৃটিশ কারিকুলামে সামার ভ্যাকেশন, উইন্টার ভ্যাকেশন ও বাংলাদেশে রমজান মাসে স্কুল ছুটি থাকায় বছরে সর্বমোট তিন মাস লম্বা ছুটি থাকে। এই ছুটির সময়ে স্কুলটিতে হিফজের ছাত্রদের স্বাপ্তাহে ৬ দিন কোরআনের হিফজ করানো হয়। স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে স্বাপ্তাহে ৫দিন সকাল ৬ টা থেকে ৮ টা এবং ছুটির দিনগুলোতে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হিফজ ক্লাস করানো হয়। ফলে স্কুলটির হিফজে অধ্যায়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী দুই বছরের মধ্যেই হিফজ সম্পন্ন করতে পারে।

ওয়েটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পরিচালক (জনসংযোগ) কামাল পাশা জানান, ‘স্কুলটিতে বর্তমান হাফেজের সংখ্যা ৫০ জন থাকলেও আরও প্রায় ৪০ জন ছাত্র পাইপলাইনে রয়েছে যারা আগামী ৬ মাসের মধ্যে পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।’

তার সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, বর্তমান কারিকুলাম থেকে ও লেভেল এবং এ লেভেল কমপ্লিট করার পর শিক্ষার্থীদের দেশে এবং দেশের বাইরে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কোন ছাত্র যদি আরবি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চায়, তাহলে মিশরের আল আজহার ইউনির্ভাসিটি, সৌদি আরবের মদিনা ও মক্কা ইউনির্ভাসিটিতে পড়াশোন করার সুযোগ রয়েছে তাদের।

স্কুলটিতে বৃটিশ কারিকুলাম অনুযায়ী সব সব বিষয়েই পড়ানো হয়, তবে- ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে আরবি ভাষা ও মডাল স্টাডিজ হিসেবে মুসলীম ছেলে-মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার ফলে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ, সহনশীলতা ও পরিমিতিবোধ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়া সব শিক্ষার্থীর মধ্যে দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তৈরি করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

গত ২০ ডিসেম্বর ২০২১, বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবসের সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু কর্নার চালু করা হয়েছে। এখান থেকে মাত্র ১০ টাকায় বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে নিয়ে লেখা যেকোনো বই কিনতে পারবেন শিক্ষার্থীরা।

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.