Beanibazar View24
Beanibazar View24 is an Online News Portal. It brings you the latest news around the world 24 hours a day and It focuses most Beanibazar.

রূপ ধরে রাখতে কুমারী মেয়ের র.ক্ত-মাং.স খেতেন যে নারী

ইতিহাসের একদিক যেমন আলোকসজ্জিত তেমনই এর কালো অধ্যায়ের পরিমাণও কম নয়। যুগে যুগে অনেক নারী তাদের কর্ম দিয়ে ইতিহাসকে রজ্জিত করেছেন। কেউ ছিলেন দয়ালু, কেউ আবার নৃসংশতার চরমে পৌঁছেছিলেন। তেমনই এক নারী ছিলেন এলিজাবেথ বাথোরি, যিনি সৌন্দর্য ধরে রাখতে হয়েছিলেন সিরিয়াল কিলার।

চির যৌবনা থাকতে কে না চান। বিশেষ করে নারীরা নিজেদের সৌন্দর্যের ব্যাপারে একটু যেন বেশিই সচেতন। ফিট থাকতে আর নিজের সৌন্দর্য ধরে রাখতে কতো কিছুই না করে থাকেন। তবে এই নারী নিজের রূপ-যৌবন ধরে রাখতে ৬০০ কুমারী নারীর রক্ত পান করেছিলেন।

পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী সিরিয়াল কিলারের খেতাবপ্রাপ্ত। নিজেকে সুন্দর রাখতে শুধু যে কুমারী মেয়েদের রক্ত পান করতেন তাই না, সেই রক্তে গোসল করতেন এমনকি তাদের মাংসও খেতেন তিনি। বলছিলাম এলিজাবেথ ব্যাথরির কথা। তিনি ছিলেন যেমন বদমেজাজি, তেমনি হিংস্র আর অত্যাচারী।

এলিজাবেথ বিশ্বাস করতেন, কুমারী মেয়েদের রক্ত তাকে চিরযৌবনা রাখবে। আর তাই একের পর এক কুমারীকে হত্যা করতেন তিনি। ইতিহাসে আলোচিত এই সিরিয়াল কিলার পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যার খুনী ছিলেন। যিনি ব্লাড কাউন্টেস বা কাউন্টেস ড্রাকুলা নামেও পরিচিত।

কাউন্টেস ড্রাকুলা নামে পরিচিত এলিজাবেথের জন্ম ১৫৬০ সালের ৭ আগস্ট হাঙ্গেরির ট্রান্সিলভেনিয়ায় এক অভিজাত পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই এলিজাবেথ ছিলেন খিটখিটে আর বদমেজাজি। যদিও সম্ভ্রান্ত পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। সেখানে কখনো কোনো অত্যাচারের শিকার হতে হয়নি তাকে।


তবে শিশু বয়সেই ভয়ানক সব অত্যাচারের দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত ছিলেন এলিজাবেথ। সেই সব ভয়ানক ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষীও হয়েছেন অনেকবার। একবার তিনি দেখেন একটি জীবন্ত ঘোড়ার পেট কেটে তার মধ্যে অপরাধীকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ঘোড়ার পেট সেলাই করে দেয় প্রহরীরা। এই ঘটনা তার মনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তার হিংস্রতা আরও বাড়িয়ে দেয়।

ছোট থেকেই অত্যাচারী মনোভাবের। অন্যের মৃত্যু যন্ত্রণা দেখে তিনি তৃপ্ত হতেন। খুব অল্পতেই তার রেগে যেতেন। খিঁচুনি আর মাইগ্রেনের সমস্যা থেকে তিনি এমন হয়েছেন বলে মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ। আবার অনেক ইতিহাসবিদ লিখেছেন, তার পরিবারের অপরাধীরকে এমন কঠিন সব শাস্তি দেওয়ার ধরন তার মনে বেশ প্রভাব ফেলেছিল।

এলিজাবেথ যেহেতু ছিলেন অভিজাত বংশের মেয়ে, সেই সুবাদে তার বিয়েও হয়েছিল সম্ভ্রান্ত পরিবারেই। তবে বিয়ের আগেই মাত্র ১৩ বছর বয়সে মা হন এলিজাবেথ। এরপর ১৫ বছর বয়সে ফেরেন্স নাডাসডি নামে এক উচ্চবংশীয় লোকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। ফেরেন্স ছিলেন হাঙ্গেরির রাজ্যের সেনাপতি। কথিত আছে, ফেরেন্স তার স্ত্রী এলিজাবেথের মতোই অত্যাচারী ছিলেন। অটোম্যান বন্দীদের উপর নির্মম অত্যাচার চালাতেন তিনি। নিজের দাসদের দুই পায়ের গোড়ালির মাঝে কাগজ রেখে আগুন ধরিয়ে দিতেন।

এছাড়াও অটোম্যানদের যুদ্ধে তার হিংস্রতা আর অমানবিকতার কারণে তাকে ডাকা হত ব্ল্যাক হিরো অব হাঙ্গেরি। বিয়ের কিছুদিন পরই ফেরেন্স যুদ্ধে চলে যান। তবে সেখান থেকে এলিজাবেথকে তিনি অত্যাচারের নতুন নতুন পন্থার কথা জানাতেন।

তবে এলিজাবেথও কম ছিলেন না। তার অমানবিক অত্যাচারের কথা বলে হয়তো শেষ করা যাবে না। তিনি শুধু যে কুমারী মেয়েদের রক্ত পান এবং গোসল করতেন তাই নয়, তাদেরকে হত্যার জন্য অবলম্বন করতেন ভয়ংকর সব পদ্ধতি। এক্ষেত্রে তিনি স্বামীর সহযোগিতা পেয়েছেন সবসময়। এছাড়াও তার কয়েকজন বিশ্বস্ত দাস ছিল। যারা এলিজাবেথের সব অপকর্মের সাক্ষী। এলিজাবেথ কুমারী মেয়েদের খুবই ছোট্ট খাঁচায় বন্দি করতেন। এরপর তাদের সিলিংয়ে ঝুলিয়ে রেখে শরীরে বরফ পানি দিতেন। যেন তারা ঠান্ডায় জমে মারা যায়।

তার দাস দাসিদের হাতের তালুতে গরম লোহা রেখে দিত। তাদের যন্ত্রনায় পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করত বিকারগ্রস্থ এলিজাবেথ। সাঁড়াশি দিয়ে দাসদের আঙ্গুল টেনে ছিঁড়ে ফেলত। একবার এলিজাবেথ এমন এক কাজ করেন যা ছিল সব নৃশংসতার উর্ধ্বে। এক দাসীর শরীর থেকে মাংস কেটে তাকে দিয়ে রান্না করিয়ে তাকেই খেতে বাধ্য করেছিল সে। এছাড়াও মেয়েদের শরীরে মধু লাগিয়ে সারাদিন বাইরে রেখে দিত। যাতে মৌমাছি এবং অন্যান্য পোকামাকড় তাদের খেয়ে ফেলতে পারে।

স্বামী ফেরেন্সের মৃত্যুর পর এলিজাবেথ আরো বেশি নৃশংস হয়ে ওঠে। সে মেয়েদের নখে, ঠোঁটে, গালের নিচে সুঁই ফুটিয়ে রাখত, শরীর থেকে মাংস কেটে নিত। এলিজাবেথ এভাবেই ক্ষান্ত হয়নি। অনেক পুরুষের জীবনও নিয়েছে। বিয়ের আগে এবং তার স্বামীর মৃত্যুর পর অসংখ্য পুরুষের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন পর নতুন একজনকে পেলে আগের জনকে মেরে ফেলত সে। এছাড়াও এলিজাবেথের সম্পর্কে আরো একটি তথ্য জানা যায়, তিনি উভকামী ছিলেন। তবে এ ব্যাপারে তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

১৬০৩ সালে রাজা কাউন্ট গির্জি থুরজোকে সিসজে ক্যাসলে এলিজাবেথকে বিচারের আয়তায় আনেন। সেসময় রাজ্যের অনেক মেয়ের নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় সবাই শঙ্কায় থাকত। তবে খুব একটা পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। একজন বিখ্যাত শিল্পী এলিজাবেথের প্রাসাদে গানের অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ হয়। এতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। আর তখনই ধরা পড়ে এলিজাবেথের অপকর্ম। সেসময় তার সঙ্গে চার সহযোগীকেও বিচারের আয়তায় আনা হয়।

তার প্রধান দুই সহযোগীর ভাষ্য মতে, সে ৫০ জন মেয়েকে হত্যা করেছে। অন্য একজন বলেছে এর সংখ্যা ৮০। তবে এর আসল সংখ্যা ছিল ৬০০ এরও বেশি। এই তথ্য পাওয়া যায় এলিজাবেথের নিজের লেখা ডায়েরি থেকেই। একজন সহযোগীই তার ডায়রি আদালতে উপস্থাপন করেন।

সে সময় রাজ্যের গরিব পরিবারের মেয়েদের কাজের লোভ দেখিয়ে নিয়ে আসা হত এলিজাবেথের কাছে। আর অসহায় মেয়েরা শিকার হত এলিজাবেথের বিকারগ্রস্থ স্বভাবের নির্মম শাস্তির। একের পর এক মেয়েরা নিখোঁজ হতে থাকলে এসব পরিবার আর তাদের মেয়েদের সেখানে পাঠাতে চাইতেন না।

এরপর মধ্যবিত্ত পরিবার এমনকি অভিজাত পরিবারের মেয়েদেরকে ভালোভাবে লালন পালনের প্রতিশ্রুতিতে আনা হত। তার সহযোগীর তিনজনকে ফাঁসি এবং চতুর্থ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এলিজাবেথকে বন্দি রাখা হয় জানালাবিহীন ছোট এক ঘরে। সেখানেই ১৬১৪ সালে ৫৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, মানসিক সমস্যা থেকেই এলিজাবেথ এমন নৃশংস হয়ে উঠেছিলেন। তবে এলিজাবেথের পরিবারে শুধু সেই খুনি ছিলেন না। অন্যান্য সদস্যরাও ছিলেন খুবই নিষ্ঠুর প্রকৃতির। এলিজাবেথের ফুফু ক্লারা ছিলেন জাদুকরী এবং উভকামী। তিনি কালো জাদু চর্চা করতেন এবং এলিজাবেথকেও উৎসাহ দিতেন। নিজের স্বামীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিলেন তিনি। অবশেষে ক্লারাকে জেলে পাঠানো হয়। সেখানেও তিনি কারারক্ষীদের তার ফাঁদে ফেলতেন।

তবে অনেক ইতিহাসবিদ দাবি করেন, ক্লারা এবং তার এক প্রেমিক অটোম্যানদের হাতে বন্দি হন। এরপর তাদের হত্যা করা হয়। এলিজাবেথের চাচা স্টিফেন ব্যাথরি ছিলেন একজন দক্ষ যোদ্ধা। নির্মমভাবে হত্যা করতেন বিপক্ষের বন্দিদের। তিনি পোল্যান্ডের রাজাকে হত্যা করে রানিকে বিয়ে করেছিলেন। এলিজাবেথের পরিবারের অনেক ব্যক্তিই অত্যাচারী হিসেবে পরিচিত হয়ে আছেন ইতিহাসে। হয়তো বংশগতভাবেই এই স্বভাব পেয়েছিলেন এলিজাবেথ।
সূত্র: দ্য ভিন্টেজ নিউজ, অল দ্যাট ইন্টেরেস্টিং

You might also like

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.