Beanibazarview24.com
স্বচ্ছল জীবনের দেশের অনেক তরুণ অ’বৈধপথে পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশের বিভিন্ন দেশে। তবে অ’বৈধভাবে গিয়ে প্রা’ণ হারান এদের অনেকেই। অনেকের খোঁজ মিলে না সারা জীবনেও। গত বছরের ২৮ মে অ’বৈধপথে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে ব্রাশ ফায়ারে হ’ত্যা করে মাফিয়ারা। যার মধ্যে ভৈরবের ছয় জন নি’হত হন। আ’হত হন তিন জন। আর এখন পর্যন্ত নি’খোঁজ রয়েছেন দুই জন।
বিশ্ব তোলপাড় করা এ ঘটনায় নি’খোঁজ ভৈরবের জগন্নাথপুরের ইছার উদ্দিন (৪০) ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের বিজয়ের (২০) পথ চেয়ে এখনও বসে আছেন স্বজনরা।
স্বচ্ছল জীবনের দেশের অনেক তরুণ অ’বৈধপথে পাড়ি জমাচ্ছেন বিদেশের বিভিন্ন দেশে। তবে অ’বৈধভাবে গিয়ে প্রা’ণ হারান এদের অনেকেই। অনেকের খোঁজ মিলে না সারা জীবনেও। গত বছরের ২৮ মে অ’বৈধপথে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশিকে ব্রাশ ফায়ারে হ’ত্যা করে মাফিয়ারা। যার মধ্যে ভৈরবের ছয় জন নি’হত হন। আ’হত হন তিন জন। আর এখন পর্যন্ত নি’খোঁজ রয়েছেন দুই জন।
বিশ্ব তোলপাড় করা এ ঘটনায় নি’খোঁজ ভৈরবের জগন্নাথপুরের ইছার উদ্দিন (৪০) ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের বিজয়ের (২০) পথ চেয়ে এখনও বসে আছেন স্বজনরা।
স্বজনরা জানান, ২৮ মে যে দলটি থেকে লিবিয়ায় ২৬ জনকে হ’ত্যা করা হয়েছে সে দলের সঙ্গেই লিবিয়া গিয়েছিলেন নি’খোঁজ দুই জন। তবে নি’হতদের তালিকায় ছিল না তাদের নাম। এ ঘটনার আগের দিনও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তারা। ১০ লাখ টাকা যেভাবেই হোক যোগাড় করে মুক্তিপণ পাঠানোর আর্তি ছিল তাদের। ভ’য়েস মেসেজে পাঠিয়েছেন অমানবিক পাশবিক নি’র্যা’তনের বিবরণ দিয়েছিলেন নি’খোঁজ দুই জন। সেই মেসেজগুলো শুনে এখনও কা’ন্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।
নি’খোঁজ ইছার উদ্দিন প্রায় এক যুগ ধরে ভৈরবে বসবাস করলেও তার বাড়ি নেত্রকোনায়। তিনি নেত্রকোনা জে’লার খালিয়াজুড়ী উপজে’লার নুরালীপুর গ্রামের মৃ’ত আকবর মিয়ার ছে’লে। বিয়ের কয়েক বছর পর থেকে শ্বশুরবাড়ি ভৈরবেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখানে ড্রেজারে মাটি কা’টার কাজ করতেন তিনি। একমাত্র মে’য়ে সিনহা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে। স্ত্রী’ সুমাইয়া এক বছর ধরে স্বামীর পথচেয়ে অ’পেক্ষায় রয়েছেন।
স্বজনরা জানান, প্রতিবেশী জগন্নাথপুরের উত্তর পাড়ার হযরত মিয়ার তিন ছে’লে লিবিয়া ও ইতালি থাকার সুবাদে তাদের পরিবারের কাছ থেকে ইতালি যাওয়ার প্রস্তাব পায় ইছার উদ্দিন। উন্নত জীবনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে হযরত আলীর কথায় গতবছর অ’বৈধপথে লিবিয়ার জন্য রওনা হন তিনি। হযরত আলীর সঙ্গে কথামতো যাওয়ার আগে পঞ্চাশ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়েছিল। সাগর পথে লিবিয়ার কাছাকাছি এক জায়গায় পৌঁছার পর আরও সাড়ে চার লাখ টাকা হযরত আলীর হাতে তুলে দেন ইছারের স্ত্রী’ সুমাইয়া।
তারপরের গল্প শুধু নি’র্যা’তন, অ’ত্যাচার আর অমানবিকতার। ইছার উদ্দিন একের পর এক স্ত্রী’র কাছে অ’জ্ঞাত এক নম্বর থেকে ইমোতে ভ’য়েস মেসেজ পাঠাতে থাকেন। তিনি ভ’য়াবহ নি’র্যা’তনের কথা তুলে ধরেন ভ’য়েস মেসেজে। জানান তার একটি হাত ও পা ভেঙে ফেলা হয়েছে, যেভাবেই হোক ১০ লাখ টাকা দুবাইয়ের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাতে হবে। আবার কখনও ভ’য়েস মেসেজে জানিয়েছেন কারেন্টের শক দেওয়ার নি’র্মম নি’র্যা’তনের কথা।
গত বছরের ২৮ মে ২৬ বাংলাদেশিকে হ’ত্যার আগের দিন পর্যন্ত ইমোতে একের পর এক স্ত্রী’র কাছে ভ’য়েস মেসেজ পাঠিয়েছেন ইছার উদ্দিন। হ’ত্যাকা’ণ্ডের ঘটনার পর আর কোনও মেসেজ আসেনি। তবে ইছার উদ্দিনের নাম পাওয়া যায়নি নি’হত বা আ’হতদের তালিকায়। কয়েকদিনের মধ্যেই দালাল হযরত আলী ও তার ইতালি ফেরত ছে’লে সুজনকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রে’প্তার করে গোয়েন্দা পু’লিশ। তারা এখন জে’ল হাজতে থাকলেও নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান পাননি সুমাইয়া।
সিআইডি থেকে কয়েকবার তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ভ’য়েস মেসেজগুলোও সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পু’লিশ।
ইছার উদ্দিনের স্ত্রী’ সুমাইয়া বাংলা বলেন, আমা’র মে’য়েকে আমি কোনও জবাব দিতে পারি না। তার বাবা কোথায় আছে, কেমন আছে? ভ’য়েস মেসেজগুলো শুনে আমি ঠিক থাকতে পারি না। আমা’র কিছুই বলার নেই। আমি আমা’র স্বামীকে ফিরে পেতে চাই।
ইছার উদ্দিনের মতো একই ঘটনার শিকার হয়েছেন ভৈরব লক্ষ্মীপুরের আশেক মিয়ার ছে’লে বিজয় (২০)। বাবার সঙ্গে ভৈরবে ফলের দোকান চালাতো বিজয়। একই উপজে’লার পঞ্চবটী এলাকার জাফরের ফাঁদে পা দিয়ে অনিশ্চিত যাত্রায় পা বাড়ান তিনি। ছে’লেকে ইতালিতে নিয়ে ভালো কাজ দেওয়ার আশ্বা’সে সাড়ে চার লাখ টাকা জাফরকে দেন আশেক মিয়া। লিবিয়ার কাছাকাছি পৌঁছার পর থেকে আশেক মিয়ার কাছে মুক্তিপণের দাবিতে আসতে থাকে ফোন। কা’ন্নাকাটি করে দুবাইয়ের এক ব্যাংকে ১০ লাখ টাকা পাঠানোর কথা বলে বিজয়। গত বছরের ২৮ মে লিবিয়ায় ২৬ জনকে হ’ত্যার পর থেকে আর তার খোঁজ মিলছে না। নি’হত বা আ’হতদের তালিকায়ও নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি বিজয়ের। পরবর্তীতে সংবাদ মাধ্যমে পরিবারের স্বজনরা জানতে পারে জাফরকে ইতালিতে গ্রে’প্তার করা হয়েছে।
বিজয়ের বাবা আশেক মিয়া বলেন, জাফরকে দেশে ফিরিয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আমা’র ছে’লের সন্ধান মিলবে। আমি পাগলের মতো হয়ে গেছি। চার ছে’লে ও দুই মে’য়ের মধ্যে বিজয় সবার ছোট। আমাদের অনেক আদরের সন্তান ছিল সে। ভেবেছিলাম ইতালি যেতে পারলে আমা’র ছে’লের অনেক ভালো হবে। সামনে যে এত বড় বিপদ আম’রা তা বুঝতেই পারিনি।
ভৈরব উপজে’লা নির্বাহী কর্মক’র্তা লুবনা ফারজানা বলেন, নি’খোঁজ দুই জনের স্বজনরা আমা’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আমি গুরুত্বসহকারে তাদের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে লিবিয়ায় কর্ম’রত বাংলাদেশের নিযু’ক্ত কর্মক’র্তার কাছে পাঠিয়েছি। বেশ কয়েকবার লিবিয়ায় যোগাযোগ করেছি। এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে কোনও খোঁজ মেলেনি। আম’রা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। পরিবারগুলোরও খোঁজ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সূত্রঃবাংলা ট্রিবিউনক
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.