Beanibazarview24.com
সিলেটি যে নারীর হ.ত্যা.কে ঘিরে ব্রিটেনে তীব্র ক্ষো.ভ
দক্ষিণ লন্ডনের এক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন সাবিনা নেসা। ২৮ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পড়াশোনা করেছেন গ্রিনিচ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাবিনা নেসাকে একজন ‘মেধাবী, দয়ালু এবং নিবেদিতপ্রাণ’ শিক্ষক বলে বর্ণনা করেছেন।
সাবিনা নেসার পৈতৃক বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায়। যুক্তরাজ্যের বেডফোর্ডশায়ারের একটি ছোট্ট শহরে স্যান্ডিতে থাকেন তার পরিবার। বাবা আবদুর রউফ কাজ করেন স্যান্ডির একটি রেস্টুরেন্টে।
পুলিশ এবং ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাবিনা নেসা শুক্রবার সন্ধ্যায় তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পার্কের ভেতর দিয়ে পায়ে হেঁটে খুব কাছেই এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। পুলিশের ধারণা বাড়ি থেকে মাত্র পাঁচ মিনিটের দূরত্বেই হয়তো তাকে হ.ত্যা করা হয়েছে।
এই হ.ত্যাকা.ণ্ডের র.হস্য এখনো অনুদঘাটিত, হ.ত্যাকা.রী এখনো ধরা পড়েনি। পুলিশ এ পর্যন্ত কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছ। একজন স.ন্দেহভা.জনকে হন্যে হয়ে খুঁজছে।
পুলিশের ত.দন্ত যেভাবে এগাচ্ছে এবং যেসব তথ্য এখনো পর্যন্ত পাওয়া গেছে, তাতে ধারণা করা হচ্ছে কোনো অপরিচিত ব্যক্তির হাতেই হয়তো খু.ন হয়েছেন সাবিনা নেসা।
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করেছে, যাতে একজন টাক মাথার পুরুষকে হাতে কিছু একটা নিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যাচ্ছে। পুলিশ মনে করছে সাবিনা নেসা হ.ত্যা র.হস্য উ.দঘা.টনে এই ব্যক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভিডিও ফুটেজের এই লোকটির পরণে ধূসর রঙের জিন্স এবং কালো জ্যাকেট। ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তাকে মাথায় হুড টেনে দিতে দেখা যায়।
সাবিনা নেসা হ.ত্যাকা.ণ্ডের খবর ব্রিটিশ মিডিয়ায় শুরুতে অতটা গুরুত্ব পায়নি বলে তীব্র সমালোচনা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এক্ষেত্রে তার হ.ত্যাকা.ণ্ডের খবরকে তুলনা করা হচ্ছে কয়েক মাস আগে লন্ডনে একই ধরনের ঘটনার শি.কার হওয়া এক শ্বে.তাঙ্গ নারী সারা এভারার্ডের হ.ত্যাকা.ণ্ডের সঙ্গে।
সারা এভারার্ড নি.হ.ত হন এ বছরের মার্চে দক্ষিণ লন্ডনে। তিনিও সেদিন পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন রাতে, পথে তাকে অপ.হ.রণ করে এক পুলিশ, পরে তার লা.শ পাওয়া যায় একটি পার্কে।
তার হ.ত্যাকা.ণ্ড ব্রিটেনকে প্র.চণ্ডভাবে নাড়া দেয়, দিনের পর দিন এই হ.ত্যাকা.ণ্ডের খবর ব্রিটিশ গণমাধ্যমের শিরোনাম দখল করে রেখেছিল। এই হ.ত্যাকা.ণ্ডের প্রতিবাদে এবং ঘরের বাইরে নারীর নিরাপত্তার দাবিতে যে বড় বড় বি.ক্ষো.ভ হয়, তাতে এমনটি ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনও যোগ দিয়েছিলেন।
কিন্তু সাবিনা নেসার হ.ত্যাকা.ণ্ডের পর অ.ন্তত প্রথম কয়েকদিন সে ধরনের কভারেজ দেখা যায়নি বলে অনেকে অভিযোগ করছেন।
লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের একজন কাউন্সিলর রাবিনা খান বিবিসি রেডিও ফোরের টুডে অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন অনেক পোস্ট তিনি দেখেছেন, যেখানে অনেকে প্রশ্ন করছেন, একজন অশ্বেতা.ঙ্গ নারী বা সংখ্যালঘু নারী যদি সারা এভারার্ডের মতো নিখোঁ.জ হয়ে যান, তিনি কি আসলে মিডিয়ায় একই ধরনের মনোযোগ পাবেন?
সাবিনা নেসার হ.ত্যাকা.ণ্ড একই সঙ্গে নতুন করে ঘরের বাইরে নারীর নিরাপত্তার প্রশ্নটি সামনে নিয়ে এসেছে।
দক্ষিণ লন্ডনের যে জায়গায় সাবিনা নেসার দেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল, তার কাছেই শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিরাট প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন শত শত মানুষ। সেখানে তারা মোমবাতি জ্বালিয়ে সাবিনার প্রতি শ্রদ্ধা জানান, এই হ.ত্যাকা.ণ্ডের বিচার এবং নারীর বিরু.দ্ধে স.হিং.সতার অবসান দাবি করেন।
সাবিনা নেসার বোন জেবিনা ইয়াসমিন ইসলাম সেখানে কথা বলতে গিয়ে কা.ন্নায় ভে.ঙ্গে পড়েন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুভূতি এখন কী, তা কোন শব্দ দিয়ে আমরা প্রকাশ করতে পারবো না। মনে হচ্ছে আমরা একটা দুঃস্বপ্নের ঘোরে আটকে আছি। কোন পরিবারকে যেন এরকম ঘটনার শি.কার হতে না হয়।’
লন্ডনের মতো একটি শহরেও ঘরের বাইরে নারীদের কীভাবে সারাক্ষণ নি.রাপত্তা-হী.নতায় ভুগতে হয়, তার উদাহরণ দিচ্ছিলেন রেডব্রিজ কাউন্সিলের একজন নির্বাচিত কাউন্সিলর সৈয়দা সায়মা আহমেদ
রেডব্রিজ কাউন্সিলের ‘উইমেনস চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে তিনি ঘরের বাইরে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন। এই কাজের অংশ হিসেবে কিছুদিন আগে তারা ঘরের বাইরে নারীর নিরাপত্তা নিয়ে একটা জরিপ মতো চালিয়েছিলেন।
সৈয়দা সায়মা আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, সেখানে নারীরা আমাদের জানিয়েছেন, রাতে হোক বা দিনে হোক, তারা যখন ঘরের বাইরে যান, তারা ধরেই নেন যে ঘরের বাইরে গেলে তাদেরকে কটূ.ক্তি শুনতে হবে, পুরুষের হাতে শা.রীরিকভাবে লা.ঞ্ছিত হতে হবে।
তিনি বলেন, রাস্তায় হয়তো তাদেরকে কেউ অনুসরণ করতে পারে। নিরাপত্তার জন্য তাদেরকে ব্যাগের মধ্যে কিছু না কিছু নিয়ে বের হতে হয়। অনেকে জুতো বদলান কাজ থেকে ফেরার সময়, যা পরে দৌড় দেয়া যায়। অন্ধ.কার গলির দিকে তারা যান না, তারা ভয় পান। তাদেরকে হয়তো কেউ নিপীড়ন করতে পারে। এগুলো এতটাই স্বাভাবিক যে, সবাই জানে।
সাবিনা নেসার হ.ত্যাকা.ণ্ডের পর ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ঘরের বাইরে নারীর চলাফেরার স্বাধীনতা সংকুচিত করার চেষ্টা করা হতে পারে, এমন আশংকা করেন কেউ কেউ। কিন্তু সৈয়দা সায়মা আহমেদ বলছেন, এটি কোনো সমাধান নয়।
তিনি বলেন, আমাদেরকে ভাবতে হবে, মেয়েদেরকে আ.টকে রেখে নয়, বরং যারা নারীকে আ.ক্র.মণ করছে, যারা নি.পী.ড়নকা.রী, তাদেরকে কীভাবে শিক্ষা দেয়া যায়, সেটাই বরং ভাবতে হবে। এখানে দরকার নারীর ব্যাপারে মা.ন.সিক.তার পরিবর্তন, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.