Beanibazarview24.com
বর্তমানে স্মার্টফোন হাতে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন চেক করে সকাল শুরু হয় বেশির ভাগ মানুষের । রাতে ঘুমাতে গেলেও একই কাজ। এককথায় আমাদের পুরো জীবনটা এখন আটকে গেছে সোশ্যাল মিডিয়ার কা.রাগারে। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মানুষের মধ্যেও অস্থিরতা বেড়ে গেছে। তাহলে কীভাবে কমানো সম্ভব এই আসক্তি?
আমেরিকান সোসাইটি অব অ্যাডিকশন মেডিসিন সংস্থার বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনে বলা হয় , আসক্তি হচ্ছে এমন এক আচরণ, যার নেতিবাচক পরিণতি সত্ত্বেও মানুষ তাতে প্রতিনিয়ত অভ্যস্ত হয়ে ওঠে ।
২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৪৩ ভাগ আমেরিকান ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়ায় আবিষ্ট থাকেন। যাদের মাঝে ২০ ভাগ মানুষের মানসিক অবসাদের উৎস হচ্ছে এই সোশ্যাল মিডিয়া। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ধরনের আ.স.ক্তিকে তুলনা করা হচ্ছে ড্রা.গ বা অ্যা.ল.কো.হলের সঙ্গে ।
কারণ, উভয় ক্ষেত্রেই মানুষের ম.স্তিষ্কে ডো.পা.মিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে যায় । ফলে এসবে মানুষের আরও বেশি আ.স.ক্তি হওয়ায় প্রভাবক হিসেবে কাজ করে । তবে চাইলেই নিজেকে এই সোশ্যাল মিডিয়া আ.স.ক্তি থেকে দূরে রাখা যায় ।
২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় , বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা গড়ে ১৪৪ মিনিট সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যয় করে থাকেন । অথচ গবেষকেরা বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় দৈনিক ৩০ মিনিট ব্যয় মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সর্বোত্তম। মাদক বা অ্যালকোহল আসক্তি থেকে পরিত্রাণের জন্য চিকিৎসা আছে । কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে বিষয়টি এক রকম নয়। একমাত্র ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও নিজ উদ্যোগে কিছু কৌশলই পারে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি থেকে একজন মানুষকে দূরে রাখতে।
সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি থেকে বিরত থাকতে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লিন স্টার্নলিচের দিক নির্দেশনা হতে পারে বেশ কার্যকর।
২০১৯ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে , কিছু ছাত্র পাঁচ দিন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার থেকে বিরত ছিল। যা তাঁদের মানসিক স্থিতি ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই এক ঘণ্টা বা এক সপ্তাহ বিরত থাকার অভ্যাস এই আসক্তি বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে তুলতে পারে।
বেশির ভাগ মানুষই অবচেতনভাবেই ক্রমাগত সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারেন। এ ক্ষেত্রে অ্যাপ মুছে ফেলা বা সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশন বন্ধ করে দিলে একজন ব্যবহারকারীর আসক্তি কমে যেতে পারে । কারণ, মোবাইল স্ক্রিনে চোখ পড়লে সোশ্যাল মিডিয়া আইকন দেখা না গেলে স্বাভাবিকভাবেই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা যাবে।
নিজেকে সময় বেঁধে দেওয়া হতে পারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকার আরেকটি ভালো উপায়। বেশির ভাগ ফোন এবং ট্যাবলেটে দেখা যায় কোনো নির্দিষ্ট অ্যাপে কত সময় ব্যয় করা হচ্ছে । নিজেকে সময় বেঁধে দিন , দৈনিক কত সময় আপনি এতে ব্যয় করবেন । এত পদ্ধতিতে প্রতিনিয়ত অভ্যাস গড়ে তুললে এতে আসক্তি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে । এ ক্ষেত্রে কোনো অ্যাপের সাহায্য নেওয়া যায় । যা বেঁধে দেওয়া সময় অতিক্রম হওয়ার পর ওই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আপনাকে বের করে দেবে।
শখের কাজ গুরুত্ব দেওয়া বা অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেও আপনি নিজেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে রাখতে পারেন। অন্যান্য ভালো লাগার কাজ গুলোয় বেশি সময় ব্যয় এই আসক্তি বেশ কমিয়ে আনবে। স্টার্নলিচ বলছেন, অবসর সময়ে এমন কোনো ভালো কাজে ব্যস্ত থাকা উচিত, যা আপনি উপভোগ করেন । এতে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি কমে যাবে । যা ব্যক্তি জীবন ও সামাজিক জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে ।
এ প্রক্রিয়াগুলি অনেকের ক্ষেত্রে পুরোপুরি কাজ নাও করতে পারে । সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি কমাতে এ থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি নিজেকে দায়িত্বশীল হতে হবে । এ নিয়ে ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতাল এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের শিশু ও কিশোরী মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নেহা চৌধুরী বলেছেন , নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকা কিছু লোকের জন্য কার্যকর হতে পারে, কিন্তু অন্যদের জন্য নয়। তাঁর মতে, এই বিরতি কার্যক্রম সোশ্যাল মিডিয়ার উপকারী দিকগুলো থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। তা ছাড়া অনেকের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকা এতে আসক্তি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে ।
বরং তাঁর পরামর্শ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢুঁ মারার সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। সে সঙ্গে পরিবারের লোকজন ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। তাঁদের সঙ্গে নিজের পরিকল্পনা শেয়ার করতে হবে। ফলে কোনো ভুল কাজ হলে , তারা আপনাকে সহজেই তা শুধরে দিতে পারবেন । কারণ , একা কোনো অভ্যাস ত্যাগ করা খুব কষ্টসাধ্য।
তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আসক্তির ক্ষেত্রে অবশ্যই একজন থেরাপিস্ট বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে বলে জানান নেহা চৌধুরী।
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.