Beanibazarview24.com
রান্না করতে পারাটা একটা মানুষের অন্যতম গুণ হতেই পারে। তবে ভালো রান্না করা কিংবা নিজের হাতের খাবার খাইয়ে অন্যকে মুগ্ধ করাটা খুব একটা সহজ নয়। যেখানে সেই খাবারের স্বাদ রাঁধুনি নিজেই নিতে পারেন না। এমনই ঘটেছে লরেটা হার্মেসের জীবনে।
লরেটের হাতের রান্না খেয়ে মুগ্ধ হন মানুষ। নেট পাড়ায় সাড়া ফেলে দেয়া বিখ্যাত এই শেফের ফলোইয়ার সংখ্যাও অজস্র। তবে তার জীবনের গল্পটি জানলে যে কারোরই মন বিষাদে পূর্ণ হবে মুহূর্তেই। নিজে যতই ভাল রান্না করুন , আদতে কোনও খাবারই খেতে পারেন না লরেটা হার্মেস। কখনোই পারবেন না।
জিনগত এক রোগ ‘এলার্স ড্যানলস সিনড্রোম’নামের দুরারোগ্য অসুখের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। লরেটা ব্রিটেনের একজন নামকরা শেফ। অথচ বিশেষ কিছু তরল খাবারই তার একমাত্র সম্বল। কিন্তু তাই বলে অসুখের কারণে নিজের রান্না করার ইচ্ছাকে দমিয়ে রাখেননি তিনি। নিত্যনতুন রান্না করে সকলকে তাক লাগিয়ে দেয়ার শখ তার বরাবরের। তাই নিজে খেতে না পারলেও রান্না করেন লরেটা। প্রতিদিনই তার ভক্তদের জন্য কিছু না কিছু রান্না করছেন লরেটা। এমনকি তার রান্নার রেসিপির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন ভক্তরা। সোশ্যাল মিডিয়াই এখন হয়ে উঠেছে লরেটর ইচ্ছাপূরণের একমাত্র সঙ্গী।
২৩ বছর বয়সি লরেটা শেষবার শক্ত খাবার খেয়েছিলেন ৬ বছর আগে। আর সেটা ছিল রোস্ট করা আলু। তারপর আর কিছুই খাওয়া হয়নি , হয়তো ভবিষ্যতেও আর হবে না। সেই সময় কোনো খাবারই তার পেটে অসহ্য যন্ত্রণা হত। পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হচ্ছিল। এভাবেই কেটেছে বেশ কিছুদিন। তারপরের পাঁচটা বছর যেন দুঃস্বপ্নের মতো ছিল।
এলার্স ড্যানলস সিনড্রোম মোট ১৩ টি অস্বাভাবিক অবস্থার একটা সমষ্টি। এতে পাকস্থলী আংশিক ভাবে অবশ হয়ে যায়। ফলে খাবার হজম হতে পারে না। তবে লরেটার কষ্ট আরও বেড়ে যায় ভুল চিকিৎসার কারণে। বহু বার একাধিক ডাক্তারের দ্বারা ভুল পথে চালিত হয়েছেন তিনি। ছোট থেকে শক্ত খাবার খেতে পারলেও বয়স যত বাড়তে থাকে, সমস্যাও বাড়তে থাকে। কোনো শক্ত খাবারই তিনি খেটে পারতেন না।
বর্তমানে লরেটা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বেশ সমাদর পেয়েছেন। এখন নিজের শারীরিক কষ্টকে তিনি আর মনের কষ্ট হয়ে উঠতে দেন না। এক সময় তিনি এতোটাই ভেঙে পরেছিলেন যে, দুইবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। ধীরে ধীরে সেই মানসিক অবসাদ থেকে বেড়িয়ে এসেছেন তিনি।
বর্তমানে টোটাল প্যারেন্টেরাল নিউট্রিশনের মাধ্যমে খান লরেটা। দিনে অন্তত ১৮ ঘণ্টা তাকে খাওয়াতে হয়। মুখ দিয়ে নয়, নলের মাধ্যমে তার দেহে খাবার ঢোকানো হয়। এমনকি পানিও খেটে পারেন না। তবে নিজের রান্নার স্বাদ অটুট রাখার ব্যাপারে লরেটা বেশ সতর্ক। মুখে খেতে পারেন না ঠিকই। তবে চোখের দেখা এবং গন্ধ শুকেই তিনি খাবারের স্বাদ ঠিক হয়েছে কিনা তা বুঝতে পারেন। কেননা পরিচিত খাবারের সেই গন্ধ নাকে এলেই তিনি বুঝতে পারেন খাবারের স্বাদ ভালো হয়েছে।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.