Beanibazarview24.com
ভারতের বিজেপিশাসিত আসামে বাঘ-সিংহকে গরুর গোশত না খেতে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বিজেপি সমর্থক ও হিন্দুত্ববাদীরা। মঙ্গলবার ( ১৩ অক্টোবর) রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়।
হিন্দু মৌলবাদি হিসেবে পরিচিত বজরং দল ও অন্য সংগঠনের সদস্যরা ওই ইস্যুতে গুয়াহাটিতে রাজ্য চিড়িয়াখানার বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। রাজ্য বিজেপি’র কিষাণ মোর্চার সাবেক সহ-সভাপতি সত্যরঞ্জন বরা বলেন, চিড়িয়াখানার কর্মকর্তারা এবং আসাম সরকার যদি গরুর মাংস দেওয়া বন্ধ না করে, তবে তাদের এর পরিণতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
এনডিটিভি হিন্দি এক প্রতিবেদনে জানায়, বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন বিজেপি’র বিতর্কিত নেতা সত্যরঞ্জন বরার। বিক্ষোভকারীরা এসময়ে বাঘ-সিংহকে খাওয়ানোর জন্যে আনা গরুর গোশত বহনকারী গাড়ি আ’টকে গরুর গোশত খেতে দেয়া বন্ধ করার দাবিতে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিসহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
তাদের দাবি, গরুর গোশতের পরিবর্তে অন্য গোশত দেয়া হোক বাঘ-সিংহকে! এ সময়ে বিক্ষোভকারীরা গরুর গোশত বহনকারী গাড়িটি কমপক্ষে আধঘণ্টা ধরে চিড়িয়াখানার গেটের সামনে আ’টকে রাখে। তারা হরিণের মাংস বাঘ-সিংহকে খেতে দেয়ার পরামর্শ দেন।
এ ব্যাপারে আসামের অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অব সিভিল রাইটসের (এপিসিআর) রাজ্য কমিটির সদস্য ও রাজ্য লিগ্যাল সেলের কনভেনর আহমদ আলী বড়ভুঁইয়া’র একটি সাক্ষাতকার প্রকাশ করেছে ইরান ভিত্তিক গণমাধ্যম রেডিও তেহরান।
সেখানে আহমদ আলী বড়ভূঁইয়া বলেন, ‘এটার কোনও যুক্তি নেই। খুবই হাস্যকর ব্যাপার। আসলে আগামী নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদীরা (বিজেপি) ধরাশায়ী হবে। সেজন্য যেদিকে যা পাচ্ছে, সাম্প্রদায়িক উসকানি ও উতেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এরই প্রেক্ষিতেই সত্যরঞ্জন বরাকে দিয়ে এটা করানো হচ্ছে। কারণ অসমে গরুর গোশত নিষিদ্ধ নয়। বাঘ-সিংহকে গরুর গোশত দেওয়া যাবে না বলে দাবি তোলা হয়েছে।
বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেছেন, তাহলে কী বাঘ সিংহকে আমরা কেক খাওয়াবো? স্বাভাবিকভাবে যারা সমজদার মানুষ তারা এটা নিয়ে হাসাহাসি করছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ ধরণের সাম্প্রদায়িক ভিন্ন ষড়যন্ত্র করার জন্য এরা এসব প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।’
এদিকে, ওই ঘটনায় রীতিমতো বিরক্ত চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। চিড়িয়াখানার ডিএফও তেজস মরিস্বামী অবাক হয়েছেন ঘটনায়। তিনি বলেন, গোশত বহনকারী একটি গাড়িকে আ’টকে দেন হিন্দুত্ববাদীরা। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।
চিড়িয়াখানার রেঞ্জ অফিসার বলেন, কোন জন্তুকে কী ধরণের খাবার দেয়া হবে সেজন্য কমিটি রয়েছে। আচমকা কেউ প্রতিবাদ জানালে বাঘ-সিংহের খাবার পাল্টে দেওয়া যায় না।
আন্দোলনকারী হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, সরকার যখন বলছে দেশজুড়ে গরু জবাই বন্ধ করতে হবে, তখন চিড়িয়াখানায় কীভাবে গরুর গোশতের জোগান দেওয়া হয়? বজরং দল, হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সদস্যরা চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে বলেন, বাঘ-সিংহকে গরুর গোশত খাইয়ে ‘হিন্দুদের ভাবাবেগে আ’ঘা’ত’ দেওয়া হচ্ছে।
রাজ্যের বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেছেন, বাঘ-সিংহ তো আর কেক- বিস্কুট খায় না। ওই বন্য জন্তুদের চিড়িয়াখানায় রাখতে গেলে তাদের খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী খাবার দিতেই হবে। গরুর পরিবর্তে মোষের গোশত দেওয়া যায়। কিন্তু মোষ তো পর্যাপ্ত নয়। সাধারণত দেখা যায় বাঘ জনপদে এলে গরু মেরে খায়। এটা ওই জন্তুর স্বাভাবিক খাদ্য। বাঘ-সিংহের পরিবর্তে হরিণের গোশত দেওয়া হলে আইনের জাল জড়িয়ে যেতে হবে বলেও বনমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য মন্তব্য করেন।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.